সাক্ষাতকার
  মানবাধিকার খবরকে একান্ত সাক্ষাৎকারে মোস্তফা জামান আব্বাসী আমার ইচ্ছে অধিকার বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাড়ানো
  01-07-2017

মুস্তাফা জামান আব্বাসী অনবদ্য সৃষ্টির নাম। অসাধারণ এক গুনের অধিকারী। তিনি ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া গানের স¤্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদের পুত্র। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, সঙ্গীত শিল্পী, গবেষক, মঞ্চ অভিনেতা, ও শিক্ষক। সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছে এর মধ্যে সংগীতের বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক সহ আব্বাস উদ্দিন স্বর্ণ পদক, নাট্যসভা পদক, বেংগাল সেন্টারি পদক, এপেক্স ফাউন্ডেশন পদক, মানিক মিয়া পদক, সিলেট সঙ্গীত পদক, লালন পরিষদ পদক সহ বিভিন্ন কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ পদকের সম্মাননা তাঁর প্রাপ্তিতে রয়েছে। বর্তমানে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির কাজী নজরুল ইসলাম এবং আব্বাস উদ্দিন “রিসার্চ এন্ড ষ্টাডি সেন্টার” এর ‘সিনিয়র রিসার্চ স্কলার’ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
মানবাধিকার খবর ঃ আপনার জন্মস্থান কোথায় ও আপনার সম্পর্কে জানতে চাই?
মোস্তফা জামান আব্বাসী ঃ আমার জন্ম ৮ই ডিসেম্বর ১৯৩৬ সালে যশোরের কোচ বিহারে। আমার পিতা সঙ্গীত শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমেদ। আমরা ভাই বোন তিনজন ভাই সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল ও বোন শিল্পী ফেরদৌসী রহমান। আমার দু’টি সন্তান সরমিনী আব্বাসী ও সামিরা আব্বাসী। আমার স্ত্রী আসমা আব্বাসী।
মানবাধিকার খবর ঃ আপনার সঙ্গীত শিক্ষা ও লেখালেখি সম্পর্কে জানতে চাই?
মোস্তফা জামান আব্বাসী ঃ সঙ্গীত আমার আত্মায় ও রক্তে মিশে আছে। সঙ্গীতের প্রথম তালিম আব্বার কাছ থেকে; এরপর ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সংগীতের স¤্রাট “উস্তাদ মুহাম্মদ হুসাইন খসরু ও উস্তাদ গুল মুহাম্মদ খান” এর কাছ থেকে সঙ্গীত শিক্ষা নিই। আর লেখালেখি তো করে যাচ্ছি। আল কোরআন ব্যাখ্যা সহ অনুবাদ করেছি ৭০০ পৃষ্ঠায়। বর্তমানে হাত দিয়েছি ১২০০ পৃষ্ঠায় ব্যাখ্যা সহ আল কোরআন অনুবাদে। আর আমার লেখায় ৫৪টি বই বের হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ্য কবিতার বইয়ের মধ্যে “জালাল উদ্দিন রুমী” নিফারী ও “সুলতা বাহু” প্রমূখ, প্রবন্ধে রয়েছে আব্বাস উদ্দিন আহমেদ, মানুষ ও শিল্পী, কাজী নজরুল ইসলাম, মানুষ এবং কবি ও পুড়িব একাকী। এছাড়া ভাওয়াইয়া সংগীতের উপর দু’টি বই যেগুলোতে ১২০০ গানের সংগীতের নোট দেয়া আছে। “তুমি আমার” নামে একটি উপন্যাস লিখছি। আরো বিভিন্ন রকমের লেখালেখি চলছে।
মানবাধিকার খবর ঃ বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?
মোস্তফা জামান আব্বাসী ঃ মানুষকে মর্যাদা দিয়েছেন আমাদের প্রভু কিন্তু আমরা মানুষরাই সেই মর্যাদা ক্ষুন্ন করি। মানুষকে বিবেচনা করি অর্থ দিয়ে, আমরা যখন ধনী হয়ে যাই গরীবদের দিকে নিচু নজরে তাকাই তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করিনা তাদেরকে গাল মন্দ করি। কি অফিস কি রাস্তা যেখানেই পাই অমর্যাদা করি। আমাদের জীবনে তাদেরকে যা দেই তাতে ভালবাসার স্থান নেই, অথচ আমরাই সেই জাতি যার নবী (সা.) বলেছিলেন হে আল্লাহ আমাকে গরিব থাকতে দিও, আমি যেন গরীব হিসেবে মারা যাই। দারিদ্র যেন আমার মুকুট হয়। উনার জীবন আদর্শ থেকে আমরা কত দূরে। আজ যারা আমাদের অধীনে কাজের লোক হিসেবে শ্রম দিচ্ছে। ছেলে হউক বা মেয়ে তারা কি আমাদের সম্মান, ¯েœহ পায়? না তারা ভাল ব্যবহার পায় না ! তাদের ন্যায্য পাওনাটুকু পায়না ! অধিকার তো দূরের কথা।
  আমরা কি শ্রমিকদের ন্যয্য মূল্য দিচ্ছি আমরা   কি তাদের মানবাধিকার সংরক্ষণ করতে পারছি। অথচ সভ্যতার বিকাশে শ্রমিকের অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তারাই পায়না। শ্রমের মর্যাদা। অবহেলায় কাটে তাদের দিন। প্রাপ্য মর্যাদাটুকু মেলেনা তাদের ভাগ্যে। তাদের শ্রমের প্রাপ্য মর্যাদা আদায়ের জন্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবিদের যেমন রিক্সাচালক থেকে শুরু করে গাড়ীর হেল্পার, মুজুড়, কর্মচারী, গার্মেন্টস্ শ্রমিকদের সাথে তাদের মালিক কর্তৃপক্ষ অথবা তাদের কাছ থেকে যারা শ্রম নিচ্ছে, তারাই এই শ্রমজীবিদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে, শ্রমিকদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত শ্রম আদায় করে অথচ প্রাপ্য পাওনাটুকু দেয়না।
আল্লাহ তায়ালা কোনো সৃষ্টিকেই তার ধারণ ক্ষমতার বাইরে কোনো কাজকর্মের নির্দেশ চাঁপিয়ে দেননা, এটা যদি আল্লাহর নীতি হয় তবে আমরা কেন এর বাইরে চলি। শ্রমিক অধিকারের জন্য যিনি জীবনব্যাপী সংগ্রাম করেছেন মুহাম্মদ (সা.) শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় উম্মতকে উদ্দেশ্য করে বলেন তোমরা শ্রমিককে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ দিওনা যদি কখনো এমনটি করতেই হয় তবে তুমি নিজে তাকে সাহায্য করবে। মজদুর শ্রমিকদের মৌলিক সমস্যা এ দুটোই। তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করানো হচ্ছে অথচ তাদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। শ্রমিকের অধিকার আদায় সম্পর্কিত হাদিসে আল্লাহ বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি কোনো মজদুরকে শ্রমিক নিয়োগ করে তার কাছ থেকে পূর্ণ কাজ বুঝে নিল কিন্তু তাকে তার মজুরি দিল না, কাল কেয়ামতের ময়দানে আমি এ ধরনের ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব’। এ থেকে বুঝা যায় শ্রমিকদের প্রতি ইসলামের কতটুকু দায়িত্ব রয়েছে। অথচ আজ আমরা এ সভ্য সমাজে বাস করেও শ্রমিকদের মর্যাদা, প্রাপ্য অধিকার দিতে পারছিনা। যতদিন পর্যন্ত শ্রমিক মালিকের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ উন্নত না হয় ততদিন শ্রমিকের অধিকার ও আদায় হবে না। রসুল (সা.) যে শ্রমনীতি ঘোষণা করেছেন তা বাস্তবায়ন হলে সমাজের উন্নতি হবে, শান্তি আসবে। যদি আমরা মুসলমান হই, নবীর উম্মত হই তাহলে কি করতে হবে? তাদের ঘাম শুকানোর আগেই তাদেরকে নায্য মজুরি দিতে হবে এটাই মানবাধিকারের প্রথম শিক্ষা।
মানবাধিকার খবর ঃ আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মোস্তফা জামান আব্বাসী ঃ আসলে পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাজ তো হয় না। আমার ইচ্ছে অসহায়, দুস্থ্য, দুঃখী, অধিকার বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাড়ানোর, সঙ্গীতকে সমৃদ্ধি করা। লেখালেখি করা। সমজের যেন উন্নতি সাধন হয় সে জন্য ভাল কিছু করার চেষ্টা করে যাব।
মানবাধিকার খবর ঃ আপনার মূল্যবান সময়টুকু আমাদের দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোস্তফা জামান আব্বাসী ঃ তোমাদের মানবাধিকার খবর পত্রিকার সকলকে রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা ও আর্শিবাদ।
সাক্ষাৎকার গ্রহনে ঃ মানবাধিকার
খবর’র নিজস্ব প্রতিবেদক রুবিনা শওকত উল্লাহ।