জাতীয়
  রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দিন : প্রধানমন্ত্রী
  01-11-2017

॥ মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন ॥

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, `মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িকভাবে আমরা এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছি। আপনাদের অনুরোধ জানাব, রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করুন। মিয়ানমারকে তার নাগরিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে এবং বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করুন।

` প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের অমানবিক নির্যাতন এবং তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা শুধু এ অঞ্চলে নয়, এর বাইরেও অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লøাজায় ৬৩তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সের (সিপিসি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে কমনওয়েলথভুক্ত ৫২ দেশের মধ্যে ৪৪ দেশ, ১৮০ শাখার মধ্যে ১১৪টি এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। এ সব দেশের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের ৫৬ জন স্পিকার, ২৩ জন ডেপুটি স্পিকার এবং সংসদ সদস্যসহ পাঁচ শতাধিক প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) ভাইস প্যাট্রন হিসেবে ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে `কনটিনিউয়িং টু এনহ্যান্স হাই স্ট্যান্ডার্ডস অব পারফরম্যান্স অব পার্লামেন্টারিয়ানস`। রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সরকারের নিযার্তনমূলক আচরণের ফলে গত ২৫ আগস্ট থেকে ছয় লাখ ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।

১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। মানবিক কারণে তাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বরাবরই বলে আসছে রোহিঙ্গা সমস্যার পেছনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই, সমস্যার সৃষ্টি ও কেন্দৃবিন্দু মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানে নিহিত।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ১৯৭৩ সালে সিপিএর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সিপিএর নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিএর চেয়ারপারসন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে তিনি সিপিএর প্যাট্রন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাণী পড়ে শোনান। এরপর বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন এবং সিপিএর কার্যক্রম নিয়ে দুটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। দুই তথ্যচিত্রের মাঝে নাচের দল নৃত্যাঞ্চল দলগত নৃত্য পরিবেশন করে।

এ ছাড়া কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রেশিয়া স্কটল্যান্ডের একটি ভিডিও বার্তা দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে সিপিএর সেক্রেটারি জেনারেল আকবর খান ও অষ্টম কমনওয়েলথ ইয়ুথ পার্লামেন্টের যুব প্রতিনিধি আয়মান সাদিকও বক্তব্য দেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সিপিএর কোষাধ্যক্ষ ও অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপিটাল টেরিটরির লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকার ভিকি ডান। পরে `বাংলাদেশ দ্য গোল্ডেন ডেল্টা` শীর্ষক নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়।

এ ছাড়া `সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ` শীর্ষক একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। এবারের সিপিএ সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ১ নভেম্বর। ঢাকার হোটেল র‌্যাডিসনে ২ থেকে ৪ নভেম্বর সিপিএর স্মল ব্রাঞ্চ এবং নির্বাহী কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটির বৈঠক হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাবে বাসস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট থমাস এ শ্যানন বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর চাপ ও আলোচনা অব্যাহত রাখবে।