সারাদেশ
  মানবিক ও মানবেতর জীবন যাপন আজাদ রুহুল আমিন
  01-07-2017


বাগেরহাট পৌরসভার অভিজাত এলাকার লিচুতলা রোডের স্থায়ী বাসিন্দা রমারানী দত্ত তার পরিবার পরিজন নিয়ে মানবিক ও মানবেতর অসহনীয় বন্দী অবস্থায় জীবন যাপন করছেন।
প্রাপ্ত সূত্র থেকে জানা যায় প্রাথমিক ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (পিটিআই) রমারানী দত্তের নিজ পৈতৃক সম্পত্তি পিটিআই কর্তৃপক্ষ সাড়ে তিনশতক জমি বেশি দখলে নিয়ে সম্পূর্নভাবে প্রাচীর বেষ্টনী দেওয়ায় এ পরিবারটি কয়েক যুগ ধরে তাদের প্রতিবেশিদের বাড়ির ভিতর দিয়ে যাতায়াত করলেও সেখানের পথটিও পাকা প্রাচীর বেষ্টনীর বন্দবস্ত হিসেবে কাজ শুরু করলে এ হিন্দু পরিবারটি এখন অবরুদ্ধ এবং মানবিক ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্তমানে এ পথ হতে একজনের বেশি বের হতে পারে না। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটলেও এখান থেকে বের হওয়া দুঃসাধ্য। জরুরী ভিত্তিতে কোন প্রতিবেশিরা তাৎক্ষনিকভাবে এখানে প্রবেশ করতে পারবে না।
বর্তমান মৌসুমে বিরামহীন বর্ষনপাতে আঙ্গিনা তলিয়ে বাড়িটিও নিমজ্জিত হলে কৃত্রিম বন্যার কবলের শিকার বছরের পর বছর এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পানি নিষ্কাশনের জন্য কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। পিটিআই কর্তৃপক্ষ ৪৬৯ দাগের দু`টি রাস্তা যার একটি লিচুতলা রোড থেকে আমলাপাড়া সংযোগ সড়ক এবং আরেকটি পিটিআই সুপারের কোয়াটার থেকে বর্তমান বিএমএ ভবন পর্যন্ত এ দু’টি রেকর্ডিও রাস্তা বন্ধ করে দখল নিয়ে আছে।
১৯৬৩ সালে পিটিআই কর্তৃপক্ষ ৩২ শতক জমি অধিগ্রহন করেন। ৩৫ বছর পূর্বে পিটিআই সীমানা প্রাচীর দেওয়ায় তৎকালীন মহাকুমা প্রশাসক পুরাতন সরকারী আনসার এ্যাডজুটেন্ট অফিসের ভিতর দিয়ে চলাচলের রাস্তা দেন। পরবর্তীতে সরকারী অফিস ব্যাক্তি মালিকানায় চলে যাওয়ায় যাতায়াতের পথটি সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে পড়ে।
মনিন্দ্রনাথের স্ত্রী রমারানী দত্ত ও তার পুত্র বিশ্বজিৎ দত্ত বাগেরহাট পৌরসভায় প্রমানাদি সাপেক্ষে জমি ফেরত অথবা চলাচলের রাস্তা ফিরিয়ে দেবার জন্য একটি আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
   তিনি বাগেরহাট প্রাইমারী ট্রেনিং ইন্সটিটউট (পিটিআই) সুপার মহোদয়কে আবেদনকারীর আবেদন সাপেক্ষে ১৫৬নং খতিয়ানের ৫৫৩ নং দাগের উত্তর সীমানার শেষ প্রান্ত হতে একটি চলাচলের জন্য রাস্তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহন করার জোর অনুরোধ করেন। এ প্রসঙ্গে বাগেরহাট মেয়র পিটিআই এর নিরাপত্তার প্রয়োজনে নিরাপত্তা প্রাচীর আবেদনকারী নিজ খরচে নির্মান করে দিতে বাধ্য থাকবে যাতে পিটিআই এর নিরাপত্তার কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়। কিন্তু এটি পিটিআই কর্তৃপক্ষ মানতে নারাজ।
এরপর আবেদনকারী রমারানী দত্ত সচিব ভূমি মন্ত্রনালয় এবং গনশিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রনালয়ে জায়গা ফেরত অথবা চলাচলের রাস্তা পাবার প্রয়াসে আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে উচ্চপদস্ত কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ শফিকুল ইসলাম, বাগেরহাট সদর সহকারী কমিশনার ভূমি তাসমিন ফারহানা ও বাগেরহাট সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল মান্নান সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে মন্ত্রনালয়ের সুনির্দিষ্ট স্বারক অনুযায়ী ম্যাপ তৈরী করে সম্পূর্ন এক মত পোষন করে রমারানী দত্ত যাতে বাড়ি হতে চলাচলের রাস্তা ফেরত পেতে পারে তার জন্য সুপারিশ করেন।
উক্ত দু`টি মন্ত্রনালয় থেকে পিটিআই কর্তৃপক্ষকে বাদির স্বপক্ষে মানবিকতা বিবেচনা করে চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন এবং প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিলে পিটিআই কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার স্বার্থে জায়গা না দেয়ার সুপারিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ পর্যায়ে পুনরায় রমারানী দত্তের পুত্র বিশ্বজিৎ দত্ত হাইকোর্টে জায়গা ফিরে পাবার জন্য রিটপিটিশন দাখিল করেন। বিজ্ঞ আদালত এ সংক্রান্তে পুনরায় দু`টি মন্ত্রনালয়ে বাদীকে আবেদন করার নির্দেশনা প্রদান করেন। সে মোতাবেক অদ্যাবধি পূর্বের যে অবস্থা সেই তিমিরেই আছে।
আবেদনকারী বিশ্বজিৎ দত্ত ঢাকায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি জানান অন্য শরীকদের জায়গা থেকে চলাচল করা অত্যন্ত লজ্জাজনক হওয়ায় তার বাবা মাকে ঢাকায় আনলেও তারা সেখানে থাকতে চান না।
এবং তিনিও বাড়িতে আসতেও অসহনীয়তা অনুভব করেন। তিনি বলেন, পিটিআই এর শেষ সীমানায় পরিত্যক্ত জায়গা পড়ে আছে। সেটি দিলে তাদের নিরাপত্তার কোন ক্ষতি হয় না। বাইরের প্রতিবেশীরা তাদের বাড়ির পুকুরের মাছ ধরে নিলেও তারা নির্বিকার। ক্রমশ প্রতিবেশীরা তাদের জমি দখলের চেষ্টায় রান্নাঘর তৈরী করলে বলতে গেলে সাময়িক রাস্তা বন্ধ করে প্রতিনিয়ত হুমকি প্রদান করছে।
বৃদ্ধ বয়সে রমারানী দত্ত তার স্বামী মনিন্দ্রনাথ দত্ত ভিটেমাটি ছেড়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তাদের অনুভূতি এরকমই বাগেরহাট জেলা প্রশাসক উর্ধ্বতন ভূমি,গনশিক্ষা মন্ত্রণালয় যেখানে আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে অত্যন্ত আন্তরিক। সেখানে পিটিআই কর্তৃপক্ষ কি সরকারের বাইরের অংশ? তাদের দম্ভটাই এতই প্রবল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে মানুষকে কি মানবতা বিপন্ন হোক এ শিক্ষা দেওয়া হয়?
এ ব্যাপারে এ হিন্দু পরিবারের পক্ষে মানবিক ও মানবতা বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা,জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও মাননীয় প্রাক্তন সমাজকল্যানমন্ত্রী ডা. মোজাম্মেল হোসেন এমপি, বাগেরহাট সদর এমপি এ্যাড. মীর শওকত আলী বাদশা ও বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমানের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন যাতে তারা তাদের ন্যায্য পৈতৃক সম্পত্তি পুনরায় ফেরত পেতে পারে এবং চলাচলের জন্য উপযোগী রাস্তার ব্যবস্থা সম্পন্ন করা যায়।