সারাদেশ
  ১৭ মাস পর মুম্বাই থেকে ফিরলো সাগর
  01-10-2017



॥ বাবলু রহমান, সাতক্ষীরা ॥

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের শিশু সাগর মোড়ল (১৪) ভারতের মুম্বাইয়ের ‘উমার খেড়ি’ নামের একটি চাইল্ড শেল্টার হোম থেকে মুক্তি পেয়ে দীর্ঘ ১৭ মাস পর বাড়ি ফিরেছে। গত শনিবার ভারতের বিএসএফ এবং বাংলাদেশের বিজিবিযৌথ সমন্বয়ে হরিদাসপুর (বেনাপোল) সীমান্তথেকে তাঁর মা নাছিমা বেগমের কাছে সাগরকে হস্তান্তর করেন। সাগর তালা মোবারকপুর কপোতাক্ষের বেড়িবাঁধ এলাকার মৃতঃ সামাদ মোড়লের পুত্র। সে জাস্টিস এন্ড কেয়ার নামের একটি আন্তর্জাতিক বে-সরকারী সংস্থার সহযোগিতায় দেশে ফিরতে পেরেছে বলে জানা গেছে। সাগরের মা দু’সন্তানের জননী নাছিমা বেগম (৩৬) জানান, প্রায় দু’বছর আগে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পরকালে পাড়ি জমায় স্বামী সামাদ মোড়ল। কন্যাকে পাত্রস্থ করেছেন কয়েক বছর আগেই। পুত্র সাগরকে নিয়ে বসবাস করেন তালা উপজেলা সদরের পাশ্ববর্তী মোবারকপুর গ্রামের কপোতাক্ষের বেড়িবাঁধের উপর।

অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে ছেলের লেখাপড়ার পাশাপাশি দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জুটত তাদের। উজ্জ্বল-শ্যামলা রঙের মায়াবী চেহারার টগবগে শিশু সাগর মোড়ল তালা পাবলিক হাইস্কুলের ৭ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করত। ২০১৬ সালের গত ৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) কাক ডাকা ভোরে অন্যের বাসায় কাজ করতে বেরিয়ে যায় নাছিমা। সকালে তার ছেলে সাগর মোড়ল প্রাইভেট পড়তে যায়। সেখানে থেকে ফিরে ভাতখেয়ে খাবারকেনার জন্য ১৮ টাকা নিয়েসে স্কুলের পথেবের হয়।সেই অবধি বাড়িফেরেনি সাগর। অনেকখোঁজাখুঁজি করে সাগরেরকোন সন্ধান নাপেয়ে তাঁর মা তালা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে, যার নম্বর ৩৪৯। এদিকেছেলের খোঁজে কাঁদতে কাঁদতে অভাগী মা যখন পাগল প্রায় তখন ভারত থেকে তাঁর কাছে একটিফোন আসে। উক্তফোনে হিন্দি কথা বলায় সে বুঝতে না পারায় স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষকের সরণাপন্ন হন। তখন সে জানতে পারে সাগর ভারতের মুম্বাইতে আছে।

সাগর এ সময় তাঁর মায়ের সাথে ফোনে মাঝে-মধ্যে কথা বলতো। পরবর্তীতে এক পুলিশ কর্মকর্তা, তালা থানার সাবেক ওসি মোঃ ছগির মিঞা, উত্তরণ পরিচালক শহিদুল ইসলাম, উত্তরণ কর্মকর্তা হরিদাস মালাকারের সহায়তায় জাস্টিস এন্ডকেয়ার নামের একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থা সাগরকে দেশে আনার জন্য আইনী প্রক্রিয়া চালিয়ে যান। অবশেষে দীর্ঘ ১৭ মাসের প্রহর শেষে মায়েরকোলে ফিরে আসে সাগর। শিশু সাগর মোড়ল জানায়, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের একদিন বিকালেসে বাড়ী হতে তালা উপজেলার ইসলামকাটি এলাকায় ঘুরতে যায়। হঠাৎ সন্ধ্যা হয়ে আসলে দু’জন লোক জোর করে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে ফেলে এবং চেতনানাশক ঔষুধ নাকে চেপে ধরলেসে অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর কিছু বলতে পারে না সে। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরলে সে বুঝতে পারে অপহরণকারীরা তাকে ভারতের মুম্বাইতে নিয়ে যায়। মুম্বাই রেলষ্টেশনে টহল পুলিশের সামনে পড়ে গেলে অপহরণকারীরা সাগরকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় বলে সে জানতে পারে। তখন হতভম্ব শিশু সাগর মোড়ল ভারতের মুম্বাই পুলিশের কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে।

এক পর্যায়ে মুম্বাই পুলিশ তাকে জেল খানায় এবং পরবর্তীতে মুম্বাইয়ের একটি শেল্টার হোমে রাখে। এ সময় মায়ের ফোন নাম্বর মুখস্থ থাকায় সাগর কর্তৃপক্ষে সহায়তায় তার মায়ের সাথে কথা বললে বিষয়টি জানাজানি হয়। মুম্বাইয়ের উমার খেড়ি নামের চাইল্ড শেল্টার হোমের এক কর্মকর্তা মুঠোফোনে জানান, বে-আইনীভাবে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করার অভিযোগে প্রয়োজনীয় আইনী প্রক্রিয়া শেষে সাগরকে বিএসএফ এবং বিজিবি’র যৌথ সমন্বয়ে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জাস্টিস এন্ড কেয়ার নামের একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থার বাংলাদেশ এরিয়া ম্যানেজার মোঃ

তারিকুল ইসলাম জানান, মুম্বাইয়ের উমার খেড়ি নামের শেল্টার হোমে সাগর মোড়লসহ বাংলাদেশী ৭ শিশু আটক ছিল, এর মধ্যে ২ জন কন্যাশিশু। সকল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শনিবার হরিদাসপুর সীমান্ত দিয়ে তাদেরকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে সাগরের মা স্বামী হারা নাছিমা বেগম একমাত্র পুত্রকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি ছেলেকে ফিরে পাবার জন্য বাংলাদেশ সরকার, জাস্টিস এন্ড কেয়ার সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।