খেলাধুলা
  টাইগারদের হারিয়ে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় কিউইরা
  04-01-2017

 

স্পোর্টস ডেস্ক | মানাধিকার খবর |

টাইগারদের দেওয়া ১৪২ রানের টার্গেটে ৪ উইকেট হারিয়ে টপকে যায় স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১২ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় কিউইরা। ফলে, ১-০তে সিরিজে এগিয়ে রইলো কেন উইলিয়ামসনের দলটি।



মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে টি-টোয়েন্টিতে নিজের ৫০তম ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে ভর করে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে লড়াকু স্কোর পায় বাংলাদেশ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে ১৪২ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেয় টাইগাররা।

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় টাইগাররা। দ্বিতীয় ওভারে ম্যাট হেনরির বলে লুক রঞ্চির গ্লাভসে আটকা পড়েন ইমরুল কায়েস (০)। ওপেনিংয়ে নির্ভরতার প্রতীক তামিম ইকবালও বেশিদূর যেতে পারেননি। তাকে টম ব্রুসের তালুবন্দি করে টি-২০ অভিষেকেই উইকেটের স্বাদ পান বাঁহাতি পেসার বেন হুইলার। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে জোড়া আঘাত হানেন এ ফরমেটে আরেক অভিষিক্ত পেসার লুকি ফার্গুসন। সাব্বির রহমানের (১৬) পর প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার (০)। ব্যাটিং অর্ডারে নিচে নামিয়ে আনা হলেও টানা রান খরায় ভোগা সৌম্য ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারেননি। দলীয় ৩০ রানে চার উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে সফরকারীরা।

পঞ্চম উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক চাপ সামাল দেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১১তম ওভারে সাকিবকে (১৪) মিচেল স্যান্টনারের ক্যাচ বানিয়ে কিউইদের স্বস্তি এনে দেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। এক প্রান্ত আগলে রাখেন মাহমুদউল্লাহ। মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে আরো ৩২ রান যোগ করেন। ১৬তম ওভারে মোসাদ্দেককে (২০) কোরি অ্যান্ডারসনের ক্যাচে পরিণত করে উইকেটের খাতায় নাম লেখান স্পিনার মিচেল স্যান্টনার। মাত্র ১ রানে হুইলারের বলে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের হাতে ধরা পড়েন মাশরাফি।

ইনিংসের শেষ ওভারে বিদায় নেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৫২ রান করা মাহমুদুল্লাহ। ফার্গুসনের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৪৭ বলে তিনটি চার আর তিনটি ছক্কায় মাহমুদুল্লাহ তার ইনিংসটি সাজান। নুরুল হাসান ৭ রানে আর রুবেল হোসেন ২ রানে অপরাজিত থাকেন।

সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট দখল করেন লুকি ফার্গুসন। বেন হুইলার দু’টি আর একটি করে নেন ম্যাট হেনরি, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও মিচেল স্যান্টনার।

কিউইদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন কেন উইলিয়ামসন এবং নেইল ব্রুম। টাইগারদের হয়ে বোলিং শুরু করেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ওভার থেকে স্বাগতিক ওপেনাররা তুলে নেন ৮ রান। দ্বিতীয় ওভার মাশরাফি করে বল হাতে তুলে দেন রুবেলকে। নিজের প্রথম আর ইনিংসের তৃতীয় ওভারে রুবেল ফেরান নেইল ব্রুমকে। বাউন্ডারি সীমানায় সাকিব দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে ফেরান ৬ রান করা ব্রুমকে। দলীয় ২২ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় কিউইরা।

ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে আসেন মোস্তাফিজ। নিজের দ্বিতীয় বলেই মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন কলিন মুনরোকে। উইকেটের পেছনে নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসবন্দি হওয়ার আগে কোনো রানই করতে পারেননি মুনরো। মোস্তাফিজ তার প্রথম ওভারে ২ রানের বিনিময়ে তুলে নেন একটি উইকেট।

পাওয়ার প্লে’র পর ইনিংসের সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন সাকিব। ফিরিয়ে দেন কোরি অ্যান্ডারসনকে। ওভারের তৃতীয় বলে সাকিবকে তুলে মারতে গিয়ে তামিমের হাতে ধরা পড়েন অ্যান্ডারসন। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি ১৪ বলে করেন ১৩ রান। ইনিংসের ১১তম ওভারে মাশরাফির বলে রান নিতে গিয়ে রানআউট হন টম ব্রুস। ব্যক্তিগত ৭ রানে ফেরেন তিনি।

দলীয় ৬২ রানে চার উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন কেন উইলিয়ামসন এবং কলিন ডি গ্রান্ডহোম। এই উইকেট জুটিতে আসে অবিচ্ছিন্ন ৮১ রান। শেষ পর্যন্ত ব্যাট চালিয়ে উইলিয়ামসন ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন। গ্রান্ডহোম করেন অপরাজিত ৪১ রান। উইলিয়ামসন ৫৫ বলে ৫টি চার আর ২টি ছক্কায় তার ইনিংস সাজান। এদিকে, গ্রান্ডহোমের ২২ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার আর ৩টি ছক্কার মার।

টাইগারদের হয়ে একটি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজ, সাকিব এবং রুবেল হোসেন। আগামী ০৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে দুই দল।

ওয়ানডেতে সুযোগ না পেলেও একাদশে ফেরেন পেসার রুবেল হোসেন। রান খরায় ভোগা সৌম্য সরকারের ওপরও আস্থা রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। ইনজুরির কারণে মুশফিকুর রহিম দলের বাইরে। প্রথম ওয়ানডেতে বাম পায়ের হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে, তৃতীয় ওয়ানডেতে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে টি-২০ সিরিজে ছিটকে গেছেন মার্টিন গাপটিল। স্কোয়াডে তার জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন ওডিআই সিরিজের সর্বোচ্চ রানস্কোরার ৩৩ বছর বয়সী নেইল ব্রুম। এ ম্যাচ দিয়ে কিউইদের হয়ে তিনজনের টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছে। এরা হলেন টম ব্রুস, দুই পেসার লুকি ফার্গুসন ও বেন হুইলার।

প্রসঙ্গত, ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল নিউজিল্যান্ড। পরিসংখ্যানে ব্ল্যাক ক্যাপদের সাফল্য শতভাগ। এখন পর্যন্ত পাঁচবারের মুখোমুখি সাক্ষাতে একবারও জয়ের দেখা পায়নি টাইগাররা। এর আগে সবশেষ গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে মোস্তাফিজ নৈপুণ্যে (একাই ৫ উইকেট নেন) কিউইদের ১৪৫ রানে আটকে রেখেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বড় ব্যবধানে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল।

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান, সাকিব অাল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, নুরুল হাসান (উইকেটরক্ষক), মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন।

নিউজিল্যান্ড একাদশ: কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), নেইল ব্রুম, কলিন মানরো, কোরি অ্যান্ডারসন, টস ব্রুস, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, লুক রঞ্চি (উইকেটরক্ষক), মিচেল স্যান্টনার, বেন হুইলার, ম্যাট হেনরি, লুকি ফার্গুসন।