আন্তর্জাতিক
  মেরুদন্ড শক্ত করে দুর্বলদের পাশে দাঁড়ান
  01-09-2016

পবিত্র ঈদ-উল-আযহা আসন্ন। বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে সম্প্রীতি, ঈদ মানে ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধন।

দুনিয়ার মুসলমানদের সাথে বাংলাদেশেও সর্বোচ্চ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, যথাযোগ্য মর্যাদা, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ত্যাগের মহিমায় কুরবানীর ঈদ উৎসব পালিত হবে। ঈদের দিন রাজধানীসহ দেশের সকল মুসলমানদের   হৃদয়ে ঈদ-উল-আযহার নামায আদায় করবেন এবং নামায শেষে মহান রবের উদ্দেশে পশু কুরবানী দিবেন।

আল্লাহর রাহে নিজের জান-মাল ও প্রিয়তম জিনিস সন্তুষ্টচিত্তে বিলিয়ে দেয়ার এক সুমহান শিক্ষা নিয়ে প্রতি বছর ঈদ-উল-আযহা আমাদের মাঝে ফিরে আসে। ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী কুরবানী করা ওয়াজিব। আল কুরআনের সূরা কাউসারে বলা হয়েছে, ‘‘অতএব তোমার পালনকর্তার উদ্দেশে নামায পড় এবং কুরবানী কর।’’ সূরা হজ্বে বলা হয়েছে, ‘‘কুরবানী করার পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।’’

 

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর অনুপম ত্যাগের অনুসরণে হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্ব মুসলমানরা কুরবানী করে আসছে। তাঁরই নিদর্শনস্বরূপ প্রতি বছর হজ্ব পালনকারীরা কুরবানী দিয়ে থাকেন।

শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, কুরবানীর পূর্বশর্ত আল্লাহ ভীতি ও একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আকাঙ্ক্ষা। হাদীস শরীফে আছে, ‘মানুষের আমলের প্রতিফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। সূরা হজ্বে বলা হয়েছে, ‘‘এগুলোর গোশত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’’ প্রত্যেক আর্থিক সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কুরবানী করা ওয়াজিব। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘ যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কুরবানী দিলো না, সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে।’’ (মুসনাদে আহমদ)

জিলহজ্ব মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোন একদিন কুরবানী করা যায়। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এ শ্রেণীর প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা যায়। কুরবানীকৃত পশুর ৩ ভাগের ১ ভাগ গরীব-মিসকিন, একভাগ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। আবার পুরোটাই বিলিয়ে দেয়া যায়।

এদিকে ৯ জিলহজ্ব ফযর নামাযের পর থেকে ১৩ জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তাকবীরে তালবিয়া পাঠ করা ওয়াজিব। তালবিয়াহ হলো, ‘‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’’

ঈদের আগমনে অনুগত মুসলিম মুছে ফেলে পাপ-পঙ্কিলতার কালিমা। নিভিয়ে দেয় হিংসা-বিদ্বেষ, কাম-লোভ,আর রাগ-ক্ষোভের আগুন। কি আমীর-ফকীর, কি শ্রমিক-মালিক, উচু- নীচু প্রত্যেকে আপন আপন ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে হাতে হাত মেলায়। শান্তি, সম্প্রীতি, ভাতৃত্ব আর সাম্যের গান গায়। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত মুমিন-মুসলিম দয়াল মাওলার গুণকীর্তন করে। বছর ঘুরে সেই মহিমান্বিত ঈদ আমাদের সামনে। ঈদকে সামনে রেখে ভাবতে হবে আমরা কি পাপ-পঙ্কিলতা মুছে ফেলতে পেরেছি? আমরা কি হিংসা-বিদ্বেষ, কাম-লোভ আর ক্রোধ ঝেরে ফেলতে পেরেছি? পেরেছি কি আমরা মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নিতে?

মুক্তির বারতা নিয়ে এসেছে এ ঈদ-উল-আযহা। হিংসা, হানাহানি, পরশ্রীকাতরতা দূর করে সাম্য মৈত্রী ও প্রীতি বন্ধনের সাওগাত নিয়ে এলো বিশ্ব মাঝে। তারই আলোড়ন ও স্পন্দন ধ্বনী জাগে সারা পৃথিবীতে। অমিয় সূধা ছড়ায়ে মানবতার জয়গানে উচ্চকিত হতে সেই শিক্ষাই ঈদুল আযহার দিনে শাশ্বত বাণীর ঘোষণা দিচ্ছে। যেখানে থাকবে না কোন জুলুম এবং নির্যাতন, হিংসা, হানাহানি এবং ভেদাভেদের কোন হীনমন্যতা। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বইয়ে দিবে শান্তির ফাল্গুধারা ও ভালোবাসার ফুলেল শুভেচ্ছা।

পরিশেষে প্রশান্ত, উচ্ছ্বল ও উৎসবের বাতাবরণে ঈদ আনন্দের উর্মীলা শিহরণ জাগুক প্রতি মানবের অন্তরে। ঐকান্তিক কামনায় ঈদ আসুক বারেবার। ঈদ-উল-আযহা হোক শাশ্বত ও চির কল্যাণের, মানবতার সুখ-শান্তি, মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মহাবারতা।

মানবাধিকার খবরের সম্মানীত পাঠক, গ্রাহক, এজেন্ট, উপদেষ্টা, প্রতিনিধি, শুভাকাঙ্খি ও দেশবাসীকে জানাই ঈদ মোবারক।