প্রচ্ছদ
  মহান ভাষা আন্দোলনে জাতীয় প্রেক্ষাপট ও বাগেরহাট আজও স্বীকৃতি মেলেনি ভাষা আন্দোলনের প্রথম গান রচয়িতার আজাদ রুহুল আমিন
  18-03-2017

 আজাদ রুহুল আমিন


মহান ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগের মহত্ত্ব তুলে ধরে এই মর্মস্পর্শী গানের রচয়িতা বাগেরহাটের চারণ কবি শামসুদ্দিন আহমেদ।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিলের সময় পাক সেনাদের নির্বিচার গুলিতে ঢাকার রাজপথে ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনার দিনই (২১শে ফেব্রুয়ারি) রাতেই বাগেরহাটের চারণ কবি শেখ সামছুদ্দিন আহমদ “রাষ্ট্রভাষা” নামে রচনা করেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম গানটি।

পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে বাগেরহাটের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বাত্তক ধর্মঘট পালন শেষে সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশে নিজের লেখা গান গেয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন ছাত্র-জনতাকে। তার এ গান শুধু বাগেরহাটের ছাত্র-জনতাকেই নয়-সারা দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল।

শহীদের আত্মত্যাগের মহিমাকে স্মরণ করে লেখা এ গান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় প্রতিক হয়ে থাকলেও, এখনও রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি পাননি গানের রচয়িতা চারণ কবি শামছুদ্দিন।

ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পার হলেও এখনও চারণ কবির পরিবারের খোঁজ রাখেনি কেউ। আজও পায়নি কোন সরকারি সহায়তা। ``রাষ্ট্রভাষা`` গানটি তিনি প্রথমে নিজের মতন করে লোক সুরে গেয়েছিলেন। পরবর্তিতে শামসুদ্দিন আহমেদ রচিত গানটি সুর করেন শহীদ আলতাফ মাহমুদ এবং প্রথম কণ্ঠ দেন রথীন্দ্রনাথ রায়। তার এ গান এতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে স্বল্প সময় মানুষের মুখে মুখে দেশের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে তা ছড়িয়ে পড়ে। ৫২’র ঐতিহাসিক মুহুর্তে তার এ গান হয়ে ওঠে অসাধারণ উৎসাহ উদ্দীপনার উৎস।

চারণ কবি শামসুদ্দিন আহমেদ ১৯১৫ সালে বাগেরহাট জেলা শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্বে ফতেপুর গ্রামে সেখ পরিবারে জন্ম করেন তিনি। তার পিতা লেহাজ উদ্দিন সেখ এবং মাতা নুরজাহান বেগম। প্রথমে গ্রামের পাঠশালায় ও পরে বাগেরহাট টাউন হাই স্কুলে তার শিক্ষা জীবণ শুরু হয়। এখান থেকেই তিনি জুনিয়র পাস করেন।

পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারেননি। তবে ছোটবেলা থেকেই তার ছিল কবিতা ও গানের প্রতি অসাধারণ ঝোঁক। বাল্যকাল থেকে তিনি ছিলেন পল্লীগীতির সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের ভক্ত।

পেশায় তিনি ছিলেন এক জন ক্ষুদ্র ব্যবসয়ী। কেউ কেউ তাকে তেল বিক্রেতা বলে উল্লেখ করেন। আবার কারও কারও মতে তিনি হাটে-বাজারে ফেরি করে জিনিসপত্র বিক্রী করতেন আর গান বাঁধতেন।

পারিবারিক কাজ কর্মের ফাঁকে ফাঁকে তিনি নিজে পল্লী গীতি লিখতেন আর নিজেই তার সুর দিতেন। ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগের মর্মস্পশী ঘটনায় তিনি ২১শে ফেব্রুয়ারি রাতেই লেখেন-রাষ্ট্রভাষা নামে একটি গান। সে গান তিনি নিজেই গেয়ে ছাত্র-জনতাকে উদ্বুদ্ধ করতেন।

 
তার গানের সূত্র ধরে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাগেরহাটের প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী শেখ আব্দুল আজিজ ও খ্যাতিমান মরহুম নাট্যকার এম এ হাকিমসহ অনেকের সাথে ছিল তার ব্যক্তিগত সখ্যতা।

১৯৫৩ সালে তিনি খুলনার দি ইস্টার্ণ প্রেস থেকে পাকিস্তান পল্লীগিতি নামে তার লেখা গানের একটি সংকলন প্রকাশ করেন। ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলি ও বাঙ্গালী-ভাইরে’ এ বিখ্যাত গানটিসহ ১৬ টি গান এ পুস্তিকায় ছাপা হয়।

যার প্রতিটি চরণে তৎকালিন পাকিস্তান সরকারের শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃনা ও সমালোচনা ছিল। এ বইটি তৎকালীন বিখ্যাত গায়ক আব্বাস উদ্দিন, কবি জসিম উদ্দিন এবং পিসি কলেজের অধ্যাপক মীর মোশারফ হোসেন ও তৎকালীন প্রখ্যাত নাট্যকার এম এ হাকিমসহ দেশ বরেণ্য লোকদের প্রশংসা লাভ করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে পাকিস্তান সরকার বিরোধীদের তালিকা তৈরী করছে, এমন আশংকায় নিজের অনেক লেখা তিনি পুড়িয়ে ফেলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর তিনি এক পর্যায় চরম অভাব-অনটনের মধ্যে পড়েন। চরম অবহেলার মধ্যে কেটে গেছে তার জীবন। সাহসী কলমযোদ্ধা ভাষা সৈনিক তার কাজের কোন সরকারি স্বীকৃতি পাননি। অকুতোভয় কলম সৈনিক সেখ সামসুদ্দিন পাননি তার সঠিক মুল্যায়ন। তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা রয়ে গেছেন ইতিহাসের অগোচরে। নিদারুন দারিদ্রতা, অবহেলা ও আর্থিক কষ্টে জীবন যাপনের পর ১৯৭৪ সালে স্ত্রী সফুরা খাতুন, দুই ছেলে দেলোয়ার হোসেন খোকন ও বকতিয়ার হোসেন মুকুল এবং এক কন্যা লায়লা খাতুনকে রেখে তিনি মারা যান।

তার বড় ছেলে দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, তার পিতা জীবিত থাকা কালেই অনেক কষ্টে চলেছে তাদের সংসার। চরম অভাব-অনটনের কারনে তাদের লেখাপড়া হয়নি। ঘরে অনেক সময় খাবারও জোটেনি। শেষ দিকে অসুস্থ্য হয়ে তিনি মারা যান। পিতার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি, কিন্তু কোন সহায়তা পাইনি। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহনের দাবীদার অনেক বিত্তবান মানুষের দ্বারে ঘুরেও কোন ফল পান নি তারা। ভাষা আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধে পিতার অবদানের জন্য সরকারী ভাবে কোন সহায়তা দেয়া হয়নি।

এমনকি তার পিতাকে সরকারিভাবে স্বীকৃতিটুকুও দেয়া হয়নি। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, সরকার যায়, সরকার আসে, কিন্তু পিতার মৃত্যুর পরও কেউ এগিয়ে আসেনি পরিবার-পরিজনকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে। কেবলমাত্র বাগেরহাট ফাউন্ডেশন কর্তৃক ৭ দিনব্যাপী বাগেরহাট উৎসব উপলক্ষে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব পিউস কস্তা ৫ হাজার টাকা ও একটি ক্রেস্ট এবং বাংলালিংক ফোন কোম্পানি তার পিতার লেখা রাষ্ট্রভাষা গানটি দুই বছরের জন্য তাদের বাণিজ্যিক প্রচারে ব্যবহার করে। এ জন্য তাদের পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা একটি সম্মাননা স্মারক প্রদান করে। তিন বছর আগে বর্তমান বাগেরহাট সদর এমপি জনাব মীর শওকত আলী বাদশা`র উদ্যোগে কবি`র সমাধি মোবারক বাঁধাই ও এক বছর আগে জেলা পরিষদ কবি`র নিজ গ্রাম ফতেপুরে কবি শাসুদ্দিন আহমেদ স্মরনে একটি সাধারন তোরন নির্মান করেন।

তিনি ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রথম গান হিসাবে তার পিতার লেখা “রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলি রে বাঙ্গালী-তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলী” গানটির স্বীকৃতির দাবি জানান।

৫২’র ভাষা আন্দোলনের সময় বাগেরহাটের ছাত্র সমাজসহ সাধারন মানুষও পিছিয়ে ছিল না। ২১ ফ্রেরুয়ারি ঢাকার রাজপথে গুলিতে ছাত্র নিহত হওয়ার খবর পেয়ে সর্বস্তরের ছাত্রসমাজ বিকেলেই মিছিল-সমাবেশ করে। ঐ দিন রাতে সিদ্ধান্ত হয় ২২ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন করা হবে। সেদিন রাতেই চারন কবি শাসছুদ্দিন একটি গান লেখেন। পর দিন ছাত্র ধর্মঘট শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি নিজেই রাষ্ট্রভাষা গানটি গেয়ে উপস্থিত কয়েক শত ছাত্র-জনতাকে উদ্বিপ্ত করেছিলেন।

এ গানটি ক্রমান্বয়ে শহর থেকে গ্রামে এমনকি রাজধানীতেও পৌঁছে যায়। অথচ ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর ও স্বাধীনতার ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও কলমযোদ্ধা শামছুদ্দিনের স্বীকৃতি আজও মেলেনি। যা শুধুই দুঃখজনক নয়-আমাদের জাতীর জন্য গ্লানিকর। এই ভাষা সৈনিককে যথাযথ সম্মান ও তার পরিবারকে সরকারিভাবে সহায়তা দেবার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনও - করিলিরি বাঙালী - তোরে ঢাকার শহর - রক্তে ভাসাইলি। ও বাঙালী ---- ও ও ও ও
তোতাপাখী পড়তে আইসা খোয়াইলি পরান - মায় সে জানে পুতের বেদন যার কলিজার জান। ইংরেজ যুগে হাটুর নীচে চালাইতো গুলি। স্বাধীন দেশে ভাইয়ে ভাইয়ের ওরাই মাথার খুলি। তোরা ঢাকার শহর রক্তে রাঙ্গালি।

কবি`র জীবনের অসংখ্য সংগৃহীত গানের পান্ডুলিপি এবং কৃষি কথা নামক লেখা বইটি চুরি হয়ে যায়। তিনি এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঠে সবুজ বিপ্লব ঘটানোর জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে অসংখ্য জারি গান রচনা করে গাইতেন। তিনি ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও অন্যায়ের কাছে কখনও মাথা নোয়ায় নি। তিনি ছিলেন একজন সাহসি প্রতিবাদী যুবক।

ওরে বাঙ্গালী ঢাকার শহর রক্তে রাঙালি
স্মৃতির মিনারে তোমরা আছো থাকবে

ভাষা আন্দোলনে বাগেরহাটও পিছিয়ে ছিল না। ঐতিহ্যবাহী আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র মহাবিদ্যালয় চত্বর গগন বিদারী স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠতো। এ আন্দোলনের উৎস পিসি কলেজের সবুজ চত্বর থেকে মিউনিসিপাল পার্ক এবং আমলাপাড়া স্কুল সংলগ্ন কো-অপারেটিভ ব্যাংক ছিল আন্দোলনের মুল কেন্দ্রস্থল। তৎকালীন পিসি কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক (জিএস) ছাত্রনেতা সাতক্ষীরার এ্যাড. মুনসুর আলী সাবেক বস্ত্রমন্ত্রী, এ্যাড. মীর মোশারেফ আলী,ফতেপুরের কবি শামসু,ন্যাপের এ্যাড. আব্দুল খালেক,বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এ্যাড. মোজাফফর হোসেন,সৈয়দ রওনক আলী হারু মিয়া,বাগেরহাট বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মুনছুর স্যার। নেতৃত্বে ছিলেন এ্যাড. মুনসুর আলী এবং সমগ্র পরিকল্পনা,ঘরোয়া সভা,পথসভার সভাপতিত্ব করতেন প্রথিতযশা আইনজীবি কচুয়ার কৃতি সন্তান প্রাক্তন এমপি জনাব অধ্যাপক মীর শাখাওয়াত আলী দারু`র চাচা মীর মোশারেফ আলী,কবি শামসু যিনি অসংখ্য সঙ্গীত রচনা করে গাইতেন। ছাত্র যুবকদের অনুপ্রেরনা যোগাতেন।

এ সময়ের পিসি কলেজের অধ্যাপক এমএএলএলবি মীর মোশারেফ আলী ৫২ এর ভাষা আন্দোলন যখন চুড়ান্ত রুপ নেয় তখন তাকে গ্রেফতার করলে ছাত্র সমাজ বাগেরহাট রেললাইন অবরোধ ও রেললাইনের উপর শুয়ে পড়েন। তখন গ্রেফতারকৃত মোশারেফ আলী উচ্চকিত কন্ঠে বলেন পুর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের কবর রচনা না করা পর্যন্ত তোমরা আমাকে মুক্ত করতে পারবে না। এরপর তাকে রাজশাহী কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ভাষা সৈনিক হারু মিয়া অসংখ্য গান গাইতেন এবং তিনিও গ্রেফতার হন।

বাগেরহাট শহরের খারদ্বারের গনি সরদার। যিনি ছিলেন মজলুম জননেতা মাওলানা ভাষানী`র অন্যতম সহযোগী এবং ভাষার প্রতি মমত্ববোধ - দেশপ্রেম - ভালোবাসা যেটি আমাদের ছাত্রজীবনে অনুপ্রাণিত করতো। তিনি শুধুমাত্র একুশে ফেব্রুয়ারী`র বিশেষ দিনটিতে নয়। জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত শেষ দিন পর্যন্ত খদ্দরের পাঞ্জাবী হাতে লাঠি সারা বছর কালো ব্যাজ ধারন করে রিক্সায় চড়ে ওরে বাঙ্গালী ঢাকা শহর রক্তে রাঙ্গালী এ রেকর্ড সারা শহর ঘরে ঘুরে বাজাতেন। মরহুম গনি সরদার একজন পরিচ্ছন্ন ব্যাক্তি তিনি মুলত ভারতের নেতাজী শুভাস বসুর অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন এবং গ্রেফতার হন। আমার হৃদয়ের স্মৃতি থেকে এ ভাষা সৈনিক মরহুম গনি সরদার কখনও ম্লান হবেন না। মাতৃভাষা বাংলা`র দাবিতে তাদের অকুতভয় মিছিল পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্বোচ্ছারিত প্রতিবাদ বাগেরহাটের মানুষ কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করবে। প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামে বাগেরহাটের ছাত্র সমাজ আপোষহীন ও সাহসি ভূমিকা রাখেন।


আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
এ ঋণ শোধ হবে না। না না না না না না না না

মাতৃভাষা বাংলা। চাপিয়ে দেয়া উর্দু ভাষার পরিবর্তে বাঙালীর বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল তীব্র আন্দোলন। ১৯৪৮ সালে প্রথম এ ভাষার দাবিতে আন্দোলনের সুচনা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতা হিসেবে এর বাস্তব রুপ নেয় ১৯৫২ এর একুশে ফেব্রুয়ারী।

সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ পাকিস্তানী বাহিনী`র বর্বরচিত এলোপাতাড়ি গুলিতে এরা শহীদ হন। মাতৃভাষা - বাংলাভাষা - মা`য়ের ভাষা। পৃথিবীর মধ্যে যত ভাষা আছে এর মধ্যে বাংলা ভাষা উচ্চারন অনেক কঠিন। ইংরেজী ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষায় রুপ নিলেও কালক্রমে বাংলা ভাষা জাতিসংঘের স্বীকৃতি সহ সমগ্র বিশ্বে বাংলাভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন আমাদের জাতি হিসেবে অহংকার ও গর্বের।

অ - আ - ক - খ বর্নমালা। আদর্শলিপিটি আজও বহমান। কালের পরিক্রমায় যুগ যুগান্তর ধরে বাংলা ভাষার প্রচলন জাতি হিসেবে আমাদের পরম পাওয়া। চিন, জাপান, আমেরিকা, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ আগ্রহ ভরে বাংলা ভাষা রপ্ত করছে। সহজেই অনুমেয় এ বাংলা ভাষা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত প্রিয় মাতৃভূমির অন্যতম একমাত্র বাংলা ভাষা।

১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ আর ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এরই ধারাবাহিকতা। পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠির শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালী বীরের জাতি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এ দেশের মানুষ বিশ্বের যে প্রান্তে অবস্থান করুক না কেন তারা সত্যিই বীর দর্পে তাদের কর্মকান্ডে বাংলাদেশ আজ সমুজ্জল।

বিশ্বে অনেক দেশ পাকিস্তানকে সমীহ করলেও একমাত্র বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতি মুখ থুবড়ে ঘৃণার চোখে পাকিস্তানকে যুগে যুগে ধিক্কার জানাবে। ওরা এ দেশের মানুষের উপর অর্থনৈতিক,চাকরি ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে শোষন করেছে ইচ্ছে মত।

যাদের মধ্যে দেশপ্রেম,প্রতিবাদ আর যৌবনের উদ্ভাসিকতায় তারুন্যে রক্তের শ্বেত কনিকায় জাগো বীরের জাতি - জাগো বাঙালী জাতি। এ অনুপ্রেরনায় আমরা পেয়েছি মাতৃভাষা বাংলা। আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ড। ব্রিটিশদের উপনিবেশ বাদ নীল চাষের নামে অত্যাচার নিপীড়ন আর বর্বর পশ্চিমা পাকিস্তানী হায়েনাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঘৃণা ক্ষোভ হৃদয়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলে। ভাষা সৈনিকরা এ জাতির শীর্ষে পদ্মা - মেঘনা - যমুনা`র স্রোতস্বীনি তেজ দীপ্ত জলরাশির ন্যায় তোমরাই বাংলা মায়ের শ্রেষ্ট তারকা।

এ হাসি আনন্দ বেদনার - এ এক অন্য চেতনা।
হৃদয়ে লিখো নাম - সে নাম রয়ে যাবে।

 

লেখক : ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, মানবাধিকার খবর ও বাগেরহাট প্রতিনিধি, সময়নিউজ।
সাবেক জেলা প্রতিনিধি, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও চ্যানেল ওয়ান।