অধিকারের প্রতিবেদন
  অবহেলিত এলাকায় শিশুদের সুশিক্ষায় কাজ করছে
  03-11-2018

আজাদ রুহুল আমিন, বাগেরহাটঃ-
পিরোজপুর নাজিরপুরের রঘুনাথপুর মাঝখানে বয়ে গেছে বলেশ্বর নদী । মোহনা পেরিয়ে বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার একটি অন্যতম বৃহৎ ভাষা বাজার । হোগলা বন, আঁখ, ভুট্টা, সরষে, মশুরি, খেসারি, বিশাল ধান ক্ষেত জুড়ে যার অবস্থান । এরই মাঝে এক সময়ের অবহেলিত শিক্ষা দীক্ষায় আলোর প্রদীপ ছিল নিভু নিভু । এটি ধোপাখালী ইউনিয়নের সবচেয়ে অবহেলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত । শিক্ষা গ্রহনে মাইলের পর মাইল হেটে যেতে হত নাটইখালী অথবা ধোপাখালী বিদ্যালয়ে । এ অঞ্চলে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলোয় সুশিক্ষায় সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ভাষা বাজারের উপকন্ঠে গড়ে উঠেছে মাতৃছায়া কিন্ডার গার্টেন । এ অঞ্চলের অতি সাধারন মানুষ মাখন লাল পাইক । তারই জ্যেষ্ট পুত্র রতন পাইক ও কনিষ্ট পুত্র রঞ্জন পাইক । এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে ২০১১ সালে এ বিদ্যালয়টি স্থাপন করে যারা হতাশা ও বেকারত্বে ভুগছিলেন অথচ তারা অনেক নামি দামি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের শিক্ষিত সুসন্তান । যারা এলাকার মায়া ত্যাগ করে কখনও বাইরে যান নি । যে কারনে তাদের মেধার সুপ্ত বিকাশ ঘটেনি। তাদের পরিবারের মুখে দু`মুঠো অন্ন জোগারে শিক্ষানুরাগ হিসেবে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত সুপরিচিত দুই ভাই স্বর্ন ব্যবসায়ী চৈতী জুয়েলার্সের মালিক। এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জনাব রঞ্জন পাইক ও রতন পাইক । তারা তাদের নিজেদের অর্জিত অর্থের বিনিময়ে একটি অত্যাধুনিক দ্বিতলা ভবন নির্মান করে এ অঞ্চলে আলোর প্রদীপ শিখা প্রজ্বলনে শিক্ষার গুনগতমান । শিশুর বিকাশ সাধনে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এখানকার শিশুরা একদিন দেশের হাল ধরতে পারে । সেই অবারিত সুযোগ সুবিধা প্রদানে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে কচুয়া উপজেলায় ভালো ফলাফলে অনন্য অবদান রেখে চলেছে । প্লে নার্সারি এবং প্রথম শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত প্রভাতী ও দিবা দুই শিপ্টে এক ঝাঁক তরুন শিক্ষক নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। উপজেলা থেকে শুধুমাত্র সরকারীভাবে বই ছাড়া আর কোন সহায়তা এই পর্যন্ত মেলে নি । বর্তমানে এ স্কুলে প্রায় দু`শ ছাত্রছাত্রী রয়েছে । যাদের সামান্য বেতনে শিক্ষকরা কোন রকমে পরিবার নিয়ে জীবন চালিয়ে এ বিদ্যালয়টিকে এ অঞ্চলের একটি শিক্ষার আদর্শ মডেল হিসেবে অবদান রাখতে চান । ২০১৫ সালে দুইজন শিক্ষার্থী, ২০১৬ সালে দুইজন শিক্ষার্থী, ২০১৭ সালে দুইজন শিক্ষার্থী পিএসসি`তে মেধা তালিকায় বৃত্তি লাভ করেছে । এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে জনাব সমির কৃষ্ণ পাইক একটি ঐতিহ্য পরিবারের সন্তান । তার বাবা স্বর্গীয় ক্ষিরোদ বিহারী পাইক এলাকায় একজন জনপ্রিয় এ্যলোপেথিক ডাক্তার ছিলেন । যে কারনে সমির কৃষ্ণ পাইক উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও নিজের এলাকা না ছেড়ে এ অঞ্চলের মানুষের সেবা প্রদানে পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি ডাক্তার হিসেবে যশ খ্যাতি কুড়িয়েছেন । সহকারী শিক্ষক পঙ্কজ কুমার মন্ডল । যার পিতা স্বর্গীয় গোপাল চন্দ্র মন্ডল একজন নটরাজ হিসেবে এলাকায় অধিক পরিচিত ছিলেন । বিধান চন্দ্র পাইক খুবই বিনয়ী ও একজন আদর্শবান হিসেবে এলাকায় যার অনেক সুনাম। যার বড় ভাই সুভাষ চন্দ্র পাইক গোড়াগুড়ি থেকেই ধর্মানুরাগী বৈষ্ণব। শ্রীপতি রঞ্জন মজুমদার, নিবাশ সাহা, হাফিজুর রহমান । সহকারী শিক্ষিকা রিপা মৃধা, বুলু ঘরামী ও অঞ্জনা দাস । এই বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা ও বিভিন্ন জাতীয় উৎসব পূজা পার্বনে চৈতী জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ আর্থিক অনুদান সহ শিক্ষকদের উৎসাহ যোগাতে তাদের ব্যাক্তিগত খোঁজ খবর । তাদের সুবিধা অসুবিধা লাঘবে সার্বিক নজরদারীতে তীখœ দৃষ্টি রয়েছে ।
এ বিদ্যালয়ে ধোপাখালী ইউনিয়নের ভাষা, বগা, ছিটাবাড়ি, শানপুকুরিয়া, শিরখালী, বয়ারশিংগা। বাগেরহাট সদরের গোটাপাড়া ইউনিয়নের নাটইখালী, পাতিলাখালী, বেতখালী । নাজিরপুর উপজেলার রঘুনাথপুর। চররঘুনাথপুর ও মঘিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অভিভাবকরা ভালোমানের শিক্ষা গ্রহণে তাদের শিশুদের এ বিদ্যালয়ে পাঠদানে আগ্রহী। প্রতিষ্ঠাতা রঞ্জন পাইক এক সাক্ষাৎকারে মানবাধিকার খবরের প্রতিনিধিকে বলেন, আমি নিজে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে না পারলেও তীব্রভাবে অনুভব করেছি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। যে কারনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাজসেবার অন্যতম অংশ হিসেবে সর্বপ্রথম আমারই উদ্যোগে আমাদের শ্রমের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি । এটি আরো আধুনিক আরো প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠবে এ উপজেলার একটি অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে শিশুরা আদর্শ ন্যায়পরায়ন বিনয়ী নিয়মিত পাঠ্যভ্যাস কাজে লাগিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে দেশ ও জাতির কল্যানে অবদান রাখতে পারে।  রতন পাইক বলেন, আমরা পেশাগত ব্যবসা পরিচালনায় ঢাকায় অবস্থান করলেও আমাদের মন ও প্রান এলাকার প্রতি। এ যে নাড়ির টান। ফিরে চল মাটির টানে কবি গুরু রবী ঠাকুরের মহা উক্তি একদিন সত্যি সত্যি বাস্তবে রুপায়িত হবে। ফিরে আসতে হবে এই জনপদে এই প্রিয় জন্মস্থান। সেটি যেভাবেই হোক আর যে কারনেই এলাকার মানুষকে সেবা দিতে শুধু এ স্কুল নয় আমাদের আরো অনেক সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবার স্বপ্ন রয়েছে। যার বাস্তবায়ন একমাত্র ভগবানের অপার কৃপা লাভ করতে পারলেই এলাকাবাসীর জন্য আমরা সেগুলো অচিরেই বাস্তবায়ন করতে পারবো।
শুধুমাত্র আমাদের একার প্রচেষ্টায় স্বপ্ন সাধ পূরন হবার নয়। এলাকার সচেতন মানুষেরও সহযোগীতার প্রয়োজন। এলাকার জনপ্রতিনিধি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য এবং মাননীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বেসরকারী সাহায্যকারী দাতা সংস্থার সুদৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের সব অগ্রযাত্রা এগিয়ে যাবে সন্মুখপানে - এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ - ছড়িয়ে যাবে গোটা দেশ থেকে বর্হিঃবিশ্বে আমাদের সন্তানরা । তাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠবে ডিজিটাল বাংলাদেশ ।