তথ্য - প্রযুক্তি
  পর্যটক হারাচ্ছে সুন্দরবন
  06-12-2016



পর্যটক হারাচ্ছে সুন্দরবন। কয়েক বছরের ব্যবধানে এ বন ভ্রমণে পর্যটক কমেছে অর্ধেকের বেশি। দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকও কমছে ব্যাপকহারে। ফলে সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা খুলনা অঞ্চলের পর্যটনশিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা এ খাতে বিনিয়োগ করে লোকসান গুনছেন।
বন সংরক্ষক, খুলনা কার্যালয়ে সুন্দরবন পূর্ব এবং পশ্চিম বন বিভাগের দেওয়া গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে সুন্দরবনে এসেছিলেন দেশি-বিদেশি মিলিয়ে মোট ২ লাখ ২৭ হাজার ৩৮ জন পর্যটক। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংখ্যাটা এক লাখে নেমে আসে। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ব্যবধানে পর্যটকের সংখ্যা কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। মাঝের ২০১২-১৩ অর্থবছরে পর্যটক ছিলেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৭ জন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট পর্যটকের সংখ্যা আরও কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৪০ জনে। শুধু দেশি পর্যটক নয়, উল্লেখযোগ্য হারে কমছে বিদেশি পর্যটকও। বন বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে সুন্দরবনে বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন ৪ হাজার ১৬ জন। পরের কয়েক বছরে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমবেশি হয়েছে। তবে সম্প্রতি তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি, ৪ হাজার ৩৭০ জন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৬২ জন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে হয় ৩ হাজার ৮৬৮ জন। কিšদ চলতি অর্থবছরের  ১১ মাসের (২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ১৫ নভেম্বর) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই সময়ে বিদেশি পর্যটক এসেছেন মাত্র ১ হাজার ৬১০ জন। রাজনৈতিক অ¯িদরতা ও সাম্প্রতিক কয়েকজন বিদেশি হত্যা এর পেছনে ভূমিকা রেখে থাকতে পারে বলে পর্যটন ব্যবসায় যুক্তদের ধারণা। সুন্দরবনের বন বিভাগ জানায়, পর্যটকদের নির্ধারিত প্রবেশ ফি দিয়ে এবং ¯দানবিশেষে অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে ঢুকতে হয়। অভয়ারণ্য এলাকায় যেতে দেশি পর্যটকদের ১৫০ টাকা ও বিদেশিদের ১ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব দিতে হয়। ১০০ ফুটের নিচের নৌযানকে প্রতিদিন অব¯দানের জন্য তিন হাজার টাকা এবং ১০০ ফুটের বেশি নৌযানকে চার হাজার টাকা দিতে হয়। সুন্দরবনে পর্যটকদের যাওয়ার ব্যব¯দা করে এমন তিনটি ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে কথা বলেও পর্যটক হ্রাসের তথ্য পাওয়া  গেছে। তারা বলছেন, চলতি বছর ভরা মৌসুমেও বিদেশি পর্যটকের দেখা নেই। রয়েল বাংলা ট্যুরিজমের ব্যব¯দাপনা পরিচালক খোকন আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ বছর দেশি পর্যটক কম পাচ্ছি। তেমনি চলতি নভেম্বর মাসে একজনও বিদেশি পর্যটক পাইনি। বেঙ্গল ট্যুরসের কর্মকর্তা আজম খান বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনায় কয়েকজন বিদেশি নিহত হওয়ার পর আমাদের ২৪টি গ্রুপ ট্যুর বাতিল হয়ে গেছে। গত বছর হরতাল-অবরোধের মধ্যেও যা পর্যটক ছিল, এবার তা-ও পাচ্ছি না। পরি¯িদতির জন্য রাজনৈতিক অ¯িদতিশীলতা ছাড়াও প্রচারের অভাবকে দায়ী করেন সুন্দরবন ট্যুরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি মো. আলম। তিনি বলেন, বিদেশিরা সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেছেন। এ অব¯দা থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জানতে চাইলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (সুন্দরবন পশ্চিম) সাঈদ আলী খান বলেন, বাঘের বংশ বৃদ্ধির জন্য সুন্দরবন প্রবেশে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় সহজে সব পর্যটক ভিতরে ঢুকতে পারছেন না। ফলে দেশি-বিদেশি পর্যটক কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে। সুন্দরবন নিয়ে প্রচারণার ব্যাপারে তিনি বলেন, সামনে আরও নতুন নতুন প্রকল্প আসছে। তখন প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া হবে।