রাজনীতি
  দেশ-বিদেশ থেকে নারী ও শিশু উদ্ধার অভিনন্দনযোগ্য
  01-07-2016

নিজস্ব প্রতিবেদক :

মানব পাচারের শিকার বাংলাদেশীদের উদ্ধারে মানবাধিকার খবরের সাফল্য অভিনন্দনযোগ্য উল্লেখ করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে ভূমিকা রাখার আহবান জানালেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

৫ জুন বিকেল ৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাব কনফারেন্স লাউঞ্জে মানবাধিকার বিষয়ক এশিয়ার একমাত্র নিয়মিত প্রকাশনা ‘মানবাধিকার খবর’র চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহবান জানান।

এসময় মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানসহ এশিয়া মহাদেশে মানবপাচারের ঘটনা বেশী সংঘঠিত হয়। মানবপাচারের শিকার এসব বাংলাদেশীদের উদ্ধারে মানবাধিকার খবর উদ্যোগ নিয়েছে এটা প্রশংসার দাবি রাখে। পাচারের শিকার মানুষকে সদেশে ফিরিয়ে আসা সহজ কথা নয়। দু দেশের আইন কানুন মেনে অনেক ধাপ অতিক্রম করে তবেই পাচারকৃতদের দেশে ফিরিয়ে আনা যায়। এই কষ্টসাধ্যকাজটিই মানবাধিকার খবর করছে মানে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমি মনে করি বাংলাদেশীদের উদ্ধার ঘটনার সাফল্য অভিনন্দনযোগ্য। মন্ত্রী এসময় মানবাধিকার খবরের ন্যায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে ভূমিকা রাখার আহবান জানান।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘মানবাধিকার, আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে গণতন্ত্রের মূলনীতি বাস্তবায়ন হবে না। কারণ গণতন্ত্রের মূলনীতিই হচ্ছে মানবাধিকার ও সুশাসন নিশ্চিত করা।’

মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের সংবিধানের মুলস্তম্ভে মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে। দেশে সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হলে মানবাধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। আমাদের মহাজোট সরকার দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জোরালো ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামাত জোটের মানবাধিকার কোন মানবাধিকার। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে জালাও পোড়াও করে তারা কোন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন।

যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো সঠিক অবস্থানে নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,  আমরা যে মানদ- বজায় রেখে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি পৃথিবীর কম দেশেই সে মানদ- মানা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো যুদ্ধাপরাধীদের ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী ভূমিকা ভুলে গিয়ে এখন বিচার নিয়ে সমালোচনা করছে।

বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে মেনন বলেন, বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমাদের সামনে কঠিন পথ অতিক্রম করতে হবে। আমরা যদি এই পথ অতিক্রম করতে না পারি তবে দেশের এই অগ্রগতি থমকে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের যে ঘোষণা তাকে ভিত্তি করে যদি সামনে এগিয়ে যাই তবে আমাদের অগ্রগতি কেউ থামাতে পারবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মানবাধিকার আন্দোলনের মুল লক্ষ্য হচ্ছে যেখানে আইনের শাসন থাকবে, যেখানে এই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প থাকবে না। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন একদিনের আন্দোলন নয়। সামরিক শাসনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। সেসময় সুশীল সমাজ মিডিয়া সবার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে সেই সামরিক শাসকদের পতন ঘটিয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা আমাদের দেশে মুক্ত চিন্তার প্রতিবন্ধক, সেই জঙ্গিরাই গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হেনেছে বারবার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও চেষ্টা করছেন গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার। দেশের সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বিশ্বের দরবারে আজকের সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 

ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরো বলেন, বর্তমান সরকার দেশের প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছে। দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মানবাধিকার গুরুত্বর্প্ণূ। মানবাধিকার খবর পত্রিকা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে এ জন্য তাদের ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফিনান্স কমিটির চেয়ারম্যান ও মানবাধিকার খবরের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শ.ম. রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার খবর পত্রিকার সাথে আমার যোগাযোগ আছে। আমি দেখেছি কি অক্লান্ত পরিশ্রম করে সম্পাদক ও প্রকাশক মো: রিয়াজ উদ্দিন এ প্রত্রিকাটি প্রকাশ করে যাচ্ছেন। তিনি সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে সমাজের অনেকের চোখরাঙানির শিকার হয়েছেন। তবুও পিছু হটেননি। তিনি সকলকে মানবাধিকার খবরের পাশে থাকার আহ্বান জানানা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার খবরের সম্পাদক ও প্রকাশ রোটারিয়ান মোঃ রিযাজ উদ্দিন। তিনি বলেন ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মানবাধিকার খবর আড়ম্বড়পূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু করে। আমরা বহুমুখী সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে সত্যকে সঙ্গী করে সর্বস্তরে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আমাদের নীতি ও আদর্শ থেকে সরে আসিনি। আমরা আমাদের কলমের মুখে লাগাম টেনে ধরিনি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশ বিদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া নারী ও শিশু উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে সাফল্য দেখিয়েছি। পত্রিকাটির উদ্যোগে গত বছর ভারতের উত্তরাখ- রাজ্যের রুদ্রপুর থেকে বাংলাদেশী কলেজ ছাত্রী, হায়দারাবাদ থেকে বাংলাদেশী গৃহবধূ, চলতি বছর দিল্লীর তিহার জেল থেকে বাংলাদেশী স্বামী-স্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গের লক্ষীকান্তপুর থেকে শিশু উদ্ধার করে বৈধ প্রক্রিয়ায় দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগে মানবাধিকার সংক্রান্ত সংবাদ সমাজের সুবিধা বঞ্চিত, অসহায় নির্যাতিত, নিপিড়িত, মানুষের পাশে থেকে প্রকাশ করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ও সংরক্ষণে ভুমিকা রাখছে যা বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংবাদপত্র দৈনিক প্রথম আলোসহ দেশী-বিদেশী, ইলেক্ট্রনিক ও পিন্ট মিডিয়াতে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ পেয়েছে।

রিয়াজ উদ্দিন তার বক্তব্যে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে মানবাধিকার খবরের পাশে থেকে সহযোগীতার আহবান জানান।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে  বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রোটারি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের ডিস্ট্রিক্ট গভর্ণর এস. এ. এম. সওকত হোসেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপযাপন পরিষদের আহবায়ক ড. জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন রেমোটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মানবাধিকার খবরের সম্মানিত উপদেষ্ঠা রোটারিয়ান মো: কামাল উদ্দিন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পত্রিকার সহকারী সম্পাদক কবি আবুবকর সিদ্দীক।

 

অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কর্মকা-ে অবদানের জন্য তিন ক্যাটাগরিতে দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সাংবাদিকদের সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়।

মানবাধিকার খবরের সাথে যুক্ত থেকে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ভুমিকা পালনের জন্য পত্রিকার উপদেষ্টা......

প্রমুখকে সম্মাননা পদক দেয়া হয়। 

মানবাধিকার বিষয়ক প্রবদ্ধ রচনার জন্য লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন কবি ও কলামিস্ট আবু বকর সিদ্দিক।

এছাড়াও এছাড়া মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য পরিবর্তন ডটকমের সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার এ এইচ এম ফারুক এবং পাচারের শিকার বাংলাদেশিদের উদ্ধারে সহায়তার জন্য দৈনিক প্রথম আলোর কলকতা প্রতিনিধি অমর শাহাকে বিশেষ সম্মাননা পদক তুলে দেন মন্ত্রী।