আন্তর্জাতিক
  আন্তর্জাতিক কারাগারে এক বাংলাদেশি বন্দির মৃত্যুর চার বছর পর পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশন খুনের মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে
  20-05-2018

২০১৪ সালের ১৮ অক্টোবর অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছিল বাংলাদেশের নাগরিক আল আমিন সরদার। ২২ বছরের এই  আল আমিনের বাড়ি ছিল বাংলাদেশের সাতক্ষীরায়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার  হাসনাবাদ থানার পুলিশ আলআমিনকে বিদেশী আইনে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পরেরদিন ধৃত বন্দিকে টাকি গ্রামিন হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়। চিকিৎসক আলআমিনকে পরীক্ষা করে তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন   বা শারীরিক অসুস্থতার কোনও প্রমাণ পাননি বলে মেডিক্যাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এরপরেই আদালতের নির্দেশে বন্দিকে বসিরহাট কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু কারাগারে ঢোকার পর বন্দি ক্রমশ আচ্ছন্ন হতে থাকে। এরপরে  তাকে বসিরহাটের সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে বন্দির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল  কলেজ হাসপাতালে পাাঠানো হয়। ওই হাসপাতালেও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে তার মস্তিস্কের স্কান করানোর  চেস্টা করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি। আলআমিন মারা যান।  এরপরেই অভিযোগ ওঠে বন্দি অবস্থায় তাকে মারধর করার।
এই ঘটনার পর রাজ্য মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠান। ওই রিপোর্টে মানবাধিকার কমিশন সন্তুস্ট হতে না পেরে কমিশনই ঘটনার তদন্তে নামে। তারপরে মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত টিমের সদস্যরা কারাগারের কর্তব্যরত ওয়ার্ডার, অফিসার, চিকিৎসক সহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন। প্রত্যেককেই জানান আল আমিনকে মারধরের কোন প্রমান মেলেনি।
এরপরেই আলআমিনের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেখে কমিশনের সদস্যরা বুঝতে পারেন মাথায় গুরুতর আঘাতের জন্য  আলআমিনের মৃত্যু হয়েছে। সেই আঘাতও লেগেছিল ময়না তদন্তের ৭ থেকে ১০ দিন আগে। সেই আঘাত দুকারণে হতে পারে হয় দুর্ঘটনাজনিতকারণে অথবা বাইর থেকে পাওয়া আঘাতে । এরপরে কমিশন শুরু করে  তদন্ত। যে পুলিশ কর্মকর্তা আলআমিনকে গ্রেপ্তার করেছিল সেই অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কমিশন জানতে পারে ওই পুলিশকর্মকর্তা  বেশ কিছুক্ষণ ধাওয়া করে আলআমিনকে গ্রেপ্তার করেছিল। এসময় হয়তো পড়ে গিয়ে আল আমিন  আঘাত পেতে পারেন বলে পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
এদিকে টাকির গ্রামীন হাসপাতালেও শারীরিক পরীক্ষায় কোনও সমস্যা ধরা পড়েনি। পুলিশ, চিকিৎসক, কারাকর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নানা অসঙ্গতি পেয়ে কমিশন মনে করে এই মৃত্যুর পেছনে পুলিশ এবং চিকিৎসকদের যথেষ্ট গাফিলতি ছিল। তাই মৃত্যুর কারণ খুঁজতে পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্তর নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ  সুপারিশ করেছে, ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করে সিআইডিকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করানোর। পাশাপাশি যে পুলিশ কর্মকর্তা আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছিল এবং  যে চিকিৎসক প্রথম তাকে পরীক্ষা করেছিল তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশের চিঠি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবকেও পাঠিয়েছে মানবাধিকার কমিশন।