মানবাধকিারের কথা
  নারী ও শিশু উদ্ধারে অন্যতম সহযোগিতা দান কারী জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের সাথে সম্পাদক
  01-05-2017

গঠনা বিবরণ ও সেচ্ছাসেবী মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের এবং মানবাধিকার খবরের পক্ষে তথ্যানুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, ভারতের পশ্চিম বঙ্গের দঃ ২৪ পরগনা লক্ষীকান্তপুরে হাসুস সেফ হোমে আটক ঢাকার কিশোর ছামিরুল(১৩) কে উদ্ধার করতে গিয়ে শিশু সুমন(১০) এর সন্ধান পাওয়া যায়। হোম কর্তৃপক্ষ জানায় এই হোমে বাংলাদেশী আরো একটি শিশু রয়েছে। তার বাড়ী খুলনা। হাসুস সেফহোম কর্তৃপক্ষ আমার সামনে গত ৪ এপ্রিল সুমনকে হাজির করালে সে জিজ্ঞাস াবাদে জানায় তার পিতার নাম মুকুল, মায়ের নাম সুরমা, নানার নাম বাবু, নানীর নাম মনোয়ার বেগম। এছাড়া সে কাহারো নাম বলতে পারছেনা। এমনকি তার একটি ছোট ভাই আছে তার নামও বলতে পারছেনা। তার মনে নেই। তার ভাষ্যমতে তাদের বাড়ীর কাছে লবন কারখানা ছিল, সেটা ভেঙে কাঠের চুলার কয়লা বানিয়ে বিক্রি করা হতো অথবা ইটের ভাটা হতে পারে। এছাড়া তার কিছুই মনে নেই। ধারনা করা হচ্ছে সুমনের ঠিকানা খুলনায় লবনচোরা থানা এলাকা হতে পারে।
সুমন প্রতিবেদককে জানায় যে, ২ বছর আগের কথা তখন তার বয়স ৮ বছর। অভাবের সংসার, তার মা-বাবা ছিল খুবই গরীব। তাকে ঠিকমত খেতেও পরতে দিতে পারত না। সে কখনও স্কুলে যায়নি। পরিচিত এক লোকের মাধ্যমে মা-বাবা আমাকে দিয়ে অন্যের বাড়ীতে কাজ করার জন্য পাঠায়। তার নাম আমার মনে নেই। সে আমাকে নিয়ে আসে ভারতে। আমি তখন বুঝতে পারিনি। এরপর আরেকটা লোক ট্রেনে করে আমাকে নিয়া আসে কাশ্মীর। আমি ওখানে এক বাসায় কাজ করি। আমাকে অনেক কষ্টের কাজ করতে হতো। আমাকে ঠিকমত খেতে দিতনা। অনেক সময় না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকতাম, বাড়ীর লোকজন আমাকে প্রায়ই মারত, গালাগালি করত। আমি কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ঐ বাসা থেকে পালিয়ে যাই। কাশ্মীরেই একটা পত্রিকা অফিসে কাজ করি। সেখানে শুধু পত্রিকা বিক্রি করতাম। ওখানে বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা। আমি সহ্য করতে পারতাম না। কেউ আমাকে গরম কাপড়, জ্যাকেট কিনে দিতনা। আমি সেখানে থেকে রীতিমত হিন্দী ভাষা শিখে ফেলি। পাঞ্জাবের এক লোক আমার কষ্ট দেখে ২০০ রুপি দেয়। আমি ঐ টাকা নিয়ে মায়ের কাছে বাংলাদেশে ফেরার চিন্তা করি। লোকজনের কাছে জিজ্ঞাসা করতে করতে ট্রেনে করে কলকাতার শিয়ালদহ চলে আসি। ট্রেনে বসেই টাকা শেষ হয়ে যায়। বিস্কুট, কলা আর পানি খেয়ে আমি কোনমতে শিয়ালদহে পৌছাই। শিয়ালদহে এসে আমি ক্ষুধায় যন্ত্রনায় অসুস্থ হয়ে পরি। কাহারো কাছে কিছু খেতে চাইলে বা টাকা চাইলে কেউ দিতে চায়না। ক্ষুধায় হাটতে পারতাম না মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম। পরে জানতে পারি পুলিশ আমাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে সুস্থ করে। আমাকে পুলিশ জিজ্ঞাসা করে বাড়ী কোথায়। আমি তখন বলি বাংলাদেশের খুলনায়। পুলিশ কয়েকদিন পর আমাকে এই হোমে দিয়া যায়। আমি এখানে ভাল আছি। কিন্তু আমি আমার মা-বাবার কাছে যেতে চাই। আমি বাংলাদেশের লোক আমাকে কাছে পেয়ে সুমন অনেক আবেগময় ও কষ্টের কথা বলে। তখন ঐ হোমের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। সবার চোখে পানি চলে আসে। হোম কর্তৃপক্ষ জানায় সুমন এর আগে সুমন কখনও আমাদের এত পরিমান তথ্য দেয়নি। এসময় হোম সুপারিন্টেড বাবু সোনা পাইক, কাউন্সিলর তাপসী সহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীগন উপস্থিত ছিলেন। তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, কলকাতার শিয়ালদহের রেলওয়ে, পুলিশ গত ২০ মার্চ সকাল ১১টায় ৪নম্বর প্লাটফর্ম থেকে উদ্ধার করে তাকে চাইল্ড লাইন কলকাতার নিকট হস্তান্তর করে। এ ব্যাপারে ঐদিন রেলওয়ে পুলিশের এলএসআই তনুশ্রী বিজানী একটি জিডি করে। যার নং-১৭৩৩। এরপর তাকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি সিডব্লিউসি’র মাধ্যমে পাঠানো হয় লক্ষীকান্তপুর হাসুস সেফহোমে, যার সিডব্লিউসি কেইস নং-৩৪৭/কে/১৭, তাং-২০/০৩/২০১৭ইং।