আন্তর্জাতিক
  ১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে চালবাজি হতদরিদ্রের অধিকার বাস্তবায়ন হোক
  01-11-2016

 

এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশে দারিদ্রতা ছিলো এক প্রকার পরিচিতি। কিন্তু শেষ দুই দশকে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা যেভাবে কমেছে তা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ববাসী অনেকের চোখে এক বিস্ময় চিহ্ন হয়ে আছে। ১০ বছর আগেও যে হার ছিল ২৮ শতাংশ, তা এখন ১২.৯ শতাংশে নেমেছে।

১৯৯১ সালে সামরিক সরকারের অবসান ঘটিয়ে নব রূপে শুরু হওয়া গণতন্ত্র আমাদের বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছাকাছি এনে দিয়েছে। চেষ্টা চলছে দারিদ্রতাকে জয় করে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার।

নিরন্তর  প্রচেষ্টা চলছে এই দারিদ্রতার হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার। তারই অংশ হিসেবে হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একইভাবে ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনের লক্ষ্যে ভিক্ষুকদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের বলেছেন সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা  প্রকৃত ভূমিহীন, নিঃস্ব ও গৃহহীন মানুষের তালিকা করার জন্য। তাদের বিনা মূল্যে ঘর করে দেওয়া হবে।

সমাজের সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকা ভাগ্যবিড়ম্বিত এসব মানুষের জন্য বর্তমান সরকারের গৃহীত কর্মসূচিগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক  প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এসব মহতী চেষ্টায় বাদ সাধছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী ও  প্রশাসনের কতিপয় লোভী মানুষ।

১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে চলছে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মী, মেম্বার-চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের চালবাজি। ১০ টাকা কেজির চাল হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ না করে চোরাইপথে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে এসব নেতা ও কর্মকর্তারা। কোথাও চালের বদলে আটা দেওয়া হচ্ছে। কার্ড বিতরণেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বলা যায়, চক্ষুলজ্জাহীন হয়ে সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে আওয়ামী লীগেরনাম ভাঙিয়ে নিজেদের উদরপূর্তিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দলের মধ্য পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়েই এসব অনিয়ম বেশি হচ্ছে। এমনও অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূলের তথাকথিত কিছু নেতা ভিক্ষুকের তালিকায় নিজেদের ও স্বজনদের নাম উঠিয়েছে। খুবই লজ্জার কথা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে নেওয়া ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা  প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান  প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ব্যাপক ঝুঁকি নেওয়ার পাশাপাশি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত ১৭ বার তাঁর জীবননাশের চেষ্টা হয়েছে কিন্তু তিনি দমে যাননি। একইভাবে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদ ও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এভাবে দল ও সরকারের যে ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে, তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে দলেরই কিছু লোভী ও স্বার্থপর নেতাকর্মী। মনে রাখতে হবে, শত ভালো কাজ যে সুনাম সৃষ্টি করে একটি খারাপ কাজই সেই সুনাম নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। আর এই সুযোগসন্ধানীরা দলেরও কোনো উপকারে আসে না। তাই দল ও দেশের স্বার্থেই এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

দেশ এগিয়ে চলেছে। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে যে স্বপ্ন জাতিকে দেখানো হয়েছে, আমরা চাই সেই লক্ষ্য পূরণে কোনো ধরনের অবহেলা না থাকুক, কোনো রকম কার্পণ্য করা না হোক। দেশের  প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে স্বপ্ন জাতির জনক দেখেছিলেন, তার বাস্তবায়ন করতে হলে স্বার্থপর-দুর্নীতিবাজদের  প্রতি কোনো রকম অনুকম্পা  প্রদর্শনের সুযোগ নেই।

কিন্তু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্ধ হওয়া ১০ টাকার চাল নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা যে নয় ছয় করছে তা দ্রুত বন্ধ করে জনগণের সুবিধা জনগণকে পাওয়া নিশ্চিত করা জরুরী।