পর্যটন
  প্রকৃতির নৈসর্গিক মনলোভা দৃশ্যের হাতছানি ঘুরে আসুন পতেঙ্গা
  15-04-2017


মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। ভ্রমন করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় মুশকিল। একঘেয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম, একটু বিরাম, একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পরেন সৃষ্টিকর্তার অপারময় সৃষ্টির  প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। ঢাকার বাইরে ঘুরে আসতে  চান? তবে স্বল্প মূল্যে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দেশের দর্শনীয় স্থান। আমাদের সুজলা-সুফলা নদী মার্তৃক এই দেশের মধ্যেই রয়েছে  পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে বিনোদনের নানান ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। আর আপনি যদি একজন পর্যটক হিসেবে ভ্রমন করতে চান, তবে তার আদি গোড়াপত্তন ও ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা দরকার। পতেঙ্গা সমূদ্র সৈকত ঘুরে এসে ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন- মমতাজ আক্তার লিপি
 
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতটি বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কর্ণফুলী নদী মোহনায় অবস্থিত। কোনো উৎসব, পার্বণ কিংবা ছুটির দিনগুলোতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার আগ্রহ দেখান না এমন মানুষ খুজে পাওয়া ভার। সৈকতে যাওয়ার পথে চোখে পড়বে পাহাড়, উঁচু উঁচু শিল্প কারখানা, পুরো পথের একপাশে বয়ে চলা নদী-সাগর।
সৈকতের চারপাশে প্রকৃতির নৈসর্গিক মনলোভা দৃশ্যের হাতছানি সঙ্গে সমুদ্রবন্দরের কর্মব্যস্ততা ও বিশাল সমুদ্রের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর মিলনমেলা। সৈকতজুড়ে চার কোণ বিশিষ্ট কংক্রিটের ব্লকগুলো দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। বর্তমানে সমুদ্র সৈকতে সিসি ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ দেওয়া হয়েছে। এতে সৈকতের সৌন্দর্য অনেকটা বেড়েছে। ােজয়ারের সময় সিসি ব্লকের ওপর আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে। এতসব মনোমুগ্ধকর পরিবেশের কারণে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা সৈকতটি অন্যান্য সৈকত থেকে খানিকটা আলাদা। ইতোমধ্যে এই সৈকত বিশ্ব পরিচিতি পেয়েছে। বিকেল হতে না হতেই হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায় এই সমুদ্র সৈকতে। পরিবেশটা এতটাই মনোমুগ্ধকর এখানে এলে যে কারও মন পুলকিত হবে। সৈকত তীরে দাঁড়ালেই কানে বাজে সাগরের কল্লোল, পায়ে এসে লুটিয়ে পড়বে নীল জলরাশির অপার ঢেউ, দেখা মিলবে বিশ্বের নানা দেশের নানা পতাকাবাহী নোঙর করা সারি সারি জাহাজ। নয়নাভিরাম এসব দৃশ্যের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন সূর্যটা সমুদ্রে ডুবে যাবে টের পাওয়া মুশকিল। পৃথিবীর অঅর কোথাও এমন সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বিতীয় কোনো নদীর মোহনা সত্যিই বিরণ। দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের সফেদ জলরাশি আর সাগরপাড়ে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মাতম অনমনা করে তোলে দর্শনার্থীদের। তাছাড়া পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হতে সূর্যাস্ত দেখার অপূর্ব সুযোগ তো আছেই। সূর্যাস্তের এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মনকে আরও বেশি পুলকিত করে। সবচেয়ে ভালো লাগবে সন্ধ্যার পরিবেশ।
কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাড়ে কাফকো ও ইউরিয়া সার কারখানার লাল-নীল বাতির আলোকছড়া সমুদ্রের জলতরঙ্গে মিশে সৃষ্টি এক চোখ জুড়ানো দৃশ্য। সবকিছু মিলে এক অসাধারন অন্যান্য এই সমুদ্র সৈকত।
এ সৈকতে আছে কক্সবাজারের আদলে এক বিশাল বার্মিজ মার্কেট। এতে শামুক-ঝিনুক ও বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে প্রায় ৪৩৬ টি দোকান। বাঁধ পেরিয়ে সমুদ্রের বালুকা বেলায় পর্যটকদের রসনা বিলাসের জন্য প্রস্তুত অসংখ্য খাবার হোটেল।
যেভাবে যাবেন
বাস, ট্রেন অথবা বিমানযোগে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম শহরের রেলষ্টেশন, এ কে খান কিংবা জিইসি থেকে খুব সহজে যেতে পারেন সৈকতে। সি বিচ লেখা বাসগুলোতে চেপে বসলেই হবে। আর এসব জায়গা থেকে ২২০-২৫০ টাকায় সিএনজি অটোরিক্সা নিয়েও যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
পতেঙ্গা সৈকতের আশপাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো আবাসিক হোটেল-মোটেল নেই। আবাসিক হোটেলের জন্য সিইপিজেড কিংবা আগ্রাবাদে আসতে হবে। তবে সিইপিজেড এলাকায় চেয়ে ভালোমানের একাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে বাণিজ্যিক এলাকা নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায়।
খেয়াল রাখুন
সৈকতে ঘুরতে গিয়ে কোনো উদ্ভুত পরিস্থিতি এড়াতে দল বেঁধে যাওয়াই ভালো। কোনো বিপদ কিংবা অভিযোগ থাকলে সৈকতের ভ্রাম্যমাণ পুলিশ ফাঁড়িতে জানাতে পারেন। তবে অধিক লোকের সমাগম আছে ওই দিকটায় থাকাই শ্রেয়। বিকেলের দিকে মন চাইলে পানিতে নেমে আনন্দের মাত্রা আরও বাড়াতে পারবেন। পাবেন ২০ টাকায় ঘোড়ার পিঠে চড়ার সুযোগ। স্পিডবোট, নৌকা, ঘোড়া যেখানেই চড়–ন আগে দেখেশুনে দরদাম করে নেওয়াই ভালো।