খেলাধুলা
  ফিরে দেখা : আন্তর্জাতিক ফুটবল ২০১৮
  20-01-2019




আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্বকাপের বছরে আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনের বাকি সবই একপ্রকার গৌণ। সব মনোযোগ কেড়ে নেওয়া সেই বিশ্ব আসর বসেছিল এ বছর রাশিয়ায়, যেখানে ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতেছে ফ্রান্স। এ দলটির হয়ে আগামীর বিশ্ব ফুটবলে দাপুটে একজন হয়ে ওঠার ছাপ রেখেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফ্রান্স এবং এক ফরাসির উত্থানের বছরে অনন্য এক নজির গড়েছেন লুকা মডরিচ। বিগত এক দশক ধরে বিশ্ব ফুটবলের সেরার পুরস্কারটি ভাগাভাগি করে নিচ্ছিলেন লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এবার তাদের রাজত্বে হানা দিয়ে ব্যালন ডি`অর, ফিফা দ্য বেস্টসহ সেরার সব পুরস্কারই বাগিয়ে নিয়েছেন রিয়ালে খেলা ক্রোয়েশিয়া অধিনায়ক। এ ছাড়া বিশ্বকাপের ডামাডোলের মধ্যেও দল বদলিয়ে ঢেউ তুলেছিলেন রোনালদো, নয় বছরের অবস্থান শেষে রিয়াল ছেড়ে চলে গেছেন ইতালির জুভেন্তাসে। তারকা ফুটবলারদের মধ্যে মেসির জন্য বছরটি ছিল মিশ্র অনুভূতির। ক্লাবের হয়ে লা লীগা, কোপা দেল জিতেছেন, ছন্দে আছেন চলতি মৌসুমেও। কিন্তু আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ ভালো যায়নি, পরবর্তীতে আর জাতীয় দলের জার্সিতে ফেরেনওনি। নেইমার বছরের শুরুর দিকে ছিলেন চোটে, বিশ্বকাপে ফিরে ভালো খেললেও অতি অভিনয়ের কারণে হয়েছেন সমালোচিত। বছর শেষে তার নাম এখন অনেকটাই পেছনে। এ ছাড়া মে মাসে লিভারপুলকে হারিয়ে রিয়ালের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা, ২২ বছর পর আর্সেন ওয়েঙ্গারের আর্সেনাল ত্যাগের ঘটনাও ছিল আলোচনার শীর্ষে। সেসব কিছুই ফিরে দেখা এ সালতামামি পর্বে ...

ব্যালন ডি`অর

বছরের শেষ পুরস্কার ব্যালন ডি`অরেও পড়েছে মডরিচের হাতের ছোঁয়া। লিওনেল মেসির তিনে না থাকা নিয়ে বিতর্ক হলেও তার পুরস্কার পাওয়া নিয়ে কোনো কথা হয়নি। ব্যালন ডি`অর ঘোষণার আগেই অনেকে ধরে নিয়েছিলেন এবার মডরিচে ভাঙবে পুরনো সব রীতি। বাস্তবে সেটাই হলো, প্যারিসের সব আলো কেড়ে নেন মডরিচ। হানা দেন রোনালদো-মেসির আধিপত্যে। ক্যারিয়ারে প্রথমবার এত বড় একটা পদক জেতেন লুকা। তালিকায় থাকা একঝাঁক নামিদামি তারকাকে পাশ কাটিয়ে যেন সোনার হরিণ শিকার করেন তিনি। প্রতিযোগিতায় ৭৫৩ পয়েন্ট নিয়ে এই পুরস্কার উঁচিয়ে ধরেন মডরিচ। তার পরে দুইয়ে থাকা ক্রিশ্চিয়ানোর পয়েন্ট ৪৭৮। তিন নম্বর অবস্থানে ছিলেন ফ্রান্সের অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ স্টার গ্রিজম্যান। তিনি পান ৪১৪ পয়েন্ট। বাকিদের পয়েন্ট প্রাপ্তির পাল্লাটা খুব একটা ভারী ছিল না।

 

ফিফার বর্ষসেরা

ফিফার বর্ষসেরা `দ্য বেস্ট` পুরস্কারও উঠে মডরিচের হাতে। এই ক্যাটাগরিতেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও মোহামেদ সালাহকে হারিয়ে সেরার তকমা নিজের দখলে নেন মডরিচ। সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা হওয়া মেসি ছিলেন তালিকার আরও পরে। ক্রোয়াটদের হয়ে এত বছর কেউ পারেনি এই কীর্তিতে নাম লেখাতে। তবে কেউ না পারলেও মডরিচ ঠিকই পেরেছেন। প্রথম কোনো ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার হিসেবে ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার জিতেছেন। মূলত রাশিয়া বিশ্বকাপে দেশকে ফাইনালে ওঠাতে চোখজুড়ানো পারফর্মের সুবাদে এই খেতাব পান তিনি। বিশ্বকাপের আগে যে ক্রোয়েশিয়াকে কেউ খুব একটা পাত্তা দেয়নি, রাখেনি ফেভারিটদের কাতারে। লুকার নেতৃত্বে তারাই কি-না বিশ্বকে চমকে দেন। লেখেন নতুন রূপকথার গল্প। কেবল দলনেতা হিসেবে নয়, পুরো মাঠে বল পায়ে প্রতিপক্ষকে বেশ ভুগিয়েছেন এই মডরিচ।

 

বছরজুড়ে মডরিচ

এমন একটা বছর আসবে ভাবিনি কখনও, বোধ হয় এটাই আমার ক্যারিয়ারের সেরা বছর। সারাজীবন মনে থাকবে ২০১৮ কে- সর্বশেষ খেতাব ব্যালন ডি`অর জেতার পর চোখেমুখে দারুণ রোমাঞ্চ নিয়ে এমন কথাই বলেছিলেন লুকা মডরিচ।

সত্যিই স্বপ্নের মতো একটা বছর ছিল। ক্লাব বলি আর জাতীয় দল- দুই অঙ্গনেই হিরো যে মডরিচ। পুরো বছরজুড়ে একের পর এক পুরস্কার হাতে তুলেছেন। ছোট-বড় মিলিয়ে যার সংখ্যা ১৫ ছুঁয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে ছিল- উয়েফা ও ফিফার বর্ষসেরা মুকুট, বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় এবং ব্যালন ডি`অর খেতাব।

তবু মডরিচের পারফর্ম হয়তো অনেকের কাছে দৃষ্টিগোচর হয়নি। যে কারণে তার এত এত পুরস্কার পাওয়া নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্নও করেছেন। তবে সাদা চোখে বিষয়টি একটু খটকা লাগলেও তিনি যে মাঝমাঠের কারিগর, অস্বীকার করার উপায় নেই। পুরো বছরে গোল করেছেন তিনটি। কেবল গোল করা নিয়ে সব কিছু বিচার-বিবেচনা হয় না বলেই মডরিচ এবারের দ্য বেস্ট। ক্রোয়েশিয়ান এই ফুটবল জাদুকরের মাঠের দক্ষতা নিয়ে বলতে গিয়ে নিজের এক নিবন্ধে উয়েফার টেকনিক্যাল টিমের ফুটবলবোদ্ধা জেরার্ড লিখেছিলেন, `মডরিচ আহামরি কোনো পরিশ্রম করে না। তবে সে খুবই তীক্ষষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন। মাঝমাঠে বল পায়ে চমৎকার সব নৈপুণ্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে ভড়কে দিতে ভালোই পারে।`

 

উয়েফার বর্ষসেরা

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, অ্যান্তোনিও গ্রিজমনসহ ১০ তারকা খেলোয়াড় প্রাথমিক তালিকায় স্থান পান। সেখান থেকে সবাইকে পেছনে ফেলে নাম্বার ওয়ান পজিশন লুফে নেন মডরিচ। ৩১৩ পয়েন্ট নিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো জিতে নেন উয়েফার প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার পুরস্কার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোনালদো পান ২২৩ পয়েন্ট আর মিসরের মোহামেদ সালাহ ১৩৪। বাকিদের কেউই একশ`র ঘরে পা রাখতে পারেননি। যে পুরস্কার এতদিন ছিল মেসি-রোনালদোদের দখলে। সবচেয়ে বেশি- তিনবার জিতেছেন ক্রিশ্চিয়ানো। বার্সা স্টার মেসির শোকেসে গেছে দু`বার। একবার জেতেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। এবার সেখানে ভাগ বসান মডরিচ। এ বছর তার উয়েফা সেরা হওয়ার পেছনে ছিল রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতা। ইউরোপ সেরার মিশনে লস ব্লাঙ্কোসদের জার্সিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন তিনি।