সম্পাদকীয়
  আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন ন্যায় বিচারের মাধ্যমে গুম, খুন, অপহরণ বিতর্কের অবসান হোক
  01-07-2017


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুম বিভিন্ন কারণে হয়। ব্যবসায়িক কারণেও অনেক সময় হয়। এমন অনেক গুমের ঘটনা আমরা তদন্ত করে বের করেছি। এই রিপোর্টটা সঠিক নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ম মেনেই বিএনপির অনেক নেতাকে ধরেছে। তা করেছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই। তিনি বলেন, শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীই নয়, সুনির্দিষ্ট মামলার ভিত্তিতে আইন মেনে কাউকে আটক করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তারপরও কোনো ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।
নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত দেড় বছরে বাংলাদেশে ১৩৮ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই ৪৮ ব্যক্তি নিখোঁজ হন। ২০১৩ সাল থেকে বিরোধী দলের কর্মীসহ কয়েকশ ব্যক্তিকে অবৈধভাবে আটক করেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। তাদের গোপন স্থানে লুকিয়ে রেখেছে তারা। গোপন স্থানে আটকে রাখার সময় নির্যাতনও করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়ার কথা বলেছে এইচআরডব্লিউ। এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, নিখোঁজের বিষয়ে যথার্থ তথ্য থাকা সত্ত্বেও সরকার আইনের তোয়াক্কা না করে এই ভয়ঙ্কর চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। লোকজনকে আটক, তাদের দোষ ঠিক করা, শাস্তি নির্ধারণ, তাদের বাঁচিয়ে রাখা-না রাখার সিদ্ধান্তের পূর্ণ স্বাধীনতা যেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য, প্রত্যক্ষদর্শীসহ মোট ১০০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে এইচআরডব্লিউ। প্রতিবেদনে অভিযোগ ও আইনি কাগজপত্র যুক্ত করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউ বলছে, অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ’র দেয়া তথ্যের প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, গুম-খুন নিয়ে করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এই প্রতিবেদন আমরা স্বীকার করছি না। প্রত্যাখ্যান করছি।
গুম বিভিন্ন কারণে হয়। ব্যবসায়িক কারণেও অনেক সময় হয়। এমন অনেক গুমের ঘটনা আমরা তদন্ত করে বের করেছি। এই রিপোর্টটা সঠিক নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ম মেনেই বিএনপির অনেক নেতাকে ধরেছে। তা করেছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই। তিনি বলেন, শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীই নয়, সুনির্দিষ্ট মামলার ভিত্তিতে আইন মেনে কাউকে আটক করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তারপরও কোনো ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল এইচআরডব্লিউ। তাদের বর্তমান প্রতিবেদনটিও সেই প্রচারণার অংশ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশিত রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের বেঁচে থাকা, নিরাপদে জীবনযাপন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক তদন্ত ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। বর্তমানে বাড়িতে বাড়িতে মৃত্যুভয়, গুমের ভয়, অপহরণের ভয়, নিখোঁজের ভয়, বিনা বিচারে আটকের ভয় নিয়ে গভীর আশঙ্কায় মানুষ জীবনযাপন করছে। দুঃশাসনের বিষাক্ত ছোবলে বিরোধী দলের নেতা থেকে শুরু করে লেখক, কবি, সাহিত্যিক, মানবাধিকার কর্মী, শ্রমিক নেতা, পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষ ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে তাদের গোপন স্থানে আটকে রাখা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্দেশ্য করে এইচআরডব্লিউ কি বলেছে বা সরকারের পক্ষ থেকে কি বলা হয়েছে অথবা বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামীলীগকে কি বলা হয়েছে আমরা সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। আমরা মনে করি একটি সংসারে কর্তার যে ভূমিকা  একটি স্বাধীন দেশের নির্বাচিত সরকারেরও সেই ভূমিকা। সংসারের সদস্যদের সুখ শান্তির জন্য কর্তা যে ভূমিকা অবলম্বন করেন তদ্রƒপ দেশের জনগনের সুখ শান্তির জন্যও সরকার সেই ভূমিকা অবলম্বন করবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই আমরা চাই দেশের অভ্যন্তরে খুন, গুম, ধর্ষণ তথা সবধরনের অরাজগতা সরকার দক্ষ হাতে দমন করে আমাদের দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে রূপান্তরিত করবে। কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তাকে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী গ্রেপতার করে আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে তাকে প্রাপ্য সাজা প্রদান করবে। তবেই সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। আগামী প্রজন্মকে উপহার দিবে একটি সোনালী সুখি সমৃদ্ধশালী সমাজ তথা স্বপ্নের দেশ।