খেলাধুলা
  কচিকাঁচার ফুটবল উৎসব
  18-04-2018

প্রাণহীন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে হঠাৎ প্রাণের জোয়ার। শূন্য গ্যালারিতে লোকে  লোকারণ্য। দেশের আনাচে-কানাচে থেকে উঠে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় মুখর এই স্টেডিয়াম। ফুটবলের প্রাণকেন্দ্রের সবুজের ময়দানে কচিকাঁচা ফুটবলারদের লড়াই। লক্ষাধিক বিদ্যালয় থেকে গতকাল শ্রেষ্ঠত্বের অর্জনের লড়াইয়ে নামে ে ছেলে ও মেয়েদের মিলিয়ে চার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেই উৎসবের মধ্যমণি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোমলমতি শিশুদের গলায় মেডেল পরিয়ে দিয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন, `একদিন আমরা বিশ্বকাপে খেলব। `সেই স্বপ্ন   তো খুদে ফুটবলারদের ঘিরেই। ফুটবলের প্রতিভা অন্বেষণের জন্য গত আট বছর ধরে হয়ে আসছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ টুর্নামেন্ট। ২০১০ সালে প্রথম শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধু  গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। পরের বছরই যুক্ত হয় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে টানা তৃতীয়বার শিরোপা গেছে কক্সবাজারে। জমজমাট ফাইনালে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ১-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কক্সবাজার পেকুয়া উপজেলার পূর্ব উজানটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বঙ্গমাতা ফুটবলে হয়েছে নতুন চ্যাম্পিয়ন। রোমাঞ্চর ফাইনালটির নিষ্পত্তি হয় ভাগ্যের টাইব্রেকারে। যেখানে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পেনাল্টি শুট আউটে ৫-৪ গোলে হারিয়ে শিরোপা জয়ের উৎসবে মেতে ওঠে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার দোহারো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা। চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি ও এক লাখ টাকা পুরস্কার পায়। রানার্সআপ ৭৫ হাজার ও তৃতীয় স্থান হওয়া স্কুল পেয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং বাফুফের সহযোগিতায় এবারের দুটি ফাইনালে ছিল নানান বিনোদন ও মনোজ্ঞ ডিসপ্লে। ছেলেদের এবং মেয়েদের ফাইনালের মাঝ বিরতিতে দেশের কৃষ্টি-কালচার ফুটিয়ে  তোলেন শিল্পীরা। আর প্রধানমন্ত্রী মাঠে আসেন  মেয়েদের ফাইনালের বিরতিতে। তিনি আসার পর তার সম্মানে মধ্য বিরতিতে বেজে ওঠে ` মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি` গানটি। সেই গানের তালে ডিসপ্লেতে অংশ  নেয় একদল শিক্ষার্থী। আর বঙ্গমাতা ফুটবলের  রোমাঞ্চকর ফাইনালটি উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। ফাইনাল শেষে বিজয়ী ও বিজিতদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন শেখ হাসিনা। উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ আরও অনেকে।
হোক না প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল টুর্নামেন্ট। দুই চ্যাম্পিয়ন দলের উচ্চ্বাস দেখে অনেকেই বলবেন তারা অনেক বড় টুর্নামেন্টে জিতেছে। আসলে তো তাই। বঙ্গবন্ধু  গোল্ডকাপে ৬৪ হাজার ৬৮৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সেরা কক্সবাজার পেকুয়া উপজেলার পূর্ব উজানটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পুরো মাঠে চক্কর দেয় বালকরা; যা দেখার মতো ছিল। ৫০ মিনিটের লড়াইটি তাদের কাছে কোনো ব্যাপারই ছিল না। আর বঙ্গমাতায় ৬৪ হাজার ৬৮৩টি স্কুলকে থেকে সেরা হয় শৈলকূপা  দোহারো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উৎসবে আরও এক ধাপ এগিয়ে তারা। মাঠের এক  কোনায় এসে কোমর দুলিয়ে নাচতে থাকে, যা  দেখে গ্যালারিতে আসা খুদে সমর্থক থেকে সব বয়সীরা বিনোদন পেয়েছেন। বিপরীতে পরাজিত দুটি স্কুলের ছেলেমেয়েরা হতাশাগ্রস্ত। প্রধানমন্ত্রী যখন অংশগ্রহণ করা সব স্কুলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তখন আনন্দ-বেদনার দৃশ্যটা একাকার হয়ে যায়। সবাই আনন্দে হাততালি দিতে থাকেন।