জাতীয়
  শেখ হাসিনার ভারত সফর : সতর্ক দৃষ্টি রাখছে চীন
  28-03-2017

নিজস্ব প্রতিবেদক, মানবাধিকার খবর:::

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে নিয়োজিত রয়েছে প্রতিবেশী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীন। এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে এই লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। শেখ হাসিনার ভারত সফরে বেইজিং সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলে জানিয়েছে চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থসহায়তা দিতে পারে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে বেইজিং এবং নয়াদিল্লির লড়াইয়ের মাঝে এ অর্থসহায়তা দেয়া হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে ভারত-চীনের লড়াই বাড়ছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশটিতে ভারতের এই অর্থসহায়তা দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প উন্নয়নে। এই অর্থ যাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়ার প্লান্ট, বন্দর, রেলওয়ে ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায়।

দুই দেশের মাঝে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি, ভুটানে পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, জাহাজ নির্মাণ, বর্ডার পোস্ট উন্নয়নসহ  নয়াদিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।

বন্দর এবং অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে বিশাল অঙ্কের ঋণসহায়তা দিয়ে আসছে চীন। বেইজিংয়ের এ ঋণসহায়তাকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না নয়াদিল্লি। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাসহ এশিয়ার প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে ভারত।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে ঢাকাকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তার ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই সময় নরেন্দ্র মোদি বলেন, সড়ক, রেল, সমুদ্রপথ এবং টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে দুই দেশের যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

মোদির ওই সফরের আগে সড়ক, রেল ও সমুদ্র পথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আঞ্চলিক অর্থনীতি সুসংহত করতে বাংলাদেশকে আট কোটি ডলারের ঋণসহায়তা দেয় ভারত।

ভারত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে চায়। তবে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে ভারতের ঋণসহায়তা চীনের ঋণের তুলনায় অনেক কম। গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাকিস্তানের অবকাঠামো প্রকল্পে অত্যন্ত স্বল্প সুদে দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তা দেন। এ ঋণসহায়তা ছাড়াও পাকিস্তানের অন্যান্য প্রকল্পে এবং শ্রীলঙ্কায় চীনের বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে।

লন্ডনের কিংস কলেজের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হর্ষ পন্ত বলেন, চীনের পাল্টা হিসেবে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় ঋণসহায়তা দিয়ে এলেও বেইজিংয়ের বিশাল অঙ্কের সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে না।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ক্ষমতার সাত বছরের মধ্যে এই প্রথম ভারত সফর করছেন শেখ হাসিনা। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হবে তার চারদিনের সফর। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে চলতি অর্থবছর ৭ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশকে প্রায় ৫০০কোটি ডলার সহায়তা প্রদান করবে; যা নতুন উন্নয়নের সূচনা করবে। নজর দেয়ার মতো অনেক এলাকা রয়েছে; তবে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যৌথ বিনিয়োগ এবং উদ্যোগের ফলে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মুক্ত হবে।’

অধ্যাপক হর্ষ পন্ত বলেন, ভারতকে বিশ্বশক্তি হিসেবে গড়তে চায় ভারত। বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছেন মোদি। গত বছর এ দুই দেশ ভারতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) বৈঠক বর্জন করেছে; ওই বৈঠক পাকিস্তানে হওয়ার কথা ছিল।

গত ২৩ মার্চ দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। ভারতের উদ্যোগে এ প্রকল্পে একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই স্বাক্ষর করেছে।