রুবিনা শওকত উল্লাহ : শ^শুর বাড়ীর লোকজনের প্রতিহিংসায় তছনছ করে দিয়েছে তাহমিনা মিসুর সংসার। পরিবার সদস্যদের কু-পরামর্শে তাকে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে নির্বোধ স্বামী। ফলে, একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে অমানবিক জীবন-যাপন করছে মিসু। সমাজের কাছে মিসু তার শিশুটি সন্তানের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার ও পারিবারিক সমস্যার সমাধান চায়। লোকমুখে মানবিক কর্মকা-ের কথা শুনে কয়েকদিন আগে মানবাধিকার খবর পত্রিকা অফিসে আসে তাহমিনা মিসু নামের এক গৃহিনী। সে এই প্রতিবেদককে জানায় তার কষ্টের কথা, শ^শুর বাড়ীর লোকজনের অত্যাচার, মানসিক-শারিরীক নির্যাতন ও নিপীড়নের কথা, স্বামীর অমানবিক আচরণের কথা। তাহমিনা মিসু জানায়, বাবা মুসলিমাদ কেরাণীগঞ্জের ছোট খাটো স্থানীয় ডেন্টিস্ট মো: মজিবর রহমান মা ও এক ভাই নিয়ে তাদের সংসার। মিসুর স্বপ্ন ছিল বড় হবে অনেক লেখাপড়া করবে, তার একটা সুন্দর সুখের সংসার হবে। মিসুর এইচএসসি পরীক্ষার পর বিয়ের প্রস্তাব আসে তখন মিসু বলে এখন বিয়ে নয় আগে পড়া। মা-বাবা তাকে বুঝায় ভালো ঘড় সবসময় আসেনা ওরা যদি পড়তে দেয় তাহলে তোমাকে রাজি হতে হবে। বরপক্ষ রাজি হলো যতটুকু পড়তে চায় বউকে ওরা পড়াবে বাধা নেই। মিসু রাজি হয় বিয়ে হলো সৌদি ফেরৎ আমবাগিচা দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এর আরশ আলীর পুত্র মাহবুবের সাথে। বিয়ের কিছুদিন পর মিসু স্বামীকে জানায় বি.এ. ভর্তি হবে বলে। তখন শ^শুর বাড়ী খেকে নিষেধ করে দেয় আর পড়তে পারবেনা। এই নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হয় কোনো লাভ হলোনা। ওদের সিদ্ধান্ত মিসু মেনে নিল। শুরু থেকে সব কিছুতেই ওদের নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা। পড়তে গিয়ে বউ যদি কলেজের অন্য ছেলেকে নিয়ে পালায়, এই কারণ দেখিয়ে মিসুর লেখাপড়া বন্ধ করে দেয় শ^শুর বাড়ীর লোকজন। মাহবুব বিদেশ চলে যায়, যাওয়ার পর দীর্ঘ ৯মাস মিসুর কোনো খবর নেয়নি যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি। এ বিষয় নিয়ে স্বামীর সাথে কোনো বাড়াবাড়িতে যায়নি, একজন বাঙালী হিসেবে সে চিন্তা করলো এক স্বামীর সংসারে জীবন কাটানো উচিৎ। সব মেনে নিয়ে কিভাবে সংসারকে সুখের করা যায় সেই চেষ্টায় চালিয়ে গেছে মিশু। এদিকে মাহবুবের সাথে ভাই বোনদের প্রায়ই ঝগড়া হতো কারণ মাহবুবের ১৪ বছরের রোজগার করা অর্থ তার ভাই বোনেরা আত্মসাৎ করে, এই নিয়ে চরম পর্যায় মাহবুব ভাই-বোনদের নামে ৮-২-২০১৩ ইং তারিখে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় জিডি করে। এসব কারণে মাহবুব গ্রামে সালিশ পর্যন্ত হয়। সালিশ বিচারে সবাই ওদেরকে মিল-মিশ করে দেয়। মাহবুবের কেনা দুটি জমি ছিল একটি বিক্রী করে আরেকটিতে বাড়ীর কাজে হাত দেয় সে। ঠিক সে সময় মিসুর জীবনে অন্য রকম আনন্দের মুহূর্ত এলো, সে মা হতে চলেছে। মিসু তখন সব ভুলে চিন্তা করলো যা হবার হয়েছে তার সন্তান এসে যেন একটা ভালো পরিবেশ পায়। তার সব স্বপ্ন তখন গর্ভে থাকা সন্তান কে নিয়ে, সে পরিকল্পনা নিল একটা সুন্দর ভবিষ্যতের। এ অবস্থায় মাহবুব বিদেশ চলে যায়। একাই ছয়তলা ফাউন্ডেশনে চারতলা বাড়ী নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে মিশু। বাড়ীটি করতে তার অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয় গর্ভে সন্তান নিয়ে। মা-বাবার দেয়া গহনা পর্যন্ত বিক্রী করে এ বাড়ীটি সে ঢেলে সাজায় তার স্বপ্ন দিয়ে। মিসু তার শ^শুর বাড়ীর নীচতলায় শ^শুরকে নিয়ে থাকতেন। তার নতুন বাড়ীটি ভাড়া দিয়ে দেয়। এমন অবস্থায় হঠাৎ করে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। সৌদি থেকে আসে একটি দু:সংবাদ, মাহবুব সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাত ভেঙেছে ও মুখের কথা বন্ধ। কিছুদিন চিকিৎসার পর মাহবুব ভিডিও কলে মিসুকে বলে তুমি যে ভাবেই পার যে কিছুর বিনিময়ে হলেও আমাকে দেশে নিয়ে যাও। সৌদিতে মিসুর বড় ভাসুরও থাকতেন তখন তিনি বলেন মাহবুবের হসপিটালের বিল পরিশোধ ও দেশে পাঠাতে খরচ ৫ লক্ষ টাকা লাগবে। মিসু বলে আমি এতো টাকা কোথায় পাব তখন মিসুর বড় ভাসুর বলে যেভাবেই পার পাঠিয়ে দাও। শ^শুড় বাড়ীর সবাই মিসুকে বলে বাবার বাড়ী থেকে এই ৫ লক্ষ টাকা এনে দাও। তখন মিসু বলে আপনারা ভাই বোন এতো বছর ওর টাকা খেয়েছেন এখন যেহেতু ওর বিপদ অন্তত ওর জন্য হলেও আমাকে আপনারা ৫ লক্ষ টাকা ধার দিন। সবাই বলে উঠে আমরা পারবনা তোমার বাপের বাড়ী থেকে আন, উত্তরে মিসু বলে আমার বাবার অত টাকা নেই, ও আপনাদের ভাই ওকে বাঁচান। এ কথা বলার পর সবাই মিসুর সাথে খারাপ আচরণ এমনকি শারিরীকভাবে তাকে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে চাপের মুখে উপায়ন্তর না দেখে মেঝ ভাসুরের পরামর্শে নিজের করা বাড়ীর একটি ফ্ল্যাট ভাড়াটিয়ার কাছে বন্ধক রেখে ৫ লক্ষ টাকা নেয় মিসু। সে টাকা মেঝ ভাসুর আক্তারের হাতে তুলে দেয়। এরপর থেকে মিসুর উপর শ^শুর বাড়ীর অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্র বেড়ে যায়। কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেই মারধোর খেতে হতো তাকে। এতো কিছুর পরও ভাবলো স্বামী দেশে ফিরলে শ^শুর বাড়ীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবে। মাহবুব দেশে ফেরার দিন বিমান বন্দর যেতে চাইলো মিসু। কিন্তু ভাসুর তাকে জানিয়ে দিল একাই ভাইকে আনতে সে বিমানবন্দর যাবে। নিরুপায় মিসু বাচ্চা নিয়ে পথ চেয়ে রইল স্বামীর অপেক্ষায়। এক সময় স্বামী মাহবুব এলো বাড়িতে। কিন্তু মিসুর দিকে তাকালো না একটুও। এমনকি তার সন্তানকেও স্পর্শ না করে সোজা পাশ কেটে দোতলায় ভাইয়ের রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ বাদে মাহবুব মিসুর সামনে এসে শুধু একটি কথায় জিজ্ঞেস করলো ৫ লক্ষ টাকা কেন বাবার বাড়ী থেকে মিসু এনে দিল না। এ নিয়ে মিসুকে গালি দেয়া শুরু করে মা-বাবাকে নিয়ে। এক পর্যায় পা দিয়ে লাথি মেরে ফ্লোরে ফেলে দেয় মিসুকে। এ ধরনের অত্যাচার দিনে দিনে বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতিদিন মারধর শুরু করে মাহবুব। মিসুর শ^শুর বাড়ীর মানুষদের প্রথম থেকেই অনেক লোভ ছিল, পরে মিসুর প্রতি একটাই কথা বাবার কাছ থেকে টাকা আন। বহু চেষ্টায় সব সহ্য করেও ব্যর্থ হয়ে। অত্যাচারের মুখে বাধ্য হয়ে অবশেষে অনেক দু:খ কষ্ট বুকে নিয়ে এক কাপড়ে মিসু তার সন্তানকে নিয়ে মা-বাবার কাছে চলে আসে। বাবার বাড়ী এসেও শান্তি নেই তার,শ^শুর বাড়ীর লোকেরা চারিদিকে দুর্নাম ছড়ায় মিসু টাকা নিয়ে গহনা সহ পালিয়েছে। বাড়ী বাড়ী গিয়ে ওরা বলে বেড়ায় আজে-বাজে কথা। তখন এ ধরনের কথার প্রেক্ষিতে মিসু সবাইকে একটিই উত্তর দেয় বিয়ের পর থেকে মাহবুব ও তার পরিবার অনেক অত্যাচার করেছে। মাহবুব একসাথে কখনও কোনো মাসে দশ হাজার টাকা মিসুকে দেয়নি। উল্টো বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিসুকে চলতে হতো এ ব্যাপারে সব সময় তার বাবাকে বাড়তি চাপ সয়তে হয়। সে জানায়, যদি টাকা পয়সার লোভ হতো জায়গা বিক্রীর টাকা নিয়ে পালাতাম, এতো কষ্ট করে গর্ভে সন্তান নিয়ে নিজের গহনা বেঁচে এই বাড়ীটি নির্মাণ করতাম না। এতো কিছুর পরও মিসু চেয়েছে তার স্বামীকে নিয়ে সংসার সাজাতে কিন্তু সে বার বার ব্যর্থ হয়। মিসুর ভাসুর তার বাবার পরিবারকে নানান ধরনের হুমকি দেয়। তার বাবার বাড়ীটি পর্যন্ত বিক্রী করিয়ে ছাড়বে বলে ভয় দেখায়। এতো কিছু করার পরও মিসুর শ^শুর বাড়ীর মানুষ ক্ষান্ত হননি তার বিরুদ্ধে ওখানকার চেয়ারম্যানের কাছেও সালিসী করে। মিসু তার ভাসুরকে যে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিল এ টাকার কথা অস্বীকার করে। মিসুর নামে যত ধরনের অপবাদ তাই দেয় এবং মিথ্যে সাক্ষী দেওয়ার জন্য টাকা দিয়ে লোকও আনে। চেয়ারম্যান সাহেব বুঝতে পেরে যুক্তির মাধ্যমে কথার এমন মারপ্যাচে ফেলে ওদের। এক পর্যায়ে ভাসুর আক্তার স্বীকার করে মিসু তাকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছে। গত দুই বছর ধরে তাদের বিচার শালিসী চলে আসছে। মিসু যে ফ্ল্যাটটি টাকার বিনিময়ে বন্ধক রেখেছিল ভাড়াটিয়াদের কাছে, ওদের টাকা না দিয়েই তার ভাসুর তাদেরকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে। গু-া-পা-াদের দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ওরা যেন এ বাসা ছেড়ে দূরে চলে যায়। এ অবস্থায় ঐ পরিবারটি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলেও জানায় মিশু। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, মিসুর শ^শুর বাড়ীর লোকদের নজর তার করা ওই ৪তলা বাড়ীটির দিকে। পরিকল্পনা করে মাহবুবকে ওরা কূটকৌশলের মাধ্যমে এমনভাবে ব্রেনওয়াশ করেছে, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন সব কথা বলেছে, যে কারণে মাহবুব মিসুকে ভুল বুঝে অত্যাচারের মুখে দূরে সরিয়ে দেয়। ঐ বাড়ী থেকে মিসু চলে আসার পর থেকে ২ বছরে মাহবুব স্ত্রী সন্তানের ভরণ পোষণ, কোনো খবরা খবর নেয়নি,এমন কি ফোনেও একটু নিজের সন্তানের সাথে কথা পর্যন্ত বলেনি। বিয়ের পর থেকেই মিসুর সাথে ওদের আচরণ ভালো ছিল না। একটার পর একটা মিথ্যে অপবাদ দিয়ে আসছে। পরিবারের সদস্যদের প্ররোচনায় মাহবুব ও মিসুর সংসার ধ্বংসের পথে। অবুঝ শিশুটিও তার বাবার ¯েœহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। মিসু তার মেয়ে মিমিসাকে স্কুলে দিয়েছে মেয়েটির খরচ বেড়েছে এ অবস্থায় বাচ্চাটিকে নিয়ে সে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছে। কারণ তার বৃদ্ধ বাবা একাই সংসারের ভার বহন করে, ফলে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন মিসুর একটাই চাওয়া তার সন্তানের সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ ও তাদের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার।
|