আন্তর্জাতিক
  শান্তিনিকেতনের এক মঞ্চে হাসিনা-মোদি-মমতা সবার কন্ঠে মৈত্রী বন্ধন দৃঢ় করার ডাক
  13-06-2018

শান্তিনিকেতনের এক মঞ্চে হাসিনা-মোদি-মমতা
সবার কন্ঠে মৈত্রী বন্ধন দৃঢ় করার ডাক

দিশা বিশ্বাস , কলকাতা থেকে
গত ২৫ মে বৃহস্পতিবার ছিল কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত শান্তিনিকেনের এক ঐতিহাসিক দিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে এসেছিলেন শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী শ্বিবিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসব আর বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। দুটি অনুষ্ঠানেই এসেছিলেন এই তিন নেতা।
প্রথমে এই তিন নেতা যোগদেন বিশ্বভারতীর সমাবর্তন উৎসবে। মোদি আবার বিশ্বভারতীর আচার্য। তিনি এই প্রথম এলেন বিশ্বভারতীতে। বিশ্বভারতীরেও দীর্ঘ ৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো এই সমাবর্তন উৎসব। সমাবর্তন উৎসব সেরে হাসিনা-মোদি-মমতা চলে আসেন বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের জন্য। বিশ্বভারতীর পূর্বপল্লীতে বাংলাদেশের অর্থানুকল্যে নির্মিত হয়েছে এই বাংলাদেশ ভবন।
এরআগে বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে ভাষণ দিতে গিয়ে আচার্য নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ দুটি আলাদা দেশ হলেও পারস্পরিক সহযোগিতা এই দুই দেশকে জুড়ে দিয়েছে মৈত্রির বন্ধনে। আর তারই উদাহরণ হল বাংলাদেশ ভবন। তিনি আরও বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। এটি একটি দুর্লভ ঘটনা যেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী অংশ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, আমি অতিথি হিসেবে এখানে আসিনি। আমি এসেছি আচার্য হিসেবে। তিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে এসে নিজেকে গর্বিত মনে হ”েছ। গোটা বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ বন্দিত। তিনিই প্রথম বিশ্বনাগরিক। এখনও তিনি বিশ্বনাগরিক হিসেবে রয়ে গিয়েছেন। মোদী তার দীর্ঘ ভাষণে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ গোটা বিশ্বকে আপন করে নিযেছিলেন। আর তার সেই বিশ্বভাবনার ফসল হল বিশ্বভারতী। মোদি তার ভাষণ শুরু করেছিলেন বাংলায়। সমাবর্তন উৎসবও ছিল ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী।
মোদির ভাষায়, এই আ¤্রকুঞ্জ অতীতে বহু ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে। এদিনও বিশ্বভারতীর সমাবর্তন উৎসবে ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী থেকেছে। একই মঞ্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রথম বিশ্বভারতীর কোন সমাবর্তন মঞ্চে উপ¯ি’ত থাকলেন কোনও রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ৪২ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় সমাবর্তনে উপ¯ি’ত থাকলেও ছিলেন দর্শক আসনে। এছাড়াও এদিন মঞ্চে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠি এবং বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক সবুজকলি সেন। প্রচন্ড গরম সত্ত্বেও প্রায় দশ হাজার ছাত্রছাত্রী ও ¯’ানীয় মানুষ এদিনের সমাবর্তনে উপ¯ি’ত ছিলেন। তবে সমাবর্তনে আসা সকলের পাণীয় পাণি না পাওয়ায় যে অসুবিধার সম্মুখীণ হয়েছিলেন, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নেন। সমাবর্তন শেষে মমতাকে সঙ্গে নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী পূর্বপল্লীতে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেছেন।
এদিন সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে দুদিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট কলকাতার দমদম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে কলকাতা থেকে ১৮০ কিলোমিটার উত্তরে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে পৌঁছান। হেলিপ্যাড থেকে শেখ হাসিনা রবীন্দ্রভবনে পৌঁছালে মোদি তাকে স্বাগত জানান। এই সময় হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার বোন শেখ রেহানা। সেখানে পুষ্পার্ঘ দিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা।
এরপর দুজনই সেখানে রাখা স্মারক মন্তব্য বইতে তাদের মতামত লিপিবব্ধ করেন। সেখান থেকে বিশ্বভারতীর প্রথা অনুযায়ী দুদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও মোদি, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরী লাল ত্রিপাঠি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়সহ সকলেই হেঁটে আম্রকুঞ্জের মূল অনুষ্ঠান¯’লে আসন গ্রহণ করেন। মঞ্চে দুদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও মোদির পাশেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপ¯ি’ত ছিলেন। প্রথানুযায়ী আচার্য মোদি উপাচার্যের হাতে একটি ছাতিম পাতা তুলে দেওযার মাধ্যমে সমাবর্তন সূচনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বেদ গান ও রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে সমাবর্তনের উদ্বোধন করা হয়েছে। স্বাগত ভাষন দিয়েছেন উপাচার্য সবুজকলি সেন।
তখন দুপুর ১২টা বেজে ৩০ মিনিট। শান্তিনিকেতনের ঘরানায় তৈরি মঞ্চের বাঁদিকের তিনটি গদিতে বসেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সবুজকলি সেন। এরপরে বাংলাদেশের পররাস্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝের দুটি গদির বাঁদিকে বসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের টপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর ডানপাশের অন্য তিনটি গদিতে বসেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি, বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
প্রথমে কথা বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিতো বাংলাদেশ ভবন দেখে হতবাক হয়ে যান। বলেই ওঠেন , দারুণ লেগেছে আমার বাংলাদেশ ভবন। দারুণ পছন্দ হয়েছে। এই বাংলাদেশ ভবনের মধ্য দিয়েই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃড় হবে। রবীন্দ্র-নজরুল আমাদের চেতনায় বহ্নিমান। আমরা দুদেশ রবীন্দ্র নজরুল ছাড়া ভাবতে পারিনা। মমতা বলেন, এই বাংলাদেশ ভবন তীর্থ¯’ান হয়ে যাবে। তবে তিনি রাজনৈতিক কোনও কথাবার্তা বলেননি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মনে করি রবীন্দ্র নাথ আমাদের। তাঁর গান আজ আমাদের দুদেশের জাতীয় সঙ্গীত। আমাদের বাংলাভাষা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হ”েছ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বদরবারে। বলেন, ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। ভারত আমাদের বন্ধ দেশ। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাশে দাড়িয়েছে। ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছে। তবে শেখ হাসিনা তিস্তা নিয়ে কোনও কথা বলেননি।
এখানে মোদি তাঁর ভাষণ শুরু করেন বাংলা ভাষায়। বলেন, ’বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করে সৌভাগ্য হল। খুব গর্ব অনুভব কররাম। হাসিনা সময় দেওয়ায় আমার আন্তরিক অভিনন্দন। বাংলাদেশ ভবন ভারত-বাংলাদেশের সংস্কৃতি বন্ধনের প্রতীক। বলেন, গুরুদেবের গান আজ আমাদের দুদেশের জাতীয় সঙ্গীত। গুরদেব আমারও প্রেরণা। আমাদের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সাম্প্রতিককালে আমাদের দুদেশের মধ্যে চলছে এক সোনালী অধ্যায়। দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে। কলকাতা-খুলনা বন্ধন ট্রেন চালু হয়েছে। বলেন, ভারত বাংলাদেশ বন্ধুত্ব চিরজীবী হোক। মোদির ভাষণের পর মোদি- হাসিনা এক একন্ত বৈঠকে বসেন। তবে কী আলোচনা হয়েছে সে ব্যাপারে দুই প্রধানমন্ত্রী সে ব্যপারে কিছু বলেননি। বা বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।