সাক্ষাতকার
  মানবাধিকার খবরকে পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত
  15-02-2018

শুধু দরিদ্রদের নয়, ধনীদেরও মানবাধিকার ক্ষুন্ন হয়
মানবাধিকার পরিস্থিতির সামগ্রিক অবস্থা ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কলকাতা সল্টলেক পূর্ত ভবনে পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে কলকাতা হাইকোর্ট এর সাবেক প্রধান বিচারপতি ও পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত মানবাধিকার খবরকে একান্ত সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। যার বিশেষ অংশ মানবাধিকার খবর-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
মানবাধিকার খবর ঃ মানবাধিকার কি? জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারের ৩০টি ধারার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত ঃ যে ৩০টি ধারা-জাতিসংঘে রয়েছে তার মধ্যে দুটি গ্রুপ আছে, একটি হচ্ছে সিবিলিয়ান পলিটিক্যাল রাইটস্, আরেকটা হচ্ছে সোশিয়াল কালচারাল এন্ড ইকোনিমিকস্ রাইটস্ দু’টি গ্রুপ রয়েছে এ দু’টো গ্রুপের পরবর্তীকালে সেগুলোকে বলবৎ করার জন্য ১৯৬৬ সালে দু’টো সেপার‌্যাট কবিনেট তৈরী হয় এবং সেই দুটো কবিন্যান্ট ভারত সরকার ১৯৭৯ সালে রেডিফাই করেছিল আর এ দুটির প্রয়োজনীয়তা এক কথায় বলতে পারা যায় যে, সিবিলিয়ান পলিটিক্যাল রাইটস্ “উই দাউট” সোশিয়াল কালচারাল এন্ড ইকোনমিকস্ রাইটস্, অর্থহীন হয়ে পড়তে পারে, কারণ যে মানুষটার পেট অভুক্ত তার কাছে সিবিলিয়ান পলিটিক্যাল, রাইটসই কি আর সোশিয়াল কালচারাল এন্ড ইকোনমিকস্ রাইটস্ই কি, কাজেই একে অপরের পরিপূরক বলেই আমি মনে করি, কাজেই এ কথাটি বলা যায়না যে ৩০টি অনুচ্ছেদ কোন প্রয়োজন ছিলনা।
মানবাধিকার খবর ঃ ভাররেত বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি কি অবস্থায় আছে বলে আপনি মনে করেন?
বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত ঃ আমাদের দেশে মানবাধিকার লংঘন হচ্ছেনা একথা আমি বলতে পারবনা, মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে কিন্তু তার প্রতিকারেরও চেষ্টা হচ্ছে। ধরুন বিশেষ করে নারী বিষয়ক যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলোর জন্য আমাদের সুপ্রীম কোর্ট তার “বিলিংস” দিয়েছে এবং আইনও তৈরী হয়েছে, কাজ হচ্ছে এইসব নিয়ে তবুও আমি ব্যক্তিগতভাবে এ কাজের গতিকে নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই।
মানবাধিকার খবর ঃ মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন নির্যাতন এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত ঃ দেখুন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমার ‘সহানুভূতি যে তাদের প্রতি আছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমি কেন প্রত্যেকটি মানুষেরী সহানুভূতি রয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক স্তরে এর বিভিন্ন রকম মাপ হয়ে গেছে যেমন ঃ আমাদের ভারত সরকারের একসময়ে যে নীতি দেখতে পাচ্ছি, তাদের নিজের জায়গায় ফিরে যেতে হবে, ফিরে যেতে হবে এ কথাটি খুব একটা খারাপ কথা নয় কারণ তারা আজকে যদি রিফিউজি হিসেবে এখানে থেকে যায়।এমনতো নয় রোহিঙ্গারাতো মায়ানমারে ছিল ওরা সবাই চলে এসেছে। ওখানে আরো রোহিঙ্গারা রয়েছে, অতএব, এরা যদি এখানে থেকে যায় তর্কের খাতিরে ধরে নিন এরা এখানে কিংবা বাংলাদেশে রয়ে গেলো এদেরতো আপনি প্রটেকশন দিতে পারছেন কিন্তু যারা মায়ানমারে রয়ে গেলো তাদের আপনি কি করবেন। এর যদি একটা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান করতে হয় রাজনৈতিক স্তরে এবং ইন্টারন্যাশনাল ফোরামে এ বিষয়টি একটি সুষ্ঠ সমাধান হওয়া প্রয়োজন যাতে করে রোহিঙ্গারা মানুষ হিসেবে মানুষের মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে।
মানবাধিকার খবর ঃ মানবাধিকার রক্ষায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্বাধীনভাবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে পারছেন কি?
বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত ঃ ২১ শে ডিসেম্বর ২০১৬ পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এসেছি এর মধ্যে কখনোও মানবাধিকার কমিশনের কোন কাজে সরকার কিংবা অন্য কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে বলে আমি বলতে পারবনা, এ যাবত আমি কোন প্রতিবন্ধকতা দেখিনি।
মানবাধিকার খবর ঃ মানবাধিকার খবরের প্রকাশনা ও কর্মকান্ড সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত ঃ আপনারা সেবামূলক যে কাজগুলো করছেন সেটা মানবাধিকারের ক্ষেত্র থেকে বাইরে। তার কারণ সেবামূলক কাজ মানবাধিকার গোষ্ঠীর বেশী প্রয়োজন আছে, তাদের জন্য করছেন। আপনারা আর্তের সেবা করছেন তাহলো আর্ত একজন গরীবও হতে পারে, ধনীও হতে পারে। মানবাধিকার প্রসঙ্গে সে একই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে, একথা বলা যায় না যে, শুধু দরিদ্রদের মানবাধিকার ক্ষুন্ন হয়, ধনী লোকেরও মানবাধিকার ক্ষুন্ন হয়, সুতরাং মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য কাজগুলোকে সেবামূলক কাজ গুলো থেকে আলাদা করে দেখতে হবে। মানবাধিকার হচ্ছে একটা দিক এবং সেবামূলক কাজ আরেকটা দিক দুটো দুদিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, কিন্তু মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে যাই কিছু করছেন এর চাইতে অনেক বেশী সুফল পাচ্ছেন মানব সেবামূলক কাজে আপনারা নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। আর ফলাফলটাও আপনারা সঙ্গে সঙ্গে পাচ্ছেন, একজন ক্ষুধার্তের মুখে যখন অন্ন যুগিয়ে দিচ্ছেন ফলাফলটা সাথে সাথে পাচ্ছেন। আার মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন এগুলো সুদৃঢ় প্রসারী পরিকল্পনা এগুলোর ফলাফল পেতে সময় লাগে। তাই আমি মানবাধিকার খবর এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি আশা করি ও প্রার্থনা করি।
অনুলিখন : রুবিনা শওকত উল্লাহ