প্রচ্ছদ
  মানবাধিকার খবরের আরও একটি উদ্যোগে মায়ের কোলে ফিরেছে প্রতিবন্ধী কিশোর সজিব ও সালমা
  14-03-2017

মোঃ রিয়াজ উদ্দিন:

মানবাধিকার বিষয়ক এশিয়ার একমাত্র নিয়মিত সৃজনশীল বাংলা প্রকাশনা ও দেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘মানবাধিকার খবর’র উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টায় সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গত ২৮ শে ফ্রেব্রুয়ারী দীর্ঘ ৩ বছর পর বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কিশোর সজিব ঢালী (১৪)। তার বাড়ী বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট থানার ছোট কাসুয়া গ্রামে। গত ১ মার্চ সকাল ১০টায় বেনাপোল বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ অপূর্ব হাসান সহ অন্যান কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সজিবকে তার মা শাহিদা বেগমের হাতে অনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেয়া হয়। এর আগে সজিব কলকাতা লক্ষীকান্তপুর যে সেফহোমে ছিলো সেই হাসূস সেফহোমের সুপার বাবু সোনা পাইক ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একটি টিম পেট্টাপোল সীমান্তে পৌছে দেয়।

ভারত থেকে ফিরে আবেগাপ্লুত মাকে শান্তনার পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে সজিব

ঘটনার বিবরণ ও তথ্যানুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, গত বছর যশোরের শার্শা থানার আমলাই গ্রামের দিনমজুর খলিলুর রহমানের ছেলে স্কুল ছাত্র সাইদুল ইসলাম বিপ্লব(১৪) নিখোঁজ হওয়ার এক অভিযোগের ভিত্তিতে মানবাধিকার খবরের সম্পাদক ভারতে গিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার লক্ষীকান্তপুরে হাসুস সেফহোমে তার সন্ধান পান। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষে বিপ্লবকে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। ঐ সময় জানা যায়, আর এক বাংলাদেশী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সজিব ঢালী এই সেফহোমে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে মানবাধিকার খবরের সম্পাদক তার সাথে দেখা করেন। দীর্ঘক্ষণ কথা বলার পর জানা যায় তার বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লারহাট থানায়। সে থাকতো মায়ের সাথে খুলনার দিঘলীয়ায়।


ভারতের সেফহোম হাসুস এর কর্মকর্তাদের সাথে সম্পাদক এবং উদ্ধারকৃত বিপ্লব ও সজীব (সর্বডানে)

মা ও নানীর সাথে অভিমান করে চলে আসে ভারতে। সজিব দেশে মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য সম্পাদকের কাছে কান্নাকাটি ও আকুতি জানায়। তখন সম্পাদক সজিবকে আশ্বস্ত করেন ও প্রতিশ্রুতি দেন- আইনি প্রকৃয়া শেষে যে কোন উপায়ে তাকে দেশে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবেন। সজীবের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সম্পাদক পরবর্তীতে সজীবের মায়ের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে সজিবকে উদ্ধারের জন্য তার মাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে বলেন। সে অনুযায়ী সজিবের মা ঢাকার মতিঝিলস্থ মানবাধিকার খবর অফিসে এসে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ও ছবি সম্পাদককে প্রদান করেন। সজিব এতদিন সঠিক কাগজপত্রের অভাবে দেশে ফিরতে পারছিল না। সজিবের চিন্তায় শয্যাশায়ী মা শাহীদা আক্তার সুমী অনাবরত কান্নাজড়িত কণ্ঠে মানবাধিকার খবরকে ফোনে বলেন, ‘আমার ছেলেকে যে কোন উপায়ে দেশে এনে আমার বুকের ধন অমার কাছে ফিরিয়ে দিন, ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।’ সজীবের মা একজন নৃত্যশিল্পী। সজীবের নিখোঁজ সংক্রান্ত ব্যাপারে গত ১৯ জুন ২০১৬ বাগেরহাটের মোল্লারহাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী(জিডি) করা হয়। যার নাম্বার ৭৭৬। শারীরিক অসুস্থতার কারনে সজিবের মা বর্তমানে অর্থনৈতিক সঙ্কটে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

সজিবের ব্যাপারে গত বছর জুলাই মাসে সম্পাদক ভারতে গিয়ে সকল ধরনের নাগরিকত্ব প্রমানের কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌছালে দক্ষিন ২৪ পরগনা ইন্টেলিজেন্ট ব্রাঞ্চ (ডি আই বি) সজিবের ব্যাপারে তদন্ত করতে গেলে সজিব ভুল বসত তার আসল পিতার নাম মাসুদ ঢালির পরিবর্তে পালিত পিতা মুজিবর রহমানের নাম বলে সেখানেই দেখা দেয় বিপত্তি। তা না হলে অনেক আগেই সজিব দেশে ফিরতে পারত। অনুসন্ধানে জানা যায় সজিব ছোট বেলাতেই তার পিতাকে হারায়। পিতার কথা তার মনে নেই। পিতা হারাবার পর সে একবার নিজেই হারিয়ে যায়। মোল্লার হাট থেকে চলে আসে বাগেরহাট সদরে সে ভবঘুরের মত সে ঘুরতে থাকে। স্থানীয় সাংবাদিকরা জেলখানা গেটে তাকে কান্নারত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পত্রিকা অফিসে নিয়ে তার পরিচয় জানতে চায়। কিন্ত সে ছোট থাকার কারনে তার পূর্ণ পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়। তখন সে বলে আমার কেউ নেই। বাগেরহাট পুলিশ লাইনের নিকট অধিবাসী মজিবুর রহমান মানবিক কারনে সšাÍনের মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায়। সজিবকে নিজের সন্তানের মত লালন পালন করতে থাকে। সজিব ২ মাস সেখানে থাকে। এর পর সজিবের মা শাহিদা খবর পায় তার ছেলে বাগেরহাটে মজিবর রহমান নামে এক ব্যক্তির কাছে আছে। সজিবের মা ছুটে যায় সেখানে। পরবর্তীতে সজিবকে তার কাছে নিয়ে আসে। সেই থেকে সজিব জানে মুজিবর রহমানই তার পিতা। এদিকে কাগজপত্রে সজিবের আসল পিতার সাথে পালিত পিতার মিল না থাকায় বিভ্রান্ত তৈরি হয়। হাই কমিশন থেকে সর্বস্তরে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে। গত বছর ২০ নভেম্বর মানবাধিকার খবরের সম্পাদক সজিবের পিতার নাম ঠিক করে দিয়ে আসার কারনে সজিবকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আর কোন বাধা থাকল না। এর আগে মানবাধিকার খবরকে উক্ত পত্রিকার ভারত প্রতিনিধি মনোয়ার ইমামের মাধ্যমে লোকসভার সাংসদ শ্রীমতি পতিমা ম-ল বিপ্লব নামের কিশোরের সন্ধান দিয়েছিলেন। সজিবকে কাছে পেয়ে মা সাহিদা আক্তার সুমি আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, মানবাধিকার খবরের সম্পাদক প্রতিশ্যুতি অনুযায়ী আমার ও সজিবের কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। শেষ পর্যন্ত সজিবকে আমার কাছে পৌছে দিয়েছেন। মা ও ছেলে আমরা এই মুহুর্তে সুখী অনুভব করছি। আমরা মানবাধিকার খবরের সম্পাদক সহ সকলের প্রতি চিরকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মানবাধিকার খবর ও এর সাথে যারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রত্যেকের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।

দেশে ফেরার অপেক্ষায় সামিরুল
সজিবের সাথে দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিল সামিরুল নামে আর এক কিশোর। মানবাধিকার খবরের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগীতা দেওয়ার পরেও আসতে পারেনি এই কিশোর । বাংলাদেশ পুলিশের নাগরিকত্ব তদন্ত রির্পোট ভারতীয় কর্তৃৃপক্ষ কাছে বিলম্বে পৌছানোর কারনে আটকে যায় সামিরুলের দেশে ফেরার ফাইলটি। তবে চলতি মার্চ মাসের যে কোন সময় মানবাধিকার খবর কর্তৃপক্ষ আইনি জটিলতা শেষ করে সামিউরুলকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আবারও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।


মানবাধিকার খবর অফিসে ক্রন্দনরত ছামিরুলের মা-বাবা

কিশোর ছামিরুল ও তার মা বাবা জানান, ছামিরুলের পড়াশুনা তেমন ভাল লাগত না। সে ঢাকার মিরপুর কালসীতে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়াশুনা করত। সে ছিল চঞ্চল ও চতুর প্রকৃতির। প্রায়ই সে মা বাবাকে না বলে ১০/১৫ দিন ঘুরে ফিরে বাসায় ফিরে আসতো। মা বাবাকে প্রায়ই ভারতে আজমীর শরীফে যাওয়ার কথা বলত। মা-বাবা তাকে বড় হলে ওখানে যাওয়া যাবে বুঝিয়ে আস্বস্থ করত। কিন্তু সে মনে মনে পরিকল্পনা করে একদিন সে আজমীর শরীফে যাবেই। যেই কথা, সেই কাজ, গত বছরের ১৫ মার্চ পরিকল্পনা মাফিক ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থেকে লালমনিরহাটগামী ট্রেনে চড়ে বাংলাদেশ বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এর পর ট্রেনে চলে আসে কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে। ইতিমধ্যে তার কাছে থাকা বাড়ি থেকে নেওয়া খাওয়ার টাকা শেষ হয়ে যায়। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে ধরা পড়ে শিয়ালদহ রেলওয়ে পুলিশের হাতে। তার কাছে কোন অবৈধ কিছু না থাকায় শিশু-কিশোর হিসেবে নিয়মমাফিকভাবে রেল পুলিশ তুলে দেয় শিশু কল্যাণ কমিটির(সি.ডব্লিউসি) হাতে।


ভারতের হাসুস সেফহোমে সম্পাদকের সাথে সজীব (বায়ে) ও ছামিরুল (ডানে)

কলকাতা থেকে প্রায় দু’শ কিলমিটার দূরে লক্ষীকান্তপুরের মন্দির বাজার থানায় বিজয়ঙ্গী বাজারে সিডব্লিউসির নিয়ন্ত্রনাধীন আমরা সবাই উন্নয়ন সমিতির(হাসুস) সেফ হোমে ঠাই হয় ছামিরুলের। এ ব্যাপারে ছামিরুলের বাবা শামীম ঢাকার পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী(জিডি) করেন। যার নং-১৭০৫, তারিখ: ২১/০৮/২০১৬। দীর্ঘ চার মাস পর ছামিরুলকে অনেক খোজাখুজির পর বাবা মা জানতে পারে ভারতে পশ্চিম বঙ্গের দক্ষিন ২৪ পরগনা লক্ষীকান্তপুরে হাসুস সেফহোমে আছে। বাবা একজন কসমেটিক্স বিক্রেতা আর মা সেলাই এর কাজ করেন। ঠিকানার অভাবে সেফহোম কর্তৃপক্ষ ছামিরুলের বাবা-মার কাছে খবর দিতে পারছিল না।


ভারতের লোকসভা সাংসদ ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সভাপতি শ্রীমতি প্রতিমা মন্ডলের সাথে সম্পাদক

ছামিরুলের বাবা-মা ঐ সেফহোমের ঠিকানা, ফোন নাম্বার সংগ্রহের চেষ্টা চালায়। রাইট্স যশোর নামে একটি সেচ্ছাসেবি সংগঠন থেকে উক্ত সেফহোমের ঠিকানা সংগ্রহ করতে সক্ষম হণ। কিন্ত যোগাযোগ করে ছেলেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার কোন উপায় খুজে পাচ্ছিলেন না। এমতবস্থায় মানবাধিকার খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক রোটারিয়ান মোঃ রিয়াজ উদ্দিন গত বছর ২০ নভেম্বর ভারতে পূর্বের নির্ধারিত প্রতিবন্ধি সজিব ঢালি ও সালমা বেগম কে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সেফহোমে যান, তখন সম্পাদক সেফহোমে গিয়ে জানতে পারেন ছামিরুল নামে আরও একজন বাংলাদেশী কিশোর রয়েছে। হোম কতৃপক্ষ ছামিরুলকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্পাদককে অনুরোধ জনান। সম্পাদক তাৎক্ষনিকভাবে ছামিরুলের সাথে সেফ হোমের অফিস কক্ষে হোমের বালক শাখার সুপারিন্টেড বাবুসোনা পাইকের উপস্থিতিতে কথা বলেন। ছামিরুলের কাছ থেকে তার পলায়নের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে ছামিরুলের মায়ের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে ছামিরুলকে তার মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন পর মা-ছেলের কথোপকথন দুজনকে সান্তনার তীরে নিয়ে যায়। এর পর ছামিরুলের নাগরিকত্ব প্রমানের জন্য তার মা বাবার মাধ্যমে সকল কাগজ পত্র সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সজিব ও ছামিরুল যে বাংলাদেশী নাগরিক তার সত্যতা প্রমান স্বরূপ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডিআইবি তদন্ত রিপোর্ট গত ৪ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেয়। যার মেমো নাম্বার-৫০৫৩/২৯-১৬।

ছামিরুলের মা-বাবা মানবাধিকার খবরের কাছে প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি করে আবেন ও নিবেদন করছেন, যে কোন উপায়ে তার ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের কাছে দেওয়ার জন্য। মানবাধিকার খবরেরও রয়েছে সময় ও আর্থিক বাধ্যবাদকতা। এ করনে বিলম্বিত হচ্ছে ছামিরুলকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া। কারন মানবাধিকার খবরকে কোনো এনজিও বা সরকারী কোন সংস্থা এ ব্যাপারে আর্থিক সহায়তা করেন না। তার পরেও মানবাধিকার খবর তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ছামিরুলকে খুব শীঘ্রই দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

দেশে ফিরেছেন সালমা বেগম
মানবাধিকার খবরের সার্বিক সহযোগীতায় গত ২৩ জানুয়ারি দেশে ফিরেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের মানষিক প্রতিবন্ধী সালমা বেগম। উল্লেখ্য যে, গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জের ৩ সন্তানের জননী সালমা বেগম(৩৯) প্রায় ৩ বছর আগে গোলাপী নামে প্রতিবেশী এক পরিচিত নারীর সঙ্গে মানসিক রোগের চিকিৎসা করাতে ভারতে এসে হারিয়ে গিয়েছিলেন। কিছুই মনে ছিল না তার। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলা পুলিশ তাকে গত ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে আরামবাগ থেকে খুঁজে পায়। নিয়ম অনুযায়ী আদালতে তোলা হলে তাদের নির্দেশে সালমা বেগমকে হুগলী উত্তরাপাড়া একটি আবাসে রাখা হয়েছিল। ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে তিনি মানসিক রোগে ভুগছেন, হারিয়েছেন স্মৃতি। শুরু হয় মানসিক রোগের চিকিৎসা। মাস ছয়েক চিকিৎসার পরেই তিনি কিছুটা স্মৃতি ফিরে পান। মনে পড়ে যায় যে বাংলাদেশের গাইবান্ধায় তার বাড়ির কথা, গ্রামের কথা হোমের কর্তৃপক্ষকে জানান তিনি। সালমা বেগম আরো জানান, যে তিনি যার সঙ্গে চিকিৎসা করাতে ভারতে এসেছিলেন, সেই গোলাপী বেগম তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। অপরদিকে, সালমার মানষিকরোগ বেড়ে যাওয়ায় কোন এক ফাকে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গিয়ে ভবঘুরের মত ঘুরতে থাকে। অনেক খোজাখুজির পর তাকে না পেয়ে গোলাপী বেগম দেশে ফিরে আসেন। কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের কাউন্সিলর জামাল হোসেন মানবাধিকার খবরকে বলেন, ‘ওই হোমের থেকে খবর পেয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারপরেই আমরা ওই নারীর পরিচয় নিশ্চিতকরণের জন্য বাংলাদেশে খবর পাঠাই’। সালমা বেগমের আত্মীয়রা উপদূতাবাসের কাছে ছবি ও অন্যান্য পরিচয়পত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। জামাল হোসেইন বলেন, ‘পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে আমি নিজেই হুগলীর ওই হোমে গিয়ে সালমা বেগমের কাছ থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর একটি আবেদনে টিপ সই করিয়ে এনেছি। উদ্ধার করার পরের ১৯ মাস হোমেই কাটিয়েছেন সালমা।

ভারতের রাজ্য সভার সাংসদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি
প্রদীপ ভট্টাচার্যের সাথে একান্তে সম্পাদক

কাউন্সিলর জামাল হোসেন মানবাধিকার খবরকে আরও জানান সালমার নাগিরত্ব প্রমানের পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র না থাকলেও বিশেষ ব্যবস্থায় আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে দেশে পাঠানো হচ্ছে। এর পর মানবাধিকার খবরের পক্ষ থেকে সম্পাদক যোগাযোগ করেন কলকাতাস্থ উপ হাই কমিশনার জকি আহাদ কাউন্সিলর ও হেড অব চ্যাঞ্চেলর মিয়া মোঃ মাইনুল কবির ফাষ্ট সেক্রেটারী (প্রেস)মোঃ মোযাফ্ফারুল ইকবাল, কাউন্সিলর বি এম জামাল হোসেন সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা , পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নপরাজিৎ মূখার্জি আলিপুর ভবানী ভবনে দক্ষিন ২৪ পরগনায় জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্রীমতি শান্তি দাস, জেলা ইন্টেলিজেন্ট ব্রাঞ্চের নিবেদিতা তালুকদার এডিশন সেক্রেটারি ফরেনার্স গভ পশ্চিমবঙ্গ হোম ডিপার্টমেন্ট গৌরাঙ্গ সরকার, রাজ্য সভার সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, লোকসভার সংসদ সদস্য ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান শ্রীমতি প্রতিমা ম-ল। জেলা শিশুরক্ষা সমিতির কর্মকর্ত অনিন্দ ঘোষ, কলকাতার সল্টলেকে বিকাশ ভবনে অবস্থিত শিশু রক্ষা প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুচরিতা সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নপরাজিৎ মূখার্জী

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ^স্ত সুত্রে জানা যায় প্রতিমাসে গড়ে ৩/৪ শত নারী ও শিশু ভারত সিমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ হচ্ছে। তাই তাদের নাগরিকত্ব প্রমানের কোন কাগজপত্র লাগে না। তবে কেন বৈধ প্রক্রিয়ায় নারী শিশু দেশে ফেরত আনতে নাগরিক প্রমানের একগাদা কাগজপত্র লাগবে। ভারতে থাকা দেশে আসতে ইচ্ছুক তাদের সাথে কথা বললেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের তাদের ঠিকানা কোথায়। আর কাগজ পত্র যা পাওয়া যায় তা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব। তাহলে আইনি জটিলতার অনেক ঝামেলা এড়িয়ে অবৈধভাবে অবস্থানরত নারী ও শিশুদেরকে সহজেই দেশে পাঠানো সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গের ২০/২৫টি সেফহোমে প্রায় ২ শতাধিক নারী ও শিশু রয়েছে দেশে ফেরার অপেক্ষায় বলে জানা যায়।

কলকাতা ভবানী ভবনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিইবি শ্রীমতি শান্তি দাসের (বায়ে) সাথে সম্পাদক

উল্লেখ্য যে, মানবাধিকার খবর এর আগে ভারতের উত্তরাখ- প্রদেশের রুদ্রপুর থেকে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশী কলেজছাত্রী সাবানা আক্তার চায়না, হায়দ্রাবাদ থেকে গৃহবধু মুন্নি, পশ্চিমবঙ্গের লক্ষীকান্তপুর থেকে কিশোর বিপ্লব, দিল্লীর তিহার জেল থেকে বিউটি আক্তারসহ সাফল্যের সাথে অসংখ্য নারী ও শিশুকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে এনে মা বাবা ও আইনের হাতে তুলে দিয়ে সাফল্য দেখিয়েছে। যা বাংলাদেশের জনপ্রিয় প্রথম শ্রেনীর দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে গুরুত্ব সহকারে প্রচার হয়।

কলকাতার প্রতিনিধি অমর সাহা (বায়ে) ও উপ-হাই কমিশনার জকি আহাদের (ডানে) সাথে সম্পাদক

উদ্ধার প্রক্রিয়ায় সার্বিক সহযোগিতা করছেন প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি অমর সাহা, মানবাধিকার খবর পত্রিকার কলকাতা প্রতিনিধি দিশা বিশ্বাস, ভারত প্রতিনিধি মনোয়ার ইমাম, বারাসাত প্রতিনিধি প্রদীপ রায় চৌধুরী, মানবাধিকার খবরের কলকাতাস্থ আইন উপদষ্টা রাজীব মুখার্জি, নিলোৎপল মৈত্র, রিয়াসহ অন্যান্য।

মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন।
রাজধানীর পিংক সিটির একটি বাড়ি থেকে কূটনৈতিক সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগে দি কাস্টম এ্যাক্ট ১৯৬৯ এর ধারা ১৫৬(১)এর প্রযোজ্য উপধারায় জাগুয়ার গাড়ি জব্দ করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একটি দল। কূটনৈতিক সুবিধায় গাড়িটি আমদানি করে পরে তা অবৈধভাবে হস্তান্তর করা হয়। কাস্টমস গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ বলছে, ৩০ ডিসেম্বর পিংক সিটি জেনোভ্যালীর ৩নং সড়কের জারা হাউসের গ্যারেজ থেকে (ঢাকা মেট্রো ভ ১১-১৬২৫) জাগুয়ার গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। তদন্তের স্বার্থে ওই বাড়ির বাসিন্দা ও গাড়িটির ব্যবহারকারী তানিয়া রহমানের কাছ থেকে গাড়িটি সাময়িকভাবে জব্দ করা হয়। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়িটি জব্দ দেখানো হয়। জানা গেছে, তানিয়া রহমানের স্বামী মৃত মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশে চেক রিপাবলিকের কনসুলার অফিসে কর্মরত ছিলেন। গাড়িটি কূটনৈতিক সুবিধায় আনা হয়েছিল এবং পরে তা অবৈধভাবে হস্তান্তর করা হয়। আমদানির সময় দাখিলকৃত বিল অব এন্ট্রি (বি/ই) অনুযায়ী গাড়িটি জার্মানির বলে দেখানো হয়। কিন্ত রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেখানো হয় চীন অরিজিন। অন্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গাড়িটি যুক্তরাজ্যের। এ ছাড়া এলসি ও এলসিএ ওপেনিং ব্যাংকের তথ্যাদিতেও ব্যাপক গরমিল পাওয়া যায়। এতে প্রমাণিত হয়, অস্পষ্ট ও মিথ্যা দলিলাদি উপস্থাপন করে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কূটনৈতিক সুবিধার অপব্যবহার করায় জাগুয়ার গাড়ি জব্দ করা হয়।