বিশেষ প্রতিবেদন
  সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ, অপপ্রচার ও কুচক্রের শিকার
  01-10-2016

সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ, অপপ্রচার ও কুচক্রের শিকার

ঐতিহ্যবাহী রহিম স্টিল কারখানা রক্ষায় বৃহত্তর আন্দোলনে শ্রমিক-কর্মচারীরা

 

মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন:

 

ঢাকা-চিটাগাং মহাসড়কের নারায়নগঞ্জের সোনারগাও কাঁচপুর এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী রহিম স্টিল মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা, চাদাবাজি ও কারখানার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহলের অপপ্রচার বন্ধ এবং সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবিতে ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে। এ সময় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করলে কাঁচপুর থানা হাইওয়ে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

২ কিমি. জুড়ে প্রায় ঘন্টা ব্যাপী কাঁচপুর বাসস্টান্ড থেকে নয়াবাড়ি পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে ৩ হাজারের অধিক শ্রমিক রহিম স্টিল মিলকে রক্ষার দাবীতে জড়ো হয়। এ সময় কারখানাটি কুচক্রী মহলের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে কর্মরত শ্রমিকরা বিভিন্ন লেখা সম্মিলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ করে। শ্রমিকরা বলছেন আমরা গরীব মানুষ, চাকুরী করে কোন রকম ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। কারখানাটি বন্ধ হলে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক পরিবারের প্রায় ২০ হাজার লোক না খেয়ে অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করবে। ফলে কারখানাটি যাতে বন্ধ না হয় সে জন্য তারা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

কর্মসূচীতে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন দেশের অন্যতম রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার জন্য দীর্ঘদিন কাঁচপুর এলাকায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করছে। এ ছাড়া একটি পত্রিকায় ক্রমাগত অসত্য সংবাদ পরিবেশন করছে। ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে স্বনামধন্য ও শীর্ষ স্থানীয় এই কারখানাটি বন্ধ করার ষড়যন্ত্রে হিসাবে কয়েটি নি¤œশ্রেনীর রড উৎপাদন কারখানায় মালিক ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সাথে আঁতাত করছে। কারখানাটি বন্ধ হলে অধিকাংশ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। শ্রমিকরা আরো বলেন- অবিলম্বে কারখানার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ না হলে এই ৩ হাজার শ্রমিক  ও তাদের পরিবার এবং স্থানীয় লোকজন নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে আমরণ অনশন করবেন। সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

জানা যায় ১৯৫৮ সালে রহিম স্টিল মিলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি গুনগত মানের বিবেচনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য পুরস্কার পায়। রহিম গ্রুপের অন্যান্য স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই কারখানায় হাজার হাজার লোক কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটিও সুনামের সাথে তাদের ব্যবসা চালিয়ে আসছে। রহিম স্টীলের রড এখনও দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে। রহিম স্টীলের প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার হাজী আব্দুর রহিম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট অবদান রেখেছিলেন। এ ছাড়া রহিম স্টিল শিল্পগোষ্ঠীর অর্থায়নে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডতে ভাটিয়ারি  এলাকা গরীব-দুঃখী ও সাধারণ জনগণের রোগ নিরাময়ের একমাত্র ভরসাস্থল মুক্তিযোদ্ধ মেমোরিয়াল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। সম্প্রতি ঢাকার আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ এতিম খানার উন্নয়নে অবদান রাখেন। সীতাকু-তে আলহাজ্ব সুফিয়া রহিম দাতব্য ডায়বেটিকস ও চক্ষু হাসপাতাল নির্মানাধীন। সরকারকে নিয়মিত কর প্রদান, আর্ত মানবতার সেবায়, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ও সামাজিক কর্মকা-ে সহযোগীতা করে দেশ ও জাতির কল্যাণে যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে দেশের জনপ্রিয় অন্যতম সংবাদপত্র দৈনিক যুগান্তর গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম পাতায় রহিম স্টিল মিলে মৃত্যুকূপ শিরোনামে শীর্ষ সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদটিতে উল্লেখ করা হয় রহিম স্টিল মিলে ক্র্যাসিং ইউনিটে উৎপাদন করা হয় প্রানঘাতি কোয়ার্টাস পাউডার, ১০ বছরে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু, অসুস্থ দুই শতাধিক। খবরটি মানবাধিকার বিষয়ক এশিয়ার একমাত্র নিয়মিত প্রকাশনা মানবাধিকার খবরের দৃষ্টিগোচর এবং বিষ্মিত হয়। অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন সরকারী সংস্থার মত মানবাধিকার খবর নিজস্ব ভাবে খবরের পেছনের খবর অনুসন্ধান করতে থাকে। অনুসন্ধানে ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় ভিন্ন চিত্র। প্রতিবেদনে উল্লেখিত যে সব শ্রমিক মারা গেছে সে সব শ্রমিক অধিকাংশ বয়স্ক, তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কল কারখানায় কাজ করেছেন। তারা যে রহিম স্টিল মিলে কাজ করার দরুন সৃষ্ট রোগে মারা গেছে, সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষায়, পোস্টমর্টেম (ভিসেরা) রিপোর্ট সহ বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমান দেখাতে পারেন নি। উক্ত প্রতিবেদনে শহীদ নামে একজনকে মৃত বললেও ‘আমি শহীদ মরিনাই আমি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছি’ একাধিক পত্রিকায় শিরোনাম হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। উক্ত শহীদ আক্ষেপ করে বলেন যুগান্তরের মতো একটি বহুল প্রচারিত একটি দৈনিকে এরুপ কাল্পনিক সংবাদ প্রকাশ করায় বাগুড়ী এলাকাবাসীর মাঝে নান গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে শহীদ মিয়া জানান, আমি রহিম স্টিল মিলে দীর্ঘ ১৩ বছর কাজ করে আসছি। গত দুই দিন আগে কোয়ার্টাস পাউডারের গ্যাসে আমার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। আমি শহীদ মরি নাই সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক আছি এবং আমার এই ১৩ বছরের চাকুরীর জীবনে কোন প্রকার সামান্য দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই নাই। আমি বিভ্রান্তিমূলক এ সংবাদ প্রত্যাহারের জন্য যুগান্তর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। মিডিয়া সাধারণ মানুষের উপকারের জন্য, ক্ষতির জন্য নয়। এ রুপ কাল্পনিক সংবাদ সামাজিক উন্নয়নে চরম বাধা সৃষ্টি হতে পারে। ভবিষ্যৎ সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশনের জন্য পত্রিকা কর্তৃপক্ষের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে। এ দিকে যুগান্তর পত্রিকার খবরের জের ধরে ২ টি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজন অতিরিক্ত জেলা জজের নেতৃত্বে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চার সদস্যের ও একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কলকারখানা এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর তিন সদস্যবিশিষ্ট আলাদা দুটি কমিটি গঠন করে। জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক(অতিরিক্ত সচিব) শামসুজ্জামান ভূইয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

গত ২২ সেপ্টেম্বর সকালে অতিরিক্ত জেলা জজ ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মোঃ শরীফুদ্দিন মিল পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের বলেন ২০ সেপ্টেম্বর যুগান্তরে রহিম স্টিলে মৃত্যুকূপ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বপ্রোনদিতভাবে দতন্ত টিম গঠন করে। মানবাধিকার কমিশনের মামলা নাম্বার সুয়োমোটা-০৭/১৬। আমরা এ টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রথমেই রহিম স্টিল মিল অভ্যন্তরে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি, তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি পরে বাঘরি এবং টেঙ্গাবো গ্রামের মৃত বেশ কয়েকজন শ্রমিকের স্বজন ও অসুস্থ শ্রমিকের সাথে কথা বলেছি। প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে আরও তথ্য উপাত্য এবং সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। পরে প্রাপ্ত তথ্য প্রতিবেদন আকারে কমিশনে পেশ করা হবে। তদন্ত শেষ না হতেই তদন্তে সত্যতা পেয়েছে মানবাধিকার কমিশন বলে যুগান্তরে যে খবর বেরিয়েছে এ প্রসঙ্গে তদন্ত দলের প্রধান মোঃ শরীফুদ্দিন মানবাধিকার খবরের এক প্রশ্নের জবাবে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিজ কার্যালয়ে মানবাধিকার খবরকে জানান এইটা সম্পূর্ণ যুগান্তরের নিজস্ব ব্যাপার। তদন্তের কোন রিপোর্টই আমরা প্রকাশ করিনি। তবে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে পেশ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের নিকট যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান তদন্ত রিপোর্ট না দেখে আমি কিছুই বলতে পারছি না। এ দিকে যুগান্তরের সিনিয়র প্রতিবেদক সাইদ আহমেদ গত ২ অক্টোবর দুপুরে  মানবাধিকার খবরকে জানান মানবাধিকার কমিশন তদন্তের সময়ে তদন্তের সত্যতার অভিব্যাক্তি প্রকাশ করে সেটাই আমরা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। উক্ত প্রতিবেদকের বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে থাকায় এর চেয়ে বেশী কিছু বলতে চাননি।

এ ব্যাপারে রহিম স্টিল কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে মোঃ শাহাতাব হোসেন রানা এ প্রতিবেদককে জানান, কোরবানীর ঈদের আগে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ও সংশ্লিষ্ট অসাধু রিপোর্টার চাঁদা দাবী করে। তাদের চাহিদা মত চাঁদা দিতে না পারায় একটি পত্রিকা সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন, অসত্য সংবাদ পরিবেশন করে মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে মত বিরোধ সৃষ্টির মাধ্যমে মিলটি বন্ধ করার পায়তারা করছে। দীর্ঘদিন ধরেই এ গ্রুপটি চাঁদাবাজি করে আসছে। কর্তৃপক্ষ আরো জানান গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান  মোঃ মহসিন ছিলেন আমেরিকায়, যার যথেষ্ঠ প্রমান আমাদের হাতে রয়েছে। অথচ যুগান্তর পত্রিকায় ২৫ সেপ্টেম্বর অন্য একটি  প্রতিবেদনে বলা হয় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো: মহসিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ইসরাইল ২৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত কারখানায় অবস্থান করে শ্রমিকদের ক্ষোভ প্রশমনে ও উৎপাদন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। ঐ রিপোর্টটিও ছিল অসত্যে ভরপুর। অনেক সামাজিক পেশাজীবী সংগঠন  না জেনে একটি পত্রিকায় উদ্দেশ্য প্রনোদিত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি  করে কারখানাটির বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন। এতে এক ধরনের বিব্রান্তির সৃষ্টি হয়। অপরদিকে, রহিম স্টিল কারখানাটি রক্ষার্থে দেশের জনপ্রিয় প্রথমশ্রেনীর পত্রিকা, প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কন্ঠ, আমাদের সময়সহ স্থানীয় বিভিন্ন জাতীয় মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে।

রহিম স্টিল কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উদঘাটন করে  এবং সন্ত্রাসী চাদাবাজদের হাত থেকে কারখানাটি যাতে রক্ষা পায় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।