আন্তর্জাতিক
  পশ্চিমবঙ্গ’র নাম বদলে হচ্ছে ’বাংলা’
  01-11-2017

॥ দিশা বিশ্বাস, কলকাতা ॥

পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে হচ্ছে বাংলা। ইংরেজি, বাংলা এবং হিন্দিতেও হবে বাংলা নাম। সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। গত বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের নাম পরিবর্তণ করে বাংলা রাখলেও ইংরেজিতে এই নাম রাখা হয় বেঙ্গল আর হিন্দিতে বাঙ্গাল। মন্ত্রীসভায় এই সিদ্ধান্তের পর গত বছর ২৯ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব বিপুল ভোটের ব্যবধানে পাস হয়ে যায়।

প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ১৮৯ ভোট আর বিপক্ষে পড়ে ৩১ ভোট। পরে নাম পরিবর্তণের এই প্রস্তাব যথারীতি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। কিন্ত কেন্দ্রীয় সরকার একই রাজ্যের তিনভাষায় তিনটি নাম থাকায় আপত্তি তুলে তা জানিয়ে দেয় রাজ্য সরকারকে। এরপরেই রাজ্য মন্ত্রীসভা বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজিতে রাজ্যের না ’বাংলা’ হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রীসভার বৈঠকের পর রাজ্যের শিক্ষা ও পরিষদীয় দফতরের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর তা পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। বহুদিন অপেক্ষা করার পরও কোনও সদর্থক উত্তর মেলেনি। পরে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, রাজ্যের ক্ষেত্রে একটি নাম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তাই কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে শুধু ’বাংলা’ নামকরণ করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে মন্ত্রীসভার বৈঠকে।

রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব পাসের পর গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, নাম পরিবর্তণের প্রস্তাব পাসের ঘটনা আমাদের কাছে এক ঐতিহাসিক দিন। বাংলা নামের প্রতি আমাদের আবেগ জড়িত। তাই এই রাজ্যের নাম বাংলা হওয়ায় আমরা গর্বিত। আশাকরি রাজ্যবাসীও খুশি। তাই রাজ্যবাসীকে জানাই অভিনন্দন। বলেছিলেন, বাংলা নামে আমরা আজও স্বচ্ছন্দ বোধ করি। তাই আজ এই রাজ্যবাসীর জন্য এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হল। মমতা বলেন, যুগের প্রয়োজনে কখনও সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়। আমরা সেই পথে এগিয়ে আমাদের রাজ্যের নাম বাংলা করেছি। কবিগুরুর নানা লেখায় ফুটে উঠেছে এই বাংলা নামের কথা। পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য মন্ত্রীসভায় গত বছরের ২ আগস্ট দুটি নামের প্রস্তাব গৃহীত হয়।

বাংলা এবং বঙ্গ। তবে অধিকাংশের মত ছিল বাংলা’ নামের পক্ষে। সেই নামকেই অনুমোদন করেন মমতা। তারপরে এই নাম পরিবর্তণের প্রস্তাব পেশ হয় বিধানসভার অধিবেশনে। সেদিন অবশ্য কেউ কেউ বলেছিলেন, আমাদের প্রতিবেশী রাস্ট্র বাংলাদেশ । রাজ্যের নাম বাংলা হলে সমস্যা হতে পারে। তাই এই প্রসঙ্গে মমতা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন , ’বাংলার মাটি , বাংলার জল ঠিকই আছে। পাশে বাংলাদেশ তো একটা দেশ। আর রাজ্যের নাম বাংলা হলে অসুবিধে কোথায়? পাকিস্তানেও পাঞ্জাব আছে, আমাদের দেশেও পাঞ্জাব আছে।’ প্রসঙ্গত, এর আগেও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নাম পরিবর্তন হয়েছে সংযুক্ত প্রদেশের নাম পরিবর্তন হয়ে হয়েছে উত্তরপ্রদেশ, হায়দারাবাদের পরিবর্তে হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ , মধ্য ভারতের নাম হয়েছে মধ্যপ্রদেশ ,উত্তরাঞ্চলের পরিবর্তে হয়েছে উত্তরাখন্ড , উড়িষ্যার পরিবর্তে হয়েছে ওডিশা , ত্রিবাঙ্কুর -কোচিনের পরিবর্তে কেরালা ,মাদ্রাজের পরিবর্তে তামিলনাড়– এবং মহীশূরের পরিবর্তে হয়েছে কর্ণাটক রাজ্য ।

বলা বাহুল্য, ২০১১ সালে মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় প্রথম আসার পর মমতা আগস্ট মাসে এক সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। তখন সেখানেই ওঠে আসে ওয়েস্ট বেঙ্গলের নাম ইংরেজিতে পশ্চিমবঙ্গ লেখা হোক। বৈঠকে এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর তা পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য।

২০১৪ সালে কেন্দ্র-রাজ্য বিষয়ক তৎকালিন যুগ্ম সচিব সুরেশ কুমার জানিয়ে দেন, সংবিধান সংশোধন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংসদে আনা হবে ’ওয়েস্ট বেঙ্গল অল্টারেশন অফ নেম-অ্যাক্ট ২০১৪’ নামের একটি সংশোধনী বিল।কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও সংসদে আসেনি সেই বিল।