জাতীয়
  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য সকল দলকে সুমতির পরিচয় দিতে হবে
  03-11-2018


জনগনের কল্যানের জন্যই রাজনীতি ও সংবিধান, রাজনীতি ও সংবিধানের জন্য জনগণ নয়। সরকার ও প্রধান বিরোধীদলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে দুই দফা সংলাপ হলেও সত্যিকার অর্থে অর্জন খুবই সীমিত। তবে ইতিবাচক দিক হলো দুই পক্ষই সংলাপকে ব্যর্থ বলতে নারাজ। সংলাপ দৃশ্যত শেষ হলেও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সদিচ্ছাও দেখিয়েছে দুই পক্ষ। দুই পক্ষের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে সৌহার্দ্যরে মধ্য দিয়ে। সংলাপে পক্ষদ্বয় স্ব স্ব অবস্থানে অনড় থাকলেও সৌজন্যবোধের অভাব ছিল না। সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রাখেন ড. কামাল হোসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা সরাসরি নাকচ করে দেন। বলেন, সংবিধানের বাইরে তিনি যেতে পারবেন না। সরকার পদত্যাগ করবে না বলেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের দাবি উত্থাপন করে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেন, সরকারপক্ষ আদালতে বিরোধিতা না করলেই জামিন সম্ভব। এটি আদালতের বিষয় বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করলেও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংলাপ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া যদি আপিল করেন, আদালত যদি তাকে জামিনে মুক্তি দেয়, আমাদের আপত্তি নেই। এদিকে নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরা শেষে আবারো কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ উদ্বিগ্ন। ঐক্যফ্রন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আদলে একজন প্রধান উপদেষ্টাসহ ১০ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাব সংবিধানসম্মত নয় বলে আপত্তি জানান প্রধানমন্ত্রী। তার মতে, সংবিধানের বাইরে সরকার গঠন হলে তৃতীয় কোনো শক্তি ঢুকে পড়তে পারে। এ বিষয়ে তিনি এক-এগারো সরকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। সরকারি দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। জনগণ ভোট দিলে তার সরকার ক্ষমতায় থাকবে। বিরোধী পক্ষকে ভোট দিলে তারাই জিতবেন। সংলাপে দৃশ্যত বড় ধরনের অগ্রগতি না হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের প্রশ্নে সরকারি দলের নমনীয়তা একটি ইতিবাচক দিক। নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ফল জানাতে প্রধানমন্ত্রী যে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন তা স্থগিত করাও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহেরই ইঙ্গিত। একইভাবে ঐক্যফ্রন্টের রোডমার্চ স্থগিত করার ঘটনাও নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়লে রাজনীতি তার পথ হারাতে বাধ্য। যে কারনে আগামী নির্বাচনে দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচিতে অর্থনীতি-বান্ধব অবস্থান নেবে এমনটিই দেখতে চায় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। এছাড়া শেয়ারবাজার, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট ঘোষনাও থাকা উচিত। দেশের কল্যানেই রাজনীতি। সে উদ্দেশ্য পূরণে অর্থনীতি-বান্ধব রাজনীতি বিকাশে এগিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্র চর্চার শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়ে হরতাল ও নৈরাজ্যের রাজনীতির চির-অবসান ঘটাতে হবে। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফলে সারাদেশে নির্বাচনী উৎসবে মুখর পরিভেশ পরিলক্ষিত হচ্চে। আমরা আশা করব, সংঘাত এড়াতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে দুই পক্ষই সুমতির পরিচয় দেবে; যা সময়েরই দাবি।
দেশের মানুষের কল্যাণে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে
সর্বজন স্বীকৃত নিরপেক্ষ নির্বাচন জরুরী
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট
নির্বাচনী উৎসবে মুখর সারাদেশ
 
 
 
মানবাধিকার খবর প্রতিবেদনঃ-
গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রতি ৫ বছর অন্তর এদশের সাধারন জনগন ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পান। সেই প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখতে নির্বাচন কমিশন গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষনা করে। এই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে. এম. নুরুল হুদা। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি ২৩ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন। পরে গত ১২ নভেম্বর পুনঃ তসসিল ঘোষনা করে নির্বাচন পিছিয়ে ৩০ ডিম্বেবর করা হয়। নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের কথা জানিয়ে সিইসি বলেন, নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে তারা। এ ছাড়া সীমিত পরিসরে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ এবং প্রচার কাজে সব প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন তিনি।
ঘোষিত তফসিলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন রাখা হয়েছে ২৮ নভেম্বর। সারাদেশে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন আগ্রহী প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ২২ নভেম্বর  এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৯ নভেম্বর। প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ৩০ নভেম্বর।
তফসিল ঘোষণার সময় সিইসি এবারের নির্বাচনে শহর এলাকার অল্প কয়েকটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি জনগণের হয়ে সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যের মতবিরোধ রাজনৈতিকভাবে নিরসনের আহ্বান জানান। রাজনৈতিক দলগুলোর একে অপরের প্রতি সহনশীল ও রাজনীতি সুলভ আচরণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দিতা মূলক নির্বাচনে সমর্থকদের সরব উপস্থিতির ফলে ভোটের অনিয়ম প্রতিহত হয়। প্রতিযোগিতা যেন প্রতিহিংসায় পরিণত না হয় সেদিকে দলগুলোকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার কথাও বলেন তিনি।
প্রার্থী ও সমর্থকদের নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনী কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অটল থাকবেন। পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্রের ফলের তালিকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। ইসি সচিবালয় সামগ্রিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের আওতায় রাখবে। এভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে।
সিইসি বলেন, সবার জন্য অভিন্ন আচরণ ও সমান সুযোগ সৃষ্টির অনুকূলে নির্বাচনে `লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড` নিশ্চিত করা হবে। এসব নিয়ে দ্রুতই ইসি সচিবালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হবে। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপের কথা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি অনলাইনেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। পুরনো পদ্ধতির পাশাপাশি ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে নির্বাচনের গুণগত মান আরও উন্নত হবে এবং সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। তাই শহরের কেন্দ্রগুলোর অল্প কয়েকটিতে (দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া) ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে।
এর আগে সিইসির সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে পূর্ণাঙ্গ তফসিল অনুমোদন দেয় কমিশন। এরপর সিইসির কক্ষে তার ভাষণ রেকর্ড করা হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার একযোগে সিইসির ধারণকৃত এই ভাষণ প্রচার করে। ইসির সর্বশেষ প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার রয়েছে ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন ও নারী ভোটার ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। ভোটকেন্দ্র ৪১ হাজার ১৯৯টি। ভোটকক্ষ দুই লাখ ৬ হাজার ৫৪০টি। তফসিল ঘোষণার পরপরই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। সব দল এই নির্বাচনে অংশ নেবে বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছার আগেই তফসিল ঘোষণাকে একতরফা নির্বাচন আয়োজনে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে অভিহিত করেছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। তবে বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও তফসিল ঘোষণায় ইসিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তফসিল চূড়ান্ত করার আগেই পেছানোর অনুরোধ জানিয়ে ঐক্যফ্রন্ট চিঠি দিলেও তা আমলে নেয়নি ইসি। বিশিষ্টজনের মতে, তফসিল ঘোষণা হলেও সরকার-বিরোধী পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা এখনও সম্ভব। তারা বলেছেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে তফসিল পুননির্ধারণ করা যেতে পারে।
ইসি সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে যে কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। সেই হিসেবে এবারের নির্বাচনে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী ও ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন এ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।
এর আগের নির্বাচনগুলোর মতোই এবারও রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকছেন ডিসিরা (জেলা প্রশাসক)। তবে মেট্রোপলিটন শহর এলাকার মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ দায়িত্ব পালন করবেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।
২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করার আইনি বাধ্যবাধকতার কথা তুলে ধরে সিইসি কে. এম. নুরুল হুদা বলেন, দেশব্যাপী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল আবহ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় সাত লাখ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ও জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনীর ছয় লাখ সদস্য মোতায়েন থাকবে। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত এ বাহিনীর দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও একাগ্রতার ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখা হবে। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হলে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিয়মিত এই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
সিইসি তার ভাষণে বলেন, ভোটার, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, প্রার্থী, প্রার্থীর সমর্থক এবং এজেন্ট বিনা কারণে হয়রানির শিকার বা মামলার সম্মুখীন না হন, তার নিশ্চয়তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কঠোর নির্দেশ থাকবে। দল-মত নির্বিশেষে সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন এবং ভোট শেষে নিরাপদে নিজ বাসস্থানে নিরাপদে অবস্থান করতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে জল্পনা-কল্পনা ছিল। কমিশনেরও এ নিয়ে অনেক রকম ভাষ্য পাওয়া গিয়েছিল। এমন অবস্থায় গত ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কমিশনের সভায় ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন জানানো হয়, তফসিল ঘোষণার সময় নির্ধারণ হলেও মনোনয়নপত্র দাখিল ও ভোট গ্রহণের দিনসহ বিস্তারিত সময়সূচি ৮ নভেম্বর আরেকটি সভায় নির্ধারণ করা হবে। সে অনুযায়ী ইসির তফসিল ঘোষণা-সংক্রান্ত কমিশনের ৩৯তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে তফসিল ও সিইসির ভাষণ অনুমোদন করা হয়। বৈঠকে সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আগারগাঁও নির্বাচন ভবন এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়। পোশাকে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কমিশন কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাদা পোশাকে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে ওই এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে র‌্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নির্বাচনের জন্য ৭০২ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করেছে ইসি। প্রতি আসনের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ৭০২ কোটি টাকার মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে ব্যয় ৪০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচার বন্ধ : এদিকে, তফসিল ঘোষণার পর রাত থেকেই নির্বাচনী সভা-সমাবেশ ও প্রচার কার্যক্রম বন্ধ হতে যাচ্ছে। সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিমালা অনুসারে তফসিল ঘোষণার পর সভা-সমাবেশের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আসবে। জনচলাচলের বিঘœ সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো সড়কে জনসভা, এমনকি পথসভাও করা যাবে না। মাইকের ব্যবহারও সীমিত করা হবে। শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে নির্বাচনবিরোধী যে কোনো তৎপরতা। ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের আগের ২১ দিন ছাড়া যে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারও নিষিদ্ধ থাকবে।
নির্বাচনী মালামাল পাঠানোর নির্দেশ : মাঠপর্যায়ে মনোনয়ন ফরমসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার প্রায় ৩৩ হাজার মনোনয়ন ফরম ছাপানো হয়েছে। তেজগাঁও প্রিন্টিং প্রেস থেকে দেশের সব জেলার সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে এগুলো পাঠানো হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। কেননা, বর্তমান দশম জাতীয় সংবিধান অনুযায়ী দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি দশম সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে আগামী ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। ওই ৯০ দিনের ক্ষণগণনা শুরু হয় গত ৩১ অক্টোবর। সব দলের অংশগ্রহন ও দেশের মানুষের কল্যানে গনতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সর্বজন স্বীকৃত নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারন মানুষের মতামত।
এদিকে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই অংশ নিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে নির্বাচনের তফসিল এক মাস পেছানোরও দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
সংবাদ সম্মেলনে জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দেশের মানুষ ন্যূনতম অগতান্ত্রিক অধিকার ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। নিশ্চিতভাবে আগামী নির্বাচনে মানুষ ভোট দিয়ে তাদের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করবেন। সেই লক্ষ্য নিয়ে তারা ভোটের ময়দানে থাকবেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও নির্বাচনে অংশ নেবে।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনের পাশাপাশি ৭ দফা দাবিতে জোটের আন্দোলনও চলবে।
এদিকে গত ১২ই নভেম্বর পর্যন্ত আওয়ামীগের প্রায় ৪ হাজার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়। যার মধ্যে মাশরাফি সহ রয়েছে অসংখ্য তারকা ও ব্যবসায়ী প্রার্থী। অপর দিকে একই দিনে বিএনপি মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে। বিএনপিতেও অসংখ্য মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়।