সাক্ষাতকার
  মানবাধিকার খবরকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রদীপ ভট্টাচার্য
  11-01-2018

ভারত ও বাংলাদেশ সীমানায় মানবাধিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হউক
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাবেক শ্রম মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মেম্বার তথ্য-প্রযুক্তি সংসদীয় কমিটি, মেম্বার নিরাপত্তা  বিশ্লেøষক সংসদীয় কমিটি এবং রাজ্যসভার এমপি শ্রী প্রফেসর প্রদীপ ভট্টাচার্য তার কলকাতা পালম এ্যভিনিউ অফিসে মানবাধিকার খবরকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। তিনি মানবাধিকার, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, মায়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যা সহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন-
মানবাধিকার খবর : মানবাধিকার কি? জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারের ৩০টি ধারার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পাঠকদের উদ্দেশ্য কিছু বলুন ?
প্রদীপ ভট্টাচার্য : মানবাধিকার হচ্ছে যে, আমি একটা দেশে জন্মগ্রহণ করার পর থেকে সেই দেশের সব নিয়ম কানুন আমি নিশ্চয়ই মানবো। কিন্তু আমি যদি নিয়ম কানুন না মানি তাহলে পরে আইন অনুযায়ী আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কোন রাষ্ট্র তাঁর নিজের দেশের নাগরিকদের নিতে পারে। কিন্তু এমন কিছু করতে পারবেনা যেটা বেআইনিভাবে কোনো একজন মানুষকে শাস্তি দেওয়া বা আমার যেটা অধিকার আছে আমার যেটা অভিযোগ করার অধিকার আছে  যেমন ধরা যাক আমার দেশের কোনো মানুষ অন্যায় করেনি, কিন্তু পুলিশ তাকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে চলে যায়। তখন আমি মানবাধিকারে যেতে পারি। কারণ এভাবে আমাকে গ্রেফতার করার অধিকার আইনের নেই এটা আমার অধিকারকে ক্ষুন্ন করছে আমি যদি কোন কথা বলি সে কথা বলার অধিকার আমার আছে। আমার কথা বলার অধিকার গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রের ব্যবস্থা সম্পর্কে সমালোচনা করতে পারি। এই সমালোচনা করার জন্য যদি রাষ্ট্র আমার বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশান নিতে চায় আমি এটাকে মানবাধিকার লংঙ্ঘিত হচ্ছে বলতে পারি। যেমন ধরা যাক যে ভারতীয় এক নাবিককে পাকিস্তান সরকার গ্রেফতার করে রেখেছে যার ফাঁসির অর্ডার হওয়ার কথা তাঁর সঙ্গে মা-বাবা, আত্মীয়দের দেখা করতে দিতে চাইছে না। কিন্তু আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার কমিশন এগিয়ে এসেছে, মানবাধিকার সংস্থা এগিয়ে আসার আমার কারণে আজকে তাঁর পরিবার ইসলামাবাদ যাচ্ছে নাবিকের সাথে দেখা করার জন্য এটাই হচ্ছে মানবাধিকার। অর্থাৎ আমি মানুষ হয়ে জন্মেছি বা আমার যে অধিকার সে অধিকারগুলি কখনো কেউ কেড়ে নিতে পারে না এমনকি রাষ্ট্রও না যদি আমি আইন মানি।
মানবাধিকার খবর : ভারতের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে কি অবস্থায় আছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রদীপ ভট্টাচার্য : ভারত বর্ষের মাটিতে আজকে মানবাধিকার অনেক জায়গায় লংঘিত হচ্ছে ধর্মের নামে মানুষের যে নিজস্ব অধিকার, আমার ভরন-পোষণ করার অধিকার, আমার খাবার অধিকার আমার কথা বলার অধিকার, আমার নিয়মকানুন মানার অধিকার ধর্মীয় আচার পালন করার যে অধিকার সেই অধিকারের আইন ভঙ্গ করার চেষ্টা করছে, জোড় করে গায়ের জোরে বন্ধ করার চেষ্টা করছে এটা কিন্তু মানুষের মানবাধিকারকে লংঘিত করার চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের মানবাধিকার কমিশন গুলো আছে মানবাধিকার রক্ষ করার জন্য যারা বিভিন্ন এনজিও তৈরী হয়ে আছে সে এনজিওরা প্রবল ভাবে বাধা দিয়ে সারা ভারত ব্যাপি আন্দোলন তৈরী করার ফল অনেকাংশে মানবাধিকার রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। আপনারা জানেন যে কর্নাটাকের লেখিকাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে কারণ তিনি কেন লিখছে তার লেখা তাদের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। এটাতো অন্যায় কিছুনা তিনি লিখতেই পারেন বলতেই পারেন কিন্তু তাই বলে কি তাকে হত্যা করা এটাতো হতে পারেনা। এর বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ এটাই মানবাধিকার।
মানবাধিকার খবর : মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন ও হত্যা নির্যাতন সহ বহিঃ বিশ্বের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
প্রদীপ ভট্টাচার্য : আমি মনে করি এ সমস্যাটার অবিলম্বেই সমাধান করা উচিত রাষ্ট্রের সঙ্গে আােচনার মাধ্যমে এবং কফি আনানকে দিয়ে যে কমিটি তৈরী করা হয়েছে আনানের যে কমিটি রিকমন্ডেশন গুলো আছে আমার মনে হয় সেগুলো মায়ানমার মানেনি। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর যে ধরনের অমানসিক অত্যাচার হয়েছে এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল আমরা এক সময় হিটলারের ইতিহাস  পড়েছি, শুনেছি হিটলার ইহুদিদের উপর কিভাবে অত্যাচার করেছে। ঠিক সে রকম রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার এটা একেবারে অমানবিক। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত বলছে। ভারতবর্ষ তাদের খাবার, অন্যান্য সাহায্য দিচ্ছে এবং অন্যান্য দেশ থেকে সহযোগিতা দিচ্ছে আমি চাই এ সমস্যার সমাধান যেন হয়।
মানবাধিকার খবর : বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মায়ানমার সীমান্ত প্রতিদিন বাংলাদেশীদের হত্যা নির্যাতনসহ সবধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। হত্যা নির্যাতন বন্ধে উভয় দেশ উদ্যোগ নিলেও কোন কাজে আসছেনা। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্যও পরামর্শ কি?
প্রদীপ ভট্টাচার্য : বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভারত, এ তিনটি দেশ পাশাপাশি আছে। এ তিনটি দেশের মধ্যে যদি সম্পর্ক নিবিড় হয় তাহলে অনেক সমস্যা, সীমান্ত সমস্যা থেকে শুরু করে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ভারতের সঙ্গে মায়ানমার সম্পর্ক অনেক আন্তরিক। অস্বীকার করে কোন লাভ নেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতবর্ষের সম্পর্ক আত্বিক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক সেই সম্পর্কে আমরা কোনভাবে চির ধরতে দেবনা।
কিন্তু মায়ানমারের উপর কোন ছায়া বিস্তার করছে এবং কারা বিস্তার করছে। এটা একমাত্র মায়ানমার বলতে পারবে। মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের কোন বিরোধ হওয়ার কারণ নেই। মায়ানমার যদি মনে করে যে বাংলাদেশের প্রতি অত্যাচার হবে ভারতবর্ষ বসে থাকবে সমাধান করবেনা এটা ভুল। মায়ানমারের সঙ্গে চাই আমরা গভীর সম্পর্ক আত্মীক সম্পর্ক। বাংলাদেশ, ভারত মায়ানমার এ তিনটি দেশ অত্যন্ত গভীর ও আন্তরিক সম্পর্কে গড়ে তোলা আমাদের করতে হবে এবং এ ব্যাপারে তিনটা রাষ্ট্রের প্রধানরা দায়িত্ব নিক, নিয়ে কাজ করুক। এ ব্যাপারে চাই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ গ্রহণ করুক অত্যন্ত খুশি হব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তিনি তো সবসময় চাইছেন আমরা তা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে যদি উদ্যোগ গ্রহণ করে, কারণ তিনি বড় রাষ্ট্রের প্রধান এই তিন রাষ্ট্রের একটি মেল বন্ধন যদি তৈরী করতে পারেন। তাহলে এশিয়া মহাদেশে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে।
মানবাধিকার খবর : ভারত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সম্পর্কে কিছু বলুন?
প্রদীপ ভট্টাচার্য : ভারত বাংলাদেশ এই দুই দেশের মধ্যে অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আছে যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসে, আবার ভারত থেকে বাংলাদেশ যায় চাল, ডাল, থেকে শুরু করে এমন অনেক কিছু। ভারতবর্ষ জুট কিনে আনছে। এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বি করার জন্য ভারতবর্ষ সব সময় এগিয়ে আসছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ভারতবর্ষ সবসময় যেমন ছিল আমি বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার ইন্দিরা গান্ধীর মানসিকতাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক নিবিড়িতর করবে।
মানবাধিকার খবর : ভারত সরকার সমাজে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কি কি কাজ করছে? ভবিষ্যতে কি ধরনের কাজ করতে চায়?
প্রদীপ ভট্টাচার্য : ভারত সরকার সমাজে মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রত্যেকটি মানবাধিকার গঠন করেছে এবং মানবাধিকার কমিশনে একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার, কিংবা রিটায়ার্ড জার্জ তাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং মানবাধিকার কমিশন ইতিমধ্যে বহু আবেদন গ্রহণ করেছে। অনেক সময় এটা দেখা যাচ্ছে মানবাধিকার কমিশনে কোন একজন এসপি সম্পর্কে অভিযোগ নিয়ে এলে সেই অভিযোগ সম্পর্কে মানবাধিকার কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সে ব্যাপারে ভারত সরকারের উচিত তাদের সাথে থাকা। মানবাধিকার কমিশন তার কাজ স্পষ্টভাবে পশ্চিম বাংলাসহ ভারতবর্ষে করছে। সেজন্য ভারতবর্ষে শান্তি দেখতে পাচ্ছেন। তারপরও যারা মানবাধিকার ভাঙ্গাতে চাচ্ছে তারা দুর্বল হয়ে পড়ছে এ মানবাধিকার কমিশনের জন্য। যারা পৃথিবীর মধ্যে যে সমস্ত মানবাধিকার কমিশন কাজ করছে তাদের মধ্যে ভারতবর্ষ সবচেয়ে বেশী পাওয়ারফুলি এবং বেশী কাজ করছে।
মানবাধিকার খবর : মানবাধিকার বিষয়ক বিশ্বের একমাত্র নিয়মিত সৃজনশীল জনপ্রিয় বাংলা প্রকাশনা মানবাধিকার খবর তার লেখনী ও সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে অধিকার বঞ্চিত অসহায় মানুষের সেবা প্রদান করছে। এছাড়া দেশ-বিদেশ থেকে নারী ও শিশু উদ্ধার, আইনি সহায়তা, চিকিৎসা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ ও দরিদ্রদের সহায়তাসহ নানাবিদ সামাজিক কাজ করে যাচ্ছে। মানবাধিকার খবরের কর্মকান্ড সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
প্রদীপ ভট্টাচার্য : মানবাধিকার খবর সংবাদপত্রের মাধ্যমে এই যে মানবাধিকার কি এটা মানুষের কাছে জানিয়ে দিচ্ছেন। মানবাধিকার খবর এই যে, শব্দটার মধ্য দিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন মানুষ হিসেবে এবং আইন মোতাবেক তোমার হাতে কি ক্ষমতা আছে সেটা তুমি জানো ও প্রয়োগ কর এই ক্ষমতাটা মানুষকে আপনারা কাগজের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছেন এবং আপনাদের কাগজের মাথায় একটি পায়রার ছবি অর্থাৎ শান্তির প্রতিক। বাংলাদেশ এবং ভারতবর্ষের যে সীমানা আছে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হউক। আমাদের পৃথিবীতে আজকের এই দিনে অশান্তি তৈরী করার জন্য বহু মানুষ তৈরী হয়েছে। কিন্তু শান্তির জন্য একটা সংবাদ পত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে। যে সংবাদপত্র মানুষের দরজায় পৌঁছে যাচ্ছে এর থেকে আনন্দ আর কি হতে পারে। আমি মানবাধিকার খবরের দীর্ঘায়ু কামনা করছি। যাতে এ পত্রিকা মানবতার কল্যাণে নির্মল ভাবে কাজ করে যেতেে পারে। মানবতায় শান্তির বানী নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ মায়ানমারসহ সারা বিশ্বে পত্রিকাটি পদচারনায় মুখর থাকুক।
মানবাধিকার খবর : দীর্ঘসময় আপনার মুল্যবান সময় ব্যয় করে মানবাধিকার খবরকে পাঠকদের গঠন মূলক সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে মানবাধিকার খবরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রদীপ ভট্টাচার্য : আপনাদেরকে ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সময় শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশ থেকে এসে আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার জন্য।
সাক্ষাৎকার গ্রহনে- মানবাধিকার খবর’র সম্পাদক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন
সহযোগিতায়- মনোয়ার ইমাম, ভরত প্রতিনিধি
 অনুলিখন- রুবিনা শওকত উল্লাহ