এ এইচ এম ফারুক :
একের পর এক গুপ্তহত্যা ও হামলা বেড়েই চলেছে। মধ্যপাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা হয়ে ভারত উপমহাদেশেও জঙ্গিবাদের বিস্তার লক্ষ করা গেছে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিনের শঙ্কাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে বাংলাদেশেও একের পর এক হামলা ও খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে তথা কথিত আইএস। সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যাদের নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবি ও আনসারুল্লা বলে দাবি করে আসছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় হাই সিকিউরিটি এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশানের কুটনৈতিক পাড়ায় স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিসানে ১ জুলাই অভাবিত জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। তরপর একসপ্তাহের মাথায় ৭ জুলাই ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের নিকটে হামলা ও সংঘর্ষ এবং জুলাই মাসজুড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ২৭ আগষ্ট নারায়নগঞ্জ শহরের পাইক পাড়ায় গুলশান হামলাসহ জঙ্গিদের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশ ও কানাডর দ্বৈত নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী দুই সহযোগী নিয়ে নিহত হয়েছে পুলিশের জঙ্গি বিরোধী বিশেষ অভিযানে। সব মিলিয়ে দেশে জঙ্গি সম্পৃক্ত হামলায় দেশি-বিদেশী নাগরিক পুলিশ ও জঙ্গি মিলে নিহতের সংখ্যা এখন প্রায় অর্ধশত। একাদিকে জঙ্গি হামলা অন্যদিকে জঙ্গি বিরোধী হামলা।
এ হামলার আগেও বিচ্ছিন্নভাবে সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে টার্গেট কিলিং। কিন্তু গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় এমন সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিত হামলা কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা দেশ ও বিশ্বকে। বিশেষ করে ভারত, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় এটা বলা যায়, আর বসে থাকার সময় নেই। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে হবে।
মনে রাখতে হবে গুলশানের হামলায় মানবতা বিরোধী কর্মকা- সাধারণ মানুষের মনে শঙ্কা ও ভীতি বাড়িয়ে তুলেছে। এ প্রেক্ষাপটে আইনশৃংখলা বাহিনী সারা দেশে সন্ত্রাসবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। বলা যায়, সন্ত্রাসীদের ধরতেই আইনশৃংখলা বাহিনী এখন অধিক তৎপর। আর এ তৎপরতা যখন শুরু হয়, তার কিছুক্ষণ পরই পাবনায় সেবাশ্রমের এক সেবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তারও এক সপ্তাহের মাথায় শোলাকিয়ায় হামলা; স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, এটি কি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ? নাকি দেশের প্রতি চ্যালেঞ্জ?
এ বিষয়টি নিয়ে সরকার, বিরোধীদল ও রাজ নেতাদের রাজনৈতিক সমাধান খুজে বের করা দরকার। কারণ দেশের সাধারণ মানুষ কোনো কিছুতেই নিñিদ্র নিরাপত্তার ব্যাপারে আস্থা খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু এ সংকটময় পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে কেন? দেশের পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রীও হুশিয়ারি দিচ্ছেন। আবার প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারি, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের পরও একের পর এক হামলা এবং হত্যাকা- আমদের সর্বসাধারণকে নির্বাক হতে অনেকটা বাধ্য করেছে।
৮ জুন প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি আলোচিত হত্যাকান্ডের কথা স্মরণ করে বলেছেন, ‘মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার ফাদারকে আক্রমণ করা হচ্ছে। শিক্ষক হত্যা করা হচ্ছে। এমনকি তারা পরিবারের ওপর আঘাত হানছে। হত্যাকারীরা সর্বোচ্চ সাজা পাবেই।’ দেশের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি যেখানে বিষয়টি নজরে রাখছেন, সেখানে আমাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রটি মজবুত হবে মনে করাটাই স্বাভাবিক। এর ব্যত্যয় ঘটলে শঙ্কার পরিমাণ বাড়াটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়।
ক্রমাগত ঘটে যাওয়া হামলা-হত্যার ঘটনা, সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি, প্রকারান্তরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার ঘটনায় আমরা বিচলিত। একটি স্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ দেশে মসজিদে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ে বাধা, ধর্মসেবকদের সেবা পালনে বাধা, পুরোহিতদের স্বাধীনতায় আঘাত, লেখক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের চিন্তার স্বাধীনতায় বাধা, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিবারের ওপর কাপুরুষোচিত আক্রমণ, বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তায় বাধা ইত্যাদি নিঃসন্দেহে সেই রাষ্ট্রটির জন্য সতর্ক সংকেত। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সবমিলিয়ে দেশে একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা ভাবতে কষ্ট হয়। বলা যায়, প্রকৃতপক্ষেই আমরা সবাই নিরাপত্তার সংকটে ভুগছি। বিশেষ করে আমরা এজন্য আরও শংকিত যে, একজন চৌকস, নীতিবান পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী যদি দিনেদুপুরে হত্যার শিকার হন, আর সেই হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হতে সপ্তাহ গড়িয়ে মাসে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়, তাহলে আমার মতো সাধারণের নিরাপত্তা কোথায়! আমরা কার কাছেই বা নিরাপত্তা চাইব!
আমরা নাগরিক হিসেবে যা বুঝতে পারি তা হলো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থাহীনতা এবং দোষারোপের সংস্কৃতিও এর জন্য কোনো অংশে কম দায়ী নয়। জঙ্গি সংগঠনগুলো অনেক সময় এসব ইস্যুকে মাথায় রেখে তাদের কিলিং মিশন চালিয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের অন্যতম নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে বিবেচিত হবে মনে করা হলেও আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে বিপাকে ফেলার টার্গেট নিয়ে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে চলে। এতে যদি সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্নও হয় তাতে তাদের মাথাব্যথা থাকে না। এখানে ক্ষমতায় যাওয়ার ঘৃণ্য প্রতিযোগিতাই অধিক লক্ষ করা যায়।
গত বছর ২৬ নভেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজরত মুসল্লিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং ইমামসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার এক মাস না পেরোতেই শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর পুনরায় এমন হামলার ঘটনা পুরো দেশবাসীকে হতবাক করেছিল। সিরিয়া, পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসী হামলা আমাদের দেশেও ঘটছে এটা খুবই উদ্বেগজনক। এই হামলা থেকে এমন আশঙ্কা করলে ভুল হবে না যে, হিন্দু-মুসলমান, শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।
বাংলাদেশের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ উদারনৈতিক সমাজব্যবস্থায় জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা বহুদিন থেকেই চলে আসছে। ২০০৩ সালে দেশে জেএমবি নামক জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জঙ্গিরা প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা শুরু করে। এরপর হরকাতুল জিহাদসহ আরও কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন মাঠে নামে। সারা দেশের ৬৩ জেলায় একইদিনে অল্প সময়ের ব্যবধানে সিরিজ বোমা হামলা এবং তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় হামলার মতো ভয়াবহ অবস্থারও সৃষ্টি হয় জঙ্গিদের দ্বারা। জঙ্গিবাদের তৎপরতায় এখন অবশ্য অনেক ভিন্নতা এসছে। টার্গেট করা হচ্ছে মুক্তমনা লেখক, বুদ্ধিজীবী, সংখ্যালঘু ও বিদেশীদের। সেই সাথে শপিং মল, ঈদ জামায়াতসহ জনবহুল স্থানগুলোকেও টার্গেটে নিয়েছে বলে জানাগেছে গোয়েন্দা সূত্রে।
বাংলাদেশে গত এক দশকেরও বেশি সময় কোনো বিদেশী নাগরিককে হত্যা বা টার্গেট করার নজির নেই। সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০০৪ সালে। তখন বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার ছিলেন আনোয়ার চৌধুরী। তার ওপর সিলেটে হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী। তারপর থেকেই জঙ্গি কর্মকা-ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তা সত্ত্বেও নাগরিকদের মনে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।
জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য জঙ্গি সংগঠনের কৌশলগুলো চিহ্নিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব এবং সাধারণ মানুষকে অনৈক্য ও বিভেদ ভুলে জঙ্গি দমনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এখনই আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে না পারলে এর বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। শুধু সরকার কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষে এর মূলোৎপাটন করা কোনোভাইে সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে সোচ্চার ও সচেতন হতে হবে।
সরকারকে যেমন রাজনৈতিক ঐক্য সৃষ্টি করে এই বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ নির্মূলের ব্যবস্থা নিতে হবে, তেমনি আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তথা পুলিশকেও রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে এসে তার দায়িত্বে প্রতি আরো সচেতন হতে হবে।
আমরা মনে করি বাংলাদেশের পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর যোগ্যতা নিয়ে কোন সন্দেহ না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সক্ষমতা এবং মানসিকতাকে দেখতে হবে এর বাইরে থেকে।
একের পর এক জঙ্গি আস্তানা :
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কার করছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। এসব আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়ে ঘটেছে সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে সাম্প্রতিক অভিযানগুলোতে। একদিকে যেখানে সেখানে লুকিয়ে থাকা জঙ্গি, অন্যদিকে এই গোলাগুলি, গ্রেনেড নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণ- সবমিলিয়ে উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে আছে রাজধানীবাসী।
সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ১ জুলাই রাজধানীর অভিজাত ও উচ্চ-নিরাপত্তাবেষ্টনির এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা ও কমান্ডো অভিযান। এই ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২৮ নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে।
এরপর ১৬ জুলাই রাতে মিরপুরের জনবহুল এলাকা পশ্চিম শেওড়াপাড়ার একটি আবাসিক ভবনে জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে এখানে কিছু বিস্ফোরক ও জঙ্গিদের ব্যবহৃত পোশাক-আশাক উদ্ধার হলেও কোনো জঙ্গিকে হাতেনাতে আটক করা সম্ভব হয়নি। ফলে কোনো সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেনি।
এ ঘটনার ১০ দিনের মাথায় মঙ্গলবার মিরপুরের আরেক জনবহুল এলাকা কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে পুলিশ-জঙ্গির মধ্যে চলে গুলিবিনিময় ও গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনা। ভোররাতে পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াত ঘটনাস্থলে এক ঘন্টার অভিযান চালায়। মারা যায় ৯ জঙ্গি।
এসব ঘটনারও আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড্ডার সাতারকুলে পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল আরেক জঙ্গি আস্তানায়। সে অভিযানে জঙ্গি হামলায় আহত হন গোয়েন্দা পুলিশের এক পরিদর্শক। গোয়েন্দাদের দাবি অনুযায়ী সেখান থেকে দুই জঙ্গিকে আটক করা হয়।
তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুরের ঘনবসতিপূর্ণ নবোদয় হাউজিংয়ের একটি ফ্ল্যাটে জঙ্গিদের বোমা কারখানার সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঐ ফ্ল্যাট থেকে হ্যান্ড গ্রেনেড, বিপুল পরিমাণ বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, উদ্ধার হওয়া গ্রেনেড ও বোমাগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী ও স্বয়ংক্রিয় ছিলো। পরে গ্রেনেড ও বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বোমা ডিসপোজাল ইউনিট। অবশ্য ওই বাসা থেকে তখন কাউকে আটক করতে পারেনি গোয়েন্দারা।
একই সূত্র ধরে ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানে জঙ্গি আস্তানা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বোমা, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছিল। সেটি ছিল দক্ষিণখানের সরদারপাড়া এলাকার আইডিয়াল স্কুল সংলগ্ন ২৪২ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট। এটিও একটি জনবহুল এলাকা। তবে সেখান থেকেও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
প্রতিবারই এধরনের অভিযানে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। আর উচ্চনিরাপত্তার গুলশান এলাকা থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্নপ্রান্তে জঙ্গি তৎপরতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি দমন অভিযানে বর্তমানে পুরো ঢাকাবাসীর মনেই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রশ্ন ওঠেছে গোয়েন্দা সক্ষমতা নিয়েও :
গুপ্ত হামলা, মসজিদ-মন্দিরে হামলা, লেখক-প্রকাশক-ব্লগার হত্যা, গুলশানের হলি আর্টিসানে আক্রমণ, শোলাকিয়ায় বোমা হামলার মতো একের পর এক ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দক্ষতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধি হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রশ্নে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। তারা অদক্ষ বলে আগাম তথ্য পায় না। এর সুযোগ নিচ্ছে জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসীরা। ‘দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও বনসাই করে রাখা হয়েছে’ বলেও অভিমত দিয়েছেন নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম মানবাধিকার খবরকে বলেন, গোয়েন্দা সক্ষমতা নির্ধারণে তিনটি উপাত্তের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, যারা গোয়েন্দা সংস্থার বস, বিশেষ করে রাজনৈতিক বস তারা চান কি না গোয়েন্দা সংস্থার সক্ষমতা বাড়ুক।
দ্বিতীয়ত, সংস্থার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। তৃতীয়ত, অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সরেজমিন পরিস্থিতির মূল্যায়ন ও এ থেকে শিক্ষা নেওয়া।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যোগ্যতার ঘাটতি নেই। যা আছে তা হলো মূল্যায়ণ, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সীমাবদ্ধতা।
এখন আসুন আমাদের বাস্তবতার দিকে, আমাদের দেশের রাজনৈতিক বসদের (কর্তৃপক্ষের) নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থার চেয়ে বাইরের গোয়েন্দা সংস্থাকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা আছে। ফলে বৃক্ষকে তার নিজস্ব গতিতে বড় হতে না দিয়ে যেমন বনসাই করে রাখা হয়। তেমনি আমি মনে করি আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও বনসাই করে রাখা হয়েছে।
গোয়েন্দাদের সক্ষমতা প্রশ্নে আরেকটি বিষয় হলো আমাদের রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ তাদের (গোয়েন্দা) সক্ষমতা চায় কি না। চাইলে কতটুকু চায়?
এবার আসুন গোয়েন্দা সংস্থাদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের বাস্তবতার দিকে। কর্তৃপক্ষ যখন রাজনৈতিক বিবেচনায় গোয়েন্দাদের গোল (লক্ষ্যবস্তু) নির্ধারণ করে দেয়, তখন গোয়েন্দাদের সেই গোলের (নির্দেশনার) বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ ভয়ে থাকেন যদি তাদের বিশেষ কিছু গোয়েন্দাদের নজরে চলে আসে। ফলে তাদের ব্যক্তিগত সক্ষমতা থাকলেও সিস্টেমগত কারণে সেই নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কিছু বের করে আনার সুযোগ হয় না। মনে রাখতে হবে গোয়েন্দারাও মানুষ। তাদেরও পরিবার-পরিজন আছে। চাকরির প্রয়োজন আছে, চাকরি হারানোর ভয়ও আছে।
এখন আরেকটি সমস্যা হচ্ছে সরকার গোয়েন্দাদের তাদের (সরকারের) দলীয় স্বার্থের কাজে ব্যবহার করছে। কারণ সরকার এমন একটি মতবাদ নির্ধারণ করেছেন, দেশে যত অরাজকতা, আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট এবং জঙ্গি হামলা হচ্ছে এর জন্য সরকার বিরোধী মতের লোকেরাই দায়ী। এ থেকে বেরিয়ে না এলে আমাদের গোয়েন্দারা তাদের যোগ্যতা প্রমাণে সক্ষম হতে পারবে না।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সাবেক বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান দেশের গোয়েন্দাদের ঢালাওভাবে ব্যর্থতার দায় দিতে রাজি নয়। তিনি মানবাধিকার খবরকে বলেন, গোয়েন্দাদের অনেক কাজ। তার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহও একটি। তবে আমি মনে করি সর্বশেষ ঘটনা কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সফলতার পরিচয় দিয়েছে। কারণ হামলাকারীরা ঈদগাহের মাঠ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।
তবে তিনি গুলশানের কুটনৈতিক পাড়ায় হামলার বিষয়টিকে একটি গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।
সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও জঙ্গিদের একটি বড় হামলা যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় হতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু সেটা গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ার মতো হাই সিকিউরিটি জোনে ঘটবে কেউ তা কল্পনায়ও নিতে পারেনি।
তিনি এ বিষয়ে সকলের কাছে একটি প্রশ্ন রাখেন, আমাদের দেশের গার্মেন্স সেক্টরে কাজ করে ইতালিয় নয়জন নাগরিক এক সাথে কেন ওই রেস্তোরাঁয় খেতে গেল? একটি বিশেষ প্রকল্পে কাজ করা ছয় জন জাপানি নাগরিক কেন এক সাথে ওই একই রেস্তোরায়ঁ খেতে গেল? তাদের কেউ আমন্ত্রণ (দাওয়াত) করে ছিল কি? তা তদন্তে আসা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়া জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন মানবাধিকার খবরকে বলেন, আমাদের গোয়েন্দাদের ক্যাপাসিটি ‘সক্ষমতা’ নেই, তাই তারা আগাম তথ্য পায় না।
এজন্য তিনি সরকারকে গোয়েন্দা সক্ষমতা বাড়াতে কিছু বিষয়ে দৃষ্টি দিতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, গোয়েন্দা সফলতা পেতে লোকবল বাড়াতে হবে, গোয়েন্দাদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও বাড়াতে হবে। সেই সাথে আন্তরিকতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো প্রয়োজন।
আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ড. আব্দুর রহিম খান মানবাধিকার খবরকে বলেন, শোলাকিয়ার ঘটনায় গোয়েন্দা তৎপরতা উচ্চমানের না হলেও মোটামুটি ছিল বলেই মনে হয়। ফলে পুলিশ ঘটনাস্থলের আগেই জঙ্গিদের ঠেকিয়ে দিতে পেরেছে।
তবে গুলশানের ঘটনায় গোয়েন্দাদের কেউ এটা ফলোআপ করেছে বলে মনে হয়নি। আমার জানামতে বিদেশি গণমাধ্যমে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলার হতে পারে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এখন সামনের দিকে তাকাতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য আরো বেশি প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন।
বিশেষ করে তিনি গোয়েন্দাদের জনবল বৃদ্ধি ও তথ্য প্রযুক্তিতে সক্ষম করে তোলার দিকে জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন জঙ্গিরা প্রযুক্তিতে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। সেই তুলনায় পুলিশের প্রযুক্তি সক্ষমতা কম।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার সাথে সোমবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জরুরি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান।
সরল মনের গরল ভয়!
আমরা বাংলাদেশী তথা বাঙালিরা বন্ধুপরায়ণ, সেই সাথে অতিথি পরায়ণও। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো বন্ধুকে ঠিক বন্ধু হিসেবে আস্থায় নিতে কোথায় যেন আটকে দিচ্ছে। পাশাপাশি হাঁটছি, ভয় করছে- যার সঙ্গে হাঁটছি; তিনি ভয়ঙ্কর কেউ নয় তো? একই বিল্ডিংয়ের ভিন্ন ফ্ল্যাটে বাস, লিফটে-সিঁড়িতে দেখা হচ্ছে। কূশল বিনিময় কখনও হচ্ছে, কখনও হচ্ছে না। মুখটা হয়ত প্রতিদিন দেখার ফলে চেনা, কিন্তু অন্তরটা? এই চেনামুখটা যদি ক’দিন পর তার অন্তরের জঙ্গিত্ব জাহির করে? অথবা চেনামুখটা যেমন সরল, তেমনি তার অন্তরটাও সরল। কিংবা হয়ত ফেসবুকে চুটিয়ে চ্যাট করছি, বন্ধুত্বও বেশ জম্পেশ। পাল্টে যাওয়া সময়ে সেসব বন্ধুকেও অচেনা লাগছে। দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে-এফবি হ্যাক করবে না তো?
এ যুগের ধর্মই যেন ব্যস্ততা, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে অসুস্থ (!) প্রতিযোগিতায় সবাই দৌড়াচ্ছি। তাই প্রতিবেশী/বন্ধুর খোঁজ নেওয়ার অবসর মেলে না! আর এ অবসর না থাকার সুযোগটা নেয় জঙ্গি/সন্ত্রাসী ও বদ মতলববাজরা।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা শাম্মি আকতার। কথা হয় তার সঙ্গে, তিনি বলেন, আমি পরিবার নিয়ে খিলগাঁওয়ের একটি বহুতল ভবনে বাস করি। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যেভাবে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। তাতে আমি কিছুটা আতঙ্কে আছি। বাসার অন্যান্য ফ্ল্যাট বা আশপাশে উঠতি বয়সের তরুণদের দেখলে কেমন ভয় ভয় লাগে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে অবিশ্বাসের পাল্লাটাকেই ভারী মনে হয়।
তিনি আরো বলেন, আমি যেখানে শিক্ষকতা করি সেটা স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে তেমন ভয় বা সন্দেহ কাজ করে না। কিন্তু সাম্প্রতিক গুলশান হামলার কয়েকদিনের মাথায় শোলাকিয়ায় ঈদগাহে হামলা। তার আগে পরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিদের আস্তানা খুঁজে পাওয়ার ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে। শিক্ষার্থীদের সবাইকে সরল মনে আস্থায় নিতে গিয়েও হোঁচট খায়। মানসিকভাবে এক ধরনের টানাপোড়েনে আছি।
এই স্কুল শিক্ষিকা বলেন, সবচেয়ে যেটি বেশি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো উঠতি বয়সের ছেলে ছোকরাদের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস। এদের সবাই তো জঙ্গি নয়, কিন্তু কে সেটা, আর কে না তা বুঝে উঠা তো মুশকিল।
তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে কিন্তু উঠতি বয়সের ছেলেরা সমাজ থেকে, পরিবার থেকে ও প্রতিবেশি থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাবে। এতে বরং আরো বিপর্যয় হবে। আমাদের দায়িত্ব সঠিক নির্দেশনা, ধর্মীয় জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়ে তরুণদের কাছে টেনে নেওয়া।
কথা হয় রাজধানীর একটি কলেজে আইনশাস্ত্রে অধ্যয়নরত শেফালী আক্তার ইতির সাথে। তিনি মানবাধিকার খবরকে বলেন, আমরা ঢাকার পুরনো বাসিন্দা। জন্মের পর এসব জঙ্গি দেখিনি। পরস্পরের মধ্যে যে মিল ও আন্তরিকতা ছিল। এখন তা কমে গেছে। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ও কর্মব্যস্ততা আমাদের পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করছে, একা একা থাকার মানসিকতা গড়ে উঠছে। আর এ কারণেই পরিবারের ভাই, বোন কিংবা বন্ধু, প্রতিবেশীকে ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারি না।
আইনের এই ছাত্রী আরও বলেন, মুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থায় নিত্য নতুন বন্ধু যোগ হচ্ছে আমাদের জীবনে। কিন্তু তাদের ডিটেইলস আমরা জানি না। সবচেয়ে সমস্যা হয়ে পড়েছে এখন কে জঙ্গি আর কে ভালো মানুষ তা তো কারো গায়ে বা কপালে লেখা থাকে না। ইদানিং বন্ধুদের নিয়েও এক রকম ভয় ও শঙ্কা কাজ করে। ও জঙ্গি নয় তো? আমাদের কলেজে বেশ কয়েক জনের সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার কলেজে নিয়মিত আসে না। তাদের আমি একদিকে মিস করি। আবার অন্যদিকে এক ধরনের অস্বস্তিতেও আছি। তারা জঙ্গি হয়ে উঠছে না তো?
মতিঝিলের একটি মেসে ভাড়া থাকা শাহীন আলম জয় বলেন, আমার বাড়ি ঢাকার অদূরে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায়। আমি একটি ট্যুরিজম কোম্পানিতে জব করি। কমলাপুর থেকে ট্রেনে যাতায়াত ব্যবস্থা আমার জন্য ভালো। তাই রাতে কখনো ঢাকায় থাকি আবার কখনো বাড়িতে চলে যাই। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার অফিস করে বাড়ি চলে যাই। অন্যান্য সময়ও তাই করি। কিন্তু ইদানিং আমার মেসের অন্যান্যরা কেমন যেন সন্দেহের চোখে তাকান আমার দিকে। আমি বুঝতে পারছি তারা আমাকে ‘জঙ্গি’ সন্দেহ করছে। শুধু তাদের মধ্যেই নয়। এক মেস মেম্বারকে দেখলে আমারও কেন জানি গা শিউরে ওঠে। তাকে দেখলে আমারও জঙ্গি জঙ্গি সন্দেহ ও ভয় কাজ করে। বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে চলা তো মুশকিল।
মিরপুরের বাসিন্দা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা শাহবাজ খান মানবাধিকার খবরকে বলেন, আমি গুলশানের একটি ব্যাংকের শাখায় কর্মরত। সম্প্রতি গুলশান হামলা, মিরপুরে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান এবং সর্বশেষ কল্যাণপুরে অভিযানে গোলাগুলি ও নিহতের ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছি। এসব ঘটনায় আমি ও আমার পরিবার উদ্বিগ্ন। আমরা সবসময় একটা টেনশানে থাকি।
এদিকে সর্বশেষ মঙ্গলবারের জঙ্গিদমন অভিযানের ঘটনা প্রসঙ্গে মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া অভিযান শেষে জানান, ঘটনাস্থল থেকে নিহত ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। এসময় ওই আস্তানা থেকে ১৩টি তাজা গ্রেনেড, সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু মডেলের পিস্তল চারটি, ২২ রাউন্ড গুলি ও সাতটি ম্যাগজিন, জেল বিস্ফোরক পাঁচ কেজি, ডিটোনেটর ১৯টি, তলোয়ার একটি, তিনটি কমান্ডো ও ১২টি গেরিলা চাকু এবং আরবিতে আল্লাহু আকবর লেখা দুটি কালো পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, নিহত জঙ্গিদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তাদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য।
অভিযানের শুরুতে একজন পালিয়ে গিয়েছে জানালেও কল্যাণপুরের জঙ্গি-বিরোধী অভিযানকে ‘ইতিহাসের অন্যতম সফল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেন পুলিশ কমিশনার।
রাজধানীজুড়ে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। এ থেকে স্পষ্ট যে জঙ্গি তৎপরতা ও জঙ্গি দমন অভিযান নিয়ে রাজধানীবাসীর সামনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবার সুযোগ সহসাই ঘটছে না।
আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত কি পরিমান উঠতি বয়সি কিশোর নিখোঁজ রয়েছে তার কোন সঠিক ডাটা নেই খোদ রাজধানীর থানাগুলোতে।
|