জাতীয়
  সৌদি থেকে নির্যাতনের শিকার ৮৩ নারী দেশে ফিরেছেন
  13-06-2018


জাতীয়
সৌদি থেকে নির্যাতনের শিকার ৮৩ নারী দেশে ফিরেছেন
দিনাজপুরের মনজুরা বেগম দিন বদলের সোনালি স্বপ্ন নিয়ে প্রিয় সংসার কিংবা পরিবার ফেলে পাড়ি জমিয়েছিলেন সুদূর সৌদি আরবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন অচিরেই ধুলিসাৎ হয়ে যায় যৌনসহ নানা নির্যাতনে। সৌদি আরবের আলখেল্লা পরা পাষন্ড মালিকদের অসভ্য আর অমানবিক আচরণ সইতে না পেরে দেশে ফিরে এসেছেন মনজুরা বেগম মোত আরও ২১ বাংলাদেশি নারী শ্রমিক। মনজুরা বেগম পাসপোর্টসহ ইজ্জত-সম্মান সব দিয়ে মালিকের নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস দিয়ে দেশে আসে . এই সকল নারীদের এখন একটাই আকাক্সক্ষা, প্রাণটা নিয়ে কোনোরকমে দেশে ফেরা। দেশে ফিরে নিপীড়নের রোমহর্ষক বর্ণনা দেন তারা। ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরা এই নারীরা বললেন, ক্রীতদাসীর মতো আচরণ করা হতো তাদের সঙ্গে। আর কোনো মেয়ে যেন কাজ করতে সৌদি আরব না যায়।দেশে ফেরা নারীরা যৌন নিপীড়নেরও শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নারীদের দেশে ফেরাতে সহায়তা করা বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
স্রোতের মতো দেশে আসতে শুরু করেছে সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি নারীরা। গত দু’দিনে এসেছেন শতাধিক।হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরো জানান, গত ২৩ এপ্রিল গাফফার নামে এক দালালের মধ্যস্থতায় আল মনসুর ওভারসিজ অ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে সৌদি আরব যান সুমাইয়া কাজল। সেখানে কাজ শুরু করার পরই গৃহকর্তা ও বাড়ির লোকজনের কাছে নির্যাতনের শিকার হন তিনি। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে দাম্মামের আল খোবার এলাকার একটি ক্যাম্পে ঠাঁই হয় তার। সেখানে থাকা অবস্থাতেও নির্যাতনের শিকার হতে হয় কাজলকে।সৌদি আরবে প্রতিনিয়ত তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়।ঃধফবৎ আটকে রেখে ইলেকট্রিক শক দেয়ার পাশাপাশি রড গরম করে ছেঁকা পর্যন্ত দেয়া হয়।
এছাড়াও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের একজন কর্মকর্তা ।তিনি জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক এয়ারলাইন্স এয়ার অ্যারাবিয়ার একটি ফ্লাইটে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নির্যাতিতা এই ৮৩ নারী ঢাকায় পৌঁছেন। দালালের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ৫ থেকে ৬ মাস আগে তারা গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। ওখানে তারা যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতনের শিকার হন। বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
বিমানবন্দরে তাদের সহায়তা দেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে ফিরে আসা নারীদের পরিবার-পরিজন যোগাযোগ করে আসছিল। ব্র্যাক তাদের আইনি সহায়তা দেবে। ফিরে আসা এই নারী শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন রূপগঞ্জের সাথী, ভোলার জোসনা, কেরানীগঞ্জের মল্লিকা, বরগুনার শাহনাজ, কক্সবাজারের শাকিলা, দিনাজপুরের মনজুরা বেগম, ফরিদপুরের মাজেদা বেগম, নওগার শম্পা রেবা, মৌলভীবাজারের লিলি আক্তার, হবিগঞ্জের রুবীনা ও খাইরুন্নেসা ও ঢাকার কেরানীগঞ্জের ঝর্না প্রমুখ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারা সবাই অমানবিক নির্যাতন সইতে না পেরে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় এই নারী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা হয়।
উল্লেখ্য, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন, যা মোট অভিবাসন সংখ্যার ১৩ শতাংশ।১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত অভিবাসন প্রত্যাশী নারী শ্রমিককে একা অভিবাসনে যেতে বাধা দেয়া হলেও পরবর্তীতে ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে কিছুটা শিথিল করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশে।