রাজনীতি
  মানবাধিকার খবরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ভারতে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশে উদ্ধারকৃত বৈশাখী
  01-09-2016

মোঃ রিয়াজ উদ্দিন/ মনোয়ার ইমাম:

 

ভারতের পশ্চিমবাংলার দক্ষিণ চব্বিশপরগনা থেকে প্রেমের টানে বাংলাদেশী যুবক স্বপনের সাথে পালিয়ে আসা বৈশাখী কা-ার(১৫) কে একটি মানবাধিকার সংস্থার সহযোগীতায় উদ্ধারের পর দেশে ফেরার অপেক্ষা করছে। গত ২২ জুলাই বরিশাল র‌্যাব ৮ উজিরপুর থেকে উদ্ধার করে। বর্তমানে বৈশাখী জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি নিয়ন্ত্রিত গাজীপুরের একটি সেফহোমে রয়েছে। তার বাড়ি গোসাবা থানার জটিরামপুর গ্রামে। পিতার নাম অরুন কা-ার

 

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৮ জুলাই বৈশাখীর মা নিবেদিতা কা-ার কলকাতার আলীপুর ভবানী ভবনে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পুলিশ সুপার এক লিখিত অভিযোগ জানান। আমার নাবালিকা কন্যা বৈশাখী গোসাবা থানার রাঙা বেলিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। তার বাড়ির পাশে রয়েছে একটি রিসোর্ট। সেখানে ঠিকাদার অনিমেশ ম-লের লোকজন ঐ রিসোর্টে কাজ করত। তার কন্যা কুমারী বৈশাখীকে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসার পথে অনিমেশ ও লেবার স্বপন মল্লিক প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্ত করত। অশ্লীল কথাবার্তা, কু প্রস্তাব দিত। বৈশাখী তাদের জানালে আমরা তাদেরকে এ ধরনের কথাবার্তা না বলার জন্য নিষেধ করি। কোন কথা কর্ণপাত না করে বৈশাখীকে প্রতিনিয়ত তারা উত্ত্যক্ত করতে থাকে।

গত ২১ জুন সকাল ১০ টায় বৈশাখী স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। সর্বত্র খোজাখুজি করে না পেয়ে ঠিকাদার অনিমেশকে জিজ্ঞাসা করলে, সে বলে তার লেবার স্বপন মল্লিক বৈশাখীকে ফুসলিয়ে নিয়ে গেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসবা থানায় গত ২৫ জুন এ বিষয়ে একটি ডায়েরি করা হয়। যার নং-১২৬। বৈশাখীর মা বলেন, অনিমেশ ও তার স্ত্রীর সহযোগীতায় স্বপন তার নাবালিকা কন্যাকে অপহরণ করে অসৎ উদ্দ্যেশে বাংলাদেশে পাঁচার করেছে। তার মেয়েকে উদ্ধার ও পাচারকারীদের শাস্তি কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে বৈশাখীর মা অনিমেশকে ১ নং ও তার স্ত্রীকে ২ নং সর্ব সাং কদমতলা মোড়, বেহালা ঠাবুর পুকুর, কলকাতা, ফোন: ৯০৫১০৬৬৩৬৫ এবং স্বপন মল্লিককে ৩ নং সাং- কলাভিটা, পো: বেশার পল্লী, বানরীপাড়া, বরিশাল, বাংলাদেশ ফোন:   ০১৮২৭৯১৮৭১১ কে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করে।

বৈশাখীর মা জানান, নিখোঁজের সময় সে থ্রিপিচ(চুরিধার) পরে ছিল। তার উচ্চতা ৪.৭ ফুট, গড়ন  মাঝারি, রং ফর্সা, বয়স ১৫ বছর।

নিখোঁজের পর অভিযোগের ভিত্তিতে মানবাধিকার খবর অনুসন্ধান করে জানতে পারে যে, বৈশাখী স্বপনের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। তখন বৈশাখীর মা-বাবা বৈশাখীকে অন্যত্র বিবাহ দেওয়ার উদ্যোগ নিলে সে স্বপনের সাথে পালানোর চেষ্টা করে। স্বপন তাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা করে ২ দিন সীমান্ত এলাকায় থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সরাসরি স্বপনের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বানরী পাড়ায় চলে আসে। বৈশাখীর মা আরও অভিযোগ করেন বানরী পাড়া থানায় ফোনে অভিযোগ করলে তাকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে স্বপনের পক্ষে কথা বলে। এ ব্যাপারে বানরীপাড়া থানার ওসি জিয়াউল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন বরিশাল র‌্যাব ৮ আমাদেরকে না জানিয়ে তাকে গত ২২ জুলাই উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। পশ্চিম বঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা গোসাবা থানার ওসি সুবিদ ঢালী মানবাধিকার খবরকে জানান বাংলাদেশে উদ্ধারকৃত বৈশাখীকে ভারতে ফেরত আনার ব্যাপারে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দুতাবাসকে সব ধরনের কাগজপত্র সরবারহ করা হয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে বৈশাখীকে ফেরত পাবার জন্য অপেক্ষ করছি। এ ব্যাপারে মানবাধিকার খবরের কাছে সবধরণের সহযোগিতা চেয়েছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ভারতীয় দুতাবাস জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সহায়তায় বরিশালের উজিরপুর থানা থেকে র‌্যাব ৮ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী মনিরা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন ভারতীয় নাবালিকা মেয়ে বৈশাখী বরিশালের বানরীপাড়া অবস্থান করছেন জানতে পেরে আমরা উদ্ধারে তৎপর হই। তার ব্যাপারে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গত ২২ জুলাই সন্ধ্যায় উজিরপুর থেকে উদ্ধার করি র‌্যাব ৮ এর সহায়তায়। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এড. সালমা আলী এ প্রতিবেদককে বলেন মেয়েটি বর্তমানে আমাদের গাজীপুর সেফহোমে রয়েছে। তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। আমরা এ ব্যাপারে ভারতীয় দুতাবাসের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছি। আশাকরি খুব শীঘ্রই সকল আইন প্রকৃয়া শেষ করে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো যাবে।

এ ব্যাপারে বরিশাল র‌্যাব-৮ এর কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান আমরা মেয়েটিকে উদ্ধার করে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির কাছে হস্তান্তর করেছি।

অপরদিকে র‌্যাব ৮ এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জানা যায়, ভারতের চব্বিশ পরগনা থেকে এক মাস আগে নিখোঁজ বৈশাখী কা-ার নামের এক তরুণীকে বরিশালের উজিরপুর উপজেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ২২ জুলাই শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে র‌্যাব-৮-এর সদস্যরা মানবাধিকার সংগঠন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে। বৈশাখী পশ্চিমবাংলার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গোসাবা থানার জটিরামপুরগ্রামের বাসিন্দা এবং রাঙাবেলিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। উদ্ধারের পর বৈশাখী জানিয়েছে, প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে বাসার গৃহপরিচারক স্বপন মল্লিকের সঙ্গে স্বেচ্ছায় উজিরপুরে চলে আসে। র‌্যাব-৮-এর লেফটেন্যান্ট রুহুল আমিন জানান, ২২ জুন স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেনি ওই তরুণী। পরবর্তীতে তার মা স্থানীয় থানায় একটি জিডি করেন। পরে জিডির কপিটি বাংলাদেশের

ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো হয় উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ীগ্রামের মনিন্দ্র মল্লিকের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করেন র‌্যাব-৮-এর সদস্যরা।

লেফটেন্যান্ট রুহুল আমিন জানান, মেয়েটি স্বীকার করেছে জামবাড়ীগ্রামের স্বপন মল্লিক কলকাতায় তাদের বাড়িতে রঙের কাজ করতেন। এক পর্যায়ে স্বপনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরে সে স্বেচ্ছায় পালিয়ে স্বপনদের বাড়িতে এসে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। অভিযানে স্বপন মল্লিককে আটক করা যায়নি।