বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  রাম্বুটান বাংলাদেশের মাটিতে চাষ
  01-10-2016

 

মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন:

 

বাংলাদেশের মাটিতে এই প্রথমবারের মতো মনকাড়া রসালো থাইল্যান্ডের রাম্বুটান ফলের চাষাবাদে সফলতা অর্জন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অজপাড়াগাঁয়ের ওসমান গনি। তিনি নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের একজন সাধারণ পল্লী চিকিৎসক।

থাইল্যান্ডের অতি সুস্বাদু, পুষ্টিকর রাম্বুটান ফলের সাথে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ মোটেও পরিচিত নন। কিন্তু যারা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়া গেছেন তারা ওই ফলটির সাথে পরিচিত। জনপ্রিয়তার কারণে ওইসব দেশে প্রচুর পরিমাণে রামভুটান চাষাবাদ হয়ে থাকে। রাম্বুটান দেখতে অনেকটা আমাদের দেশীয় কদম ফুলের মতো। কাঁচা অবস্থায় এই বিদেশী ফলটি দেখতে সবুজ বর্ণের হলেও পাকার পর টকটকে লাল রং ধারন করে। ছোট, বড় সবার কাছে আগ্রহের কারণে বিদেশী অতি লোভনীয় সুমিষ্ট এই ফলটির চাহিদা দিন দিন ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

এ দিকে দেশের মাটিতে বিদেশী ফলের চাষ করে পল্লী চিকিৎসকের ভাগ্য বদলের সংবাদে অনেকে এখন উৎসাহী হয়ে সেখান থেকে রাম্বুটানের চারা সংগ্রহ করছেন। নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ড. তরুণ কান্তি শিকদার, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিলাষ চন্দ্র পাল, অন্যান্য কর্মকর্তারা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ওই ফলটি পরখ করে দেখতে ওসমান গনির বাড়িতে ছুটে যান। ফলটি খেয়ে তারা সবাই প্রশংসা করেছেন। এ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সেখানে পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে কিছু ফল সাথে করে নিয়ে যান।

ওসমান গনি নিজেকে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র রাম্বুটান ফল চাষে সফল ব্যক্তি দাবি করে বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবন শেষে ১৯৯৩ সালে দেশে ফিরে আসার সময় নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্য দুই কেজি রামভুটান সাথে নিয়ে আসেন। ফল খাওয়ার পর অবহেলায় এমনিতে বীজগুলো অন্যান্য উচ্ছিষ্টের সাথে বাড়ির আঙিনায় ফেলে দেন কোনো কিছু না ভেবেই। কিন্তু কিছুদিন পর ফেলে দেয়া ওই বীজ থেকে অঙ্কুরিত হয়ে চারার জন্ম নিয়ে অযতœ অবহেলায় বাড়তে থাকে। বাড়ির আগাছা পরিষ্কার করার সময় ওসমান গনির দৃষ্টিতে পড়ে রাম্বুটানের দু’টি চারা। তখন তিনি আগ্রহী হয়ে চারা দু’টির পরিচর্চা করতে থাকেন। চার বছর পর চারা দুটি বড় হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে প্রথম ফলন দিতে শুরু করে। বছরের জুন থেকে জুলাই এই দুই মাস রাম্বুটান পরিপক্ব হয়ে খাওয়ার জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে।

এ বছর ওসমান গনি একটি গাছ থেকেই ৯০ কেজি ফল সংগ্রহ করেন বলে দাবি করেছেন। প্রতি কেজি রাম্বুটান ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। রাম্বুটান ও চারা বিক্রি করে তিনি এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। জমি বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়েও আলোর মুখ দেখতে না পেয়ে শেষে হতাশ হয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে আসেন ওই পল্লী চিকিৎসক। ওই ফলের অছিলায় তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাওয়ায় তিনি এখন ঘরে বসে অতি সহজেই অর্থ উপার্জন করছেন। এই সফলতায় তিনি এখন বাণিজ্যিকভাবে রাম্বুটান চাষের চিন্তা-ভাবনা করছেন। ওসমান গনি জানান, তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাম্বুটান প্রত্যক্ষ করে প্রফেসর শামছুল আলমের সাথে এ বিষয়ে মত বিনিময় করেছেন। কিন্তু সঠিক পরিচর্চার অভাবে কেউ সফলতা অর্জন করতে পারেননি বলেও দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো: আব্দুর রহিম নয়া দিগন্তকে বলেন, রাম্বুটান সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। লিচু জাতীয় ওই ফলটির নানা গুণাগুণ রয়েছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়া থেকে আমাদের দেশের উপযোগী কলমের চারা এনে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা সম্ভব। তবে পাহাড়ি এলাকায় এর ফলন ভালো হয়ে থাকে। শুনেছি নেত্রকোনায় কে যেন ওই ফলের চাষ করছেন। তিনি কোন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন, বিষয়টি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর ব বোঝা যাবে আসলে এর অগ্রগতি ও সম্ভাবনা কতটুকু। অনেক চেষ্টার পর গত বছর বাকৃবির ১১ টি গাছে ফলন দিলেও এ বছর একটি গাছেও কোনো ফল দেয়নি। তবে এ নিয়ে আমাদের গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।