সারাদেশ
  পাহাড় সমান প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে যাওয়া তাছলিমা পাশে দাঁড়াতে হবে সবার
  23-04-2017


কথা বলতে পারেনা কানেও শুনে না। সমাজের সবাই তাকে বোবা বলেই জানে। এমন এক শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীত  তাসলিমা খাতুন (১৫)। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। অন্য সব শিক্ষার্থীদের মতই পরিক্ষার খাতায় স্বাভাবিক উত্তর লিখে জানিয়ে দিল নিজের ইচ্ছে শক্তি থাকলে পাহাড় সমান প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। তাসলিমা টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের মধ্য কর্ণা গ্রামের অসহায় কৃষক বদর উদ্দিনের মেয়ে। তার বড় ভাই শাহ্ আলম (১৮)  ছোট ভাই  সিনহা (১০)। তাসলিমা প্রতিবন্ধী হিসাবে জন্ম নিলেও মেয়ের প্রতি যতেœর কমতি নেই  মা শাহীনা বেগমের। উপজেলার মমরেজ গলগন্ডা পাবলিক উচ্চ  বিদ্যালয়ের ছাত্রী তাসলিমা । সে ঘাটাইল গণ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ।  
পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা যায়, ইংরেজী প্রথম পত্র পরীক্ষা দিচ্ছে সে। কক্ষ পরিদর্শকরা জানান, তাসলিমা  বাংলা ১ম ও ২য় পত্রের পরীক্ষা পুরো তিন ঘন্টা সময় সে ১০০ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর লিখেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু হানিফ খান জানান, তাসলিমা মেধাবী ছাত্রী সে কথা বলতে পারেনা বোবা। কানেও কম শুনে। সে নিয়মিত ক্লাস করতো। আমরা তাকে বিনা বেতনে লেখা-পড়া করার সুযোগ করে দিয়েছি। তার হাতের লেখা খুব সুন্দর । সে জেএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে।  
কেন্দ্র সচিব আজাহারুল ইসলাম বলেন, বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত তিন ঘন্টা সময়ের সঙ্গে আরো ২০ মিনিট সময় রয়েছে। কিন্তুু বিগত পরীক্ষা গুলোতে সুবিধা থাকা সত্বেও  তাসলিমার বাড়তি সময় লাগেনি । নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লেখা শেষ করেছে । কেন্দ্রে যাতে তার কোন সমস্যা না হয় সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু এসহাক বলেন, খাতায় ও বোর্ডে লিখে তাকে পড়াতে হয়েছে। লেখার মাধ্যমে নির্দেশনা দিলে সে খাতায় লিখে উত্তর দিত।
তাসলিমার সহপাঠি ঝুমা জানান, আমরা একসঙ্গে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতাম। লেখাপড়ার জন্য সহপাঠীরা সবাই সহযোগিতা করত। আমরা তাসলিমাকে কখনো প্রতিবন্ধীর চোখে দেখিনি ।
তাসলিমা ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়া স্বপ্নের কথা গুলো কাগজে লিখে প্রকাশ করেন। সে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে চায়।  শিক্ষক হয়ে তার মত বাক প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষার আরো ছড়াতে চান সে। কিন্ত অস্বচ্ছল পরিবারের এই মেয়েটি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তার মা শাহিনা বেগম জানান, আমরাও চাই সে লেখাপড়া চালিয়ে যাক। কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় হিমিশিম খেতে হচ্ছে। তাই তার আশা পূরনে আমি সকলের সার্বিক সহযোগিতা চাই।