সারাদেশ
  গুটিকয়েক জঙ্গী-সন্ত্রাসীর জন্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থেমে থাকবে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
  01-11-2017

॥ এস.এম নকিব নাছরুল্লাহ্, পিরোজপুর ॥

সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের আশায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র-গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পন করেছে সুন্দরবনের কুখ্যাত জলদস্যু মাঞ্জুবাহিনী’ ও ‘মজিদ বাহিনী’র প্রধানসহ ২০ জলদস্যু। এ সময় তারা দেশী-বিদেশি মোট ৩৩টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১ হাজার ৩শ ২৯ রাউন্ড গুলি জমা দেন। এ বাহিনী দু’টি সুন্দরবনের মংলা ও দাকোপ এলাকায় ডাকাতিতে লিপ্ত ছিল। ইতিপূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন সময় আরও ১২টি বাহিনী স্বেচ্ছায় র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জে র‌্যাব-৮’র দিনব্যাপী অভিযান চলার সময় এই ২০ জলদস্যু র‌্যাবের কাছে ধরা দেয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৮’র অধিনায়ক উইং কমান্ডার হাসান ইমন আলী রাজিব ।

আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খুন এবং ধর্ষণ ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য লঘু অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, যারা বে-পথে চলে গেছেন কিংবা পথ হারিয়েছেন কিংবা যারা অনুতপ্ত হয়েছেন, যারা জঙ্গিবাদে চলে গিয়েছেন-অনুতপ্ত হয়েছেন, যারা জলদস্যুতায় চলে গিয়েছেন অনুতপ্ত হয়েছেন, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক দিয়েছেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তারা সবাই ফিরে আসবে, চলে আসবে, স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ বিনির্মানে সহযোগিতা করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, কেউ নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আত্মসমর্পন করলে রাষ্ট্র তাকে পুনর্বাসন করে সমাজের মূল ধরায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব গ্রহন করবে।

প্রধানমন্ত্রী নিজেই একাধিকবার এঘোষনা দিয়েছেন। গুটিকয়েক জঙ্গী-সন্ত্রাসীর জন্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থেমে থাকবে না। আত্মসমর্পন করা ২০ জলদস্যুর প্রত্যেকের নামেই রয়েছে একাধিক মামলা। এদের আদালতে সোপর্দ করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়ার পাশপাশি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে তাদের পুনর্বাসন করার কথা জানিয়েছেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এছাড়াও নদী বিধৌত এই অঞ্চলে দস্যু, সন্ত্রাস এবং জঙ্গি নির্মুলে আধুনিক নৌযানসহ সুন্দরবন অঞ্চলে র‌্যাবের আরো একটি ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি। দস্যুতা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং জঙ্গীবাদ করে কেউ বাঁচতে পারবে না বলে বক্তৃতায় হুঁশিয়ার করে দেন র‌্যাব মহাপরিচালক।

অনুষ্ঠানে র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার হাসান ইমন আলী রাজিব এর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, স্থানীয় সাংসদ একে এম এ আউয়াল, মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, অতিরিক্ত জিআইজি বরিশাল মো. আকরাম হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সেখ, পুলিশ সুপার মো. ওয়ালিদ হোসেন। স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আত্মসমর্পনের পর সুন্দরবনের মাঞ্জু বাহিনীর প্রধান বাগেরহাটের মো. মাঞ্জু সরদার বলেন, মানুষ ভুল করে। তিনিও ভুল করে খারাপ পথে চলে গিয়েছিলেন। এখন ভুল বুঝতে পেরে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের ওই জীবন ছিল অন্ধকার, ওই জীবন আর ভালো লাগে না। তাই তিনি সহ তার সহযোগীরা স্বাভাবিক জীবনে ভালোভাবে বাঁচতে চান। তার বিরুদ্ধে থাকা একটি মামলার কি হবে তা নিয়ে চিন্তিত মাঞ্জু। মজিদ বাহিনীর প্রধান সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মো. তাকবির কাগচী (মজিদ) বলেন, তিনি সহ অন্যরা খারাপ জগতে ছিলেন। এখন ভালো হওয়ার আশায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমাদিয়ে আত্মসমর্পন করেছেন। এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সরকারের সহযোগিতা চান তারা সবাই।

আত্মসমর্পণ করা ২০ জন হলেন মাঞ্জু বাহিনীর প্রধান মো. মাঞ্জু সরদার, তার সহযোগী জুলফিকার ইজারাদার, বাচ্চু মল্লিক, তৌহিদুর রহমান শেখ, রেজাউল ইসলাম, পলাশ খান, সুমায়ন ফকির, মো. জামরুল শেখ, মজিব ইজারাদার, হাওলাদার আলমগীর ও মো. হানিফ শেখ। অপর দিকে মজিদ বাহিনীর সদস্যরা হলো, দলের প্রধান মো. তাকবির কাগচী, মো. হাসান বিশ^াষ, আব্দুল মজিদ, ইউনুস শেখ, হাফিজুল ইসলাম,আফজাল খান, এসকেন খান, হাসান আলী ইজারাদার ও মোসা ইজারাদার। এদের সকলের বাড়ি বাগেরহাট ও সাতক্ষিরা জেলায়।

এ নিয়ে এ পর্যন্ত ১০৬টি অভিযানে সর্বমোট ১২টি বাহিনীর ১৩২জন জলদস্যু র‌্যাবের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পন করেন ও ২৪৯টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১২ হাজার ৫শ’ ৯২রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে র‌্যাব।