পর্যটন
  বেড়াতে যাইতে পারেন থাইলেন্ড
  03-06-2017


বিশ্বের অন্যতম পর্যটন সমৃদ্ধ দেশ থাইল্যান্ড। সাজানো গোছানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর দেশটি। নয়নাভিরাম দেশটি দেখার জন্য আমি গত ২০১৫ সালে ১৭ ডিসেম্বরে উড়ে যাই থাইল্যান্ড। একজন পর্যটক হিসাবে চেষ্টা করি প্রতিবছর কোন না কোন দেশ বা দেশের যে কোন পর্যটন এলাকায় ঘুরে আসতে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সৃষ্টিকর্তা কোথায় কি বানিয়ে রেখেছে তা দেখে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা  জানানো উচিত প্রত্যেকটি মানুষের। আমি ও তার ব্যতিক্রম নই। যা হোক, থাই দূতাবাসের ভিসার আনুষ্ঠানিকতা শেষে

 

 

বাংলাদেশ বিমানের থাইল্যান্ডের সূবর্ণভূমি বিমান বন্দরে অবতরন করি। উক্ত বিমানবন্দরটি বিশ্বের অন্যতম নান্দনিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠিকতা শেষে সরাসরি বাসে চলে যাই পাতায়া সমূদ্র সৈকত। হোটেলে রাত্রিযাপন করে, পরের দিন সকালে চলে যাই পাতায়া বিচ। যেখানে দেখা গেল আমার মত হাজার হাজার পর্যটক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসে বীচে সূর্য¯œান করছে। সেখানে নিরাপত্তায় কোন অভাব নেই। যার কারনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় করছে। এর পর চলে আসি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে। ব্যাংকক শহরে হোচেল এ্যাম্বাসেডরে পরিচয় হয় বাংলাদেশী যুবক শফি জামালের সাথে। তিনি ব্যাংককের গাইড লাইন হলিডে ট্যুর নামক একটি ট্যুরিজম কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি আমাকে সময় ও শ্রম দিয়ে ব্যাংকক শহর ও বিভিন্ন পর্যটন এলাকা ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করেন।
মসৃণ রাস্তায় চলতে লাগলো আমাদের গাড়ী। দু’পাশে সুরমা অট্টালিকা, ফ্লাই-ওভার, বাগান- সব মিলিয়ে এলাম নতুন দেশে। পথ চলতে চলতেই দেখতে লাগলাম বাইওক স্কাই হোটেল (পৃথিবীর উচ্চতম বাড়িগুলির একটি), মনুমেন্ট, রাজা নবম রামের প্রাসাদ ইত্যাদি। রাজা নবম রামের রাজপ্রাসাদ চত্বরের মধ্যে ‘চিত্রদা প্যালেস’ খুবই সুন্দর। একশ একরেরও বেশি জমি জুড়ে গড়ে উঠেছে ব্যক্তিগত মালিকানা ভিত্তিক এই সম্পত্তি। রাজা নবম রামের রাজপ্রাসাদের কাছেই ব্যাংককের চিড়িয়াখানা। এখানকার ওরাং-ওটাং এর কান্ডকারখানা দেখার মতো।
এরপর আমাদের গন্তব্য ছিল ‘ডুসিট প্যালেস’। উনিশ শতকের প্রথম দশকে বানানো এই প্রাসাদ। এই চত্বরের ‘ভিমানমেক’ ম্যানসন হল পৃথিবীর বৃহত্তম সোনালী কাঠের স্বর্গের আভাস এখানকার বাগানে পা দিলেই পাওয়া যায়। এখানকার মিউজিয়াম সত্যিই দেখার মতো। কি নেই এই মিউজিয়ামে। হাতির দাঁতের নানা জিনিসে ভর্তি আইভরি রুম, রাজাদের ব্যবহৃত পোসিলিনের জিনিস, পিয়ানো, আসবাবপত্র, পালকি আরো অনেক কিছু। টুক্ করে দেখে নিলাম থাই কাপড়ের ‘এক্সিবিশন হল’। ‘ভিমানমেক’-এর খুব কাছেই থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট। ইতালিয়ান মার্বেল দিয়ে তৈরি। এখানকার মুরাল দেখবার মত।
আমাদের এর পরের গন্তব্য ‘গ্র্যান্ড প্যালেস’। গ্র্যান্ড প্যালেসের’ স্থাপনা শুরু হয় রাজা প্রথম রামের আমলে ১৭৮২ খৃষ্টাব্দে। এখানেই আছে এমারেল্ড বুদ্ধের বিখ্যাত মূর্তি। এমারেল্ড বুদ্ধের গ্রীষ্মকালীন পোশাক নীল। বছরের বিভিন্ন ঋতুতে পোশাকের রং পাল্টানো হয়। চিয়াং রাই-এর স্তূপ থেকে সবুজ রঙের জেড পাথরের এমারেল্ড বুদ্ধকে ১৪৩৪ খৃষ্টাব্দে পাওয়া যায়। এই মনেস্ট্রির মধ্যে মুরালের অনন্য কাজ দেখা যায়। ভিতরের আলো-আবছায়া পরিবেশ মনকে যে কোন সুদূর অতীতে নিয়ে যায়। সময় অল্প তাই নিজের মনকে নিজেই ধমকে  উঠে বাকি স্ত’প ও প্রাসাদ দেখতে শুরু করলাম। এত রঙের বাহার চারিদিকে যে মনেই হয়না পৃুথবীতে ’মন-খারাপ-করা বিকেলের’কালো মেঘ থাকতে পারে। গাঢ় সুনীল আকাশও আমাদের সারাদিনের বেড়ানোর সঙ্গী।
রয়েল প্যালেস থেকে একটু দূরেই বুদ্ধের মুন্দরে গেলাম। মন্দিরের পোষাকি নাম ’ওয়াট পো’। শায়িত বুদ্ধ বা রিক্লাইনিং বুদ্ধ’র ছবি আগেই দেখেছি (কিন্তু এর বিশালত্ব! সেটা চোখের সামনে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মন্দির চত্বরও বিশাল। এই মন্তির থাইল্যান্ডের প্রাচীনতম মন্দিরগুলির অন্যতম। রাজা তৃতীয় রামের সময়কালে এইমন্দিরটি নতুন করে সাজানো হয়। প্রাচীন থাই-মেডিসিনে’র আঁতুড়ঘর হল এই মন্দির-চত্বর। মন্দিরের ভেতরে দানপাত্রে পয়সা ফেলার অদ্ভুত আওয়াজ। থাম ও দেওয়াল কারুকার্যম-িত। বুদ্ধ পদক্ষিণ করে বেরিয়ে দেখি, দিন প্রায় শেষ। মন্দিরের বাইরে অনেকেই ঘুরে ঘুরে ছবি,ছাতা বিক্রি করছে আকারে-ইঙ্গিতে, ভঙা-ভাঙা ইংরেজিতে চলছে দরদাম। আস্তে আসেÍ দোকানপাট দেখতে দেখতে এলাম ৎধসধ ৮ঃয নৎরফমব’এর কাছে। সেখান থেকে শুরু চাউ ফ্রায়া নদীতে ভ্রমণ। এর জন্য আগে থেকেই ই-মেল পাঠিয়ে যোগাযোগ করে রেখেছিলাম। দুই তীরে ঝলমলে আলোর মাঝে, নদীর প্রাণ জুড়ানো হাওয়ায় কোথা থেকে যে দু-ঘন্টা কেটে গেল বোঝাই গেল না। ব্যাংকক শহরে বোধহয় রাত্রি নামলÑঅন্তত আমার জন্য। আসলে ব্যাংকক শহরে রাত্রি নামে না। কিনÍু আমার যে কাল সকালেই অন্য দেশ, অন্য কোনোখানের জন্য যাত্রা শুরু।
কখন যাবেন ঃ সবসময় একই রকম আবহাওয়া থাকার কারনে যে কোন সময় থাইল্যান্ড ভ্রমন করা যায়। কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে থাই এ্যাম্বাসির ভিসার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিমানযোগে ব্যাংকক। ব্যাংকক থেকে পর্যটন স্থান পাতায়া, ফুকেটসহ বিভিন্নস্থানে বাস ও বিমানে যাওয়া যায়।
থাকার ব্যবস্থা ঃ ব্যাংককের সুকুমবিত এলাকায় ভাল মানের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ব্যাংককে বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন সুন্দর সুন্দর রিসোর্ট ও হোটেল রয়েছে।
প্যাকেজ ব্যবস্থা ঃ ঢাকা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসহ অসংখ্য ট্যুরিজম কোম্পানী সারা বছর প্যাকেজের ব্যবস্থা করে থাকে।
ঢাকা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস-৯৫৮৫১৪০, মাহিমা ট্যুরস-০১৯৭১৩১৭৩৩৬ সহ আরো অনেকে।
লেখক ঃ সম্পাদক, মানবাধিকার খবর।