জাতীয়
  শিশুটিকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখা হয় জানালায় ॥ গ্রেফতার ১
  01-10-2017



॥ মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন ॥

সাড়ে চার বছরের রুহি করিম বাবাকে ফোন করে বলেছিল, `আব্বু আমি স্কুল থেকে বাসায় এসেছি। নিচে খেলতে যাব। আম্মু যেতে দিচ্ছে না। তুমি আম্মুকে বলে দাও, আমাকে যেতে দিক।` এটাই ছিল বাবা রেজাউল করিমের সঙ্গে রুহির শেষ কথা। ফোনটি রেখেই সে বাসা থেকে নিচে নেমে যায় খেলতে। এর এক ঘণ্টা পর বাসা থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরের মধ্যে শিশুটির লাশ পাওয়া যায়। রুহিকে গলাটিপে হত্যার পর লুঙ্গি পেঁচিয়ে ঘরের জানালায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। নির্মম এ হত্যাকান্ড ঘটেছে রাজধানীর কদমতলীর দক্ষিণ মাতুয়াইল এলাকায়। হত্যায় জড়িত সন্দেহে হাসিবুর রহমান হাসিব নামে এক কিশোরকে গ্রেফতার করেছে কদমতলী থানা পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুহিকে হত্যার কথা স্বীকার করে হাসিব বলেছে, রুহিসহ একই এলাকার চার শিশু তার কাছে আইসক্রিম খেতে চায়। সে দিতে রাজি না হওয়ায় তিন শিশু চলে গেলেও রুহি আইসক্রিমের বায়না ধরেই থাকে।

সে ভাবে, রুহিকে টিনের ঘরে আটকে রেখে তার বাবার কাছে মুক্তিপণ হিসেবে কিছু টাকা আদায় করবে। এ ভাবনা থেকেই রুহিকে রাস্তা থেকে ওই টিনশেড বাড়ির মধ্যে নিয়ে যায়।
সেখানে রুহি চিৎকার করলে গলাটিপে ধরে হাসিব। কিছুক্ষণ পরই শিশুটি মারা যায়।

কদমতলী থানার ওসি বলেন, স্বজনরা শিশুটিকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ওই পরিত্যক্ত টিনের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

শিশুটির বাবা রেজাউল করিম বলেন, তার কোনো শত্রু নেই। হাসিবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। দক্ষিণ মাতুয়াইলের ৩ নম্বর গলির পাঁচতলা একটি বাড়ির তৃতীয় তলায় দুই মেয়ে ও স্ত্রী সানজিদা পারভীনকে নিয়ে ভাড়া থাকেন রেজাউল। ছোট ছেলের বয়স ১ বছর ৪ মাস। রেজাউল জানান, তিনি মাতুয়াইল হাসপাতালের ক্যান্টিন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। মা সানজিদাকে না জানিয়ে দুপুর ১২টার দিকে নিচে খেলতে চলে যায় সে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সানজিদা তাকে ফোনে জানান, মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সানজিদা বাসা থেকে নিচে নেমে প্রতিবেশীদের সহায়তায় আশপাশে খোঁজাখুঁজি করেন। তখন এক নারী প্রতিবেশী জানান, হাসিব নামে এক যুবকের সঙ্গে টিনশেডের পাশে পানি খেছিল রুহি।
সন্দেহ হওয়ায় দুপুর ১টার দিকে টিনশেডের একটি ঘরে খোলা দরজা দিয়ে এক নারী প্রতিবেশী ঢোকেন। তখন ঘরের জানালার সঙ্গে শিশুটি গলায় লুঙ্গি পেঁচানো অবস্থায় ঝুলছিল। মেয়েকে সেখান থেকে নামিয়ে মাতুয়াইল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ছোট্ট মেয়েটিকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা-বাবাসহ স্বজনরা। ফুটফুটে শিশুটির চলে যাওয়া যেন কেউ মানতে পারছেন না। আর্তনাদ করতে থাকেন সবাই। পুরো হাসপাতালে নেমে আসে শোকের ছায়া।