রাজনীতি
  প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দাবি শতাধিক প্রাণের বিনিময়ে ‘ভালো নির্বাচন’!
  01-07-2016

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :

 

শতাধিক প্রাণের বিনিময়ে ‘ভালো নির্বাচন’

ছয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১২০ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। তারপরও নির্বাচন সবচেয়ে ভালো হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। ৪ জুন শেষ ধাপের নির্বাচন শেষে কমিশন সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি এ সব কথা বলেন।

শেষ ধাপের নির্বাচনের শেষ দিনে ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নোয়াখালী ও ফেনীর সোনাগাজীতে তিনজন নিহতের মধ্য দিয়ে নিহতের তালিকা ১২০ জনে পূর্ণ হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থা নিহতের সংখ্যা আরো বেশি বলে দাবি করেছেন। এর আগে পঞ্চমধাপ পর্যন্ত মারা যান আরো ১১৭ জন। তারপরও শেষধাপের নির্বাচন শেষে সংবাদ সম্মেলনে ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

এ সময় সিইসি সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে দাবি করে বলেছেন,  আমরা নির্বাচনের সব ধাপেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। তাই ৬ষ্ঠ ধাপের আগের রাতে সিল মারার ঘটনা একদমই ঘটেনি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কিছু সহিংসতা ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। তবে সামগ্রিক ভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।

নির্বাচনে আচরণ বিধিভঙ্গের বিষয়ে কমিশনের কঠোরতার কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেটরা আচরণ বিধিভঙ্গের দায়ে ৫০০ জনকে ১২ লাখ ৮৫ হাজার ৯শ টাকা জরিমানা করেছেন।

কমিশন নির্বাচনে অনিয়মের দায়ে কাউকে ছাড় দেয়নি দাবি করে বলেন,  অনিয়ম করায় পুলিশ সুপার (এসপি) ও বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনেককেই বরখাস্ত করেছি।

নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার সংস্কৃতি ষষ্ঠ ধাপে একেবারেই বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করেন সিইসি।।

সিইসি নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংসতা প্রতিরোধ করতে হলে আগে আমাদের সমাজে সংস্কার আনতে হবে। এজন্য নাগরিকদের সামাজিক দায়িত্বও রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সামাজিক অস্থিরতার কারণে সবকিছুর দাম বেড়েছে কিন্তু একমাত্র মানুষের জীবনের দাম কমেছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে সামাজিক পরিবর্তন দরকার।  সিইসি এ জন্য গণমাধ্যমসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

তিনি বলেন, প্রার্থীরা নিজেদের যোগ্য ভাবেন। কিন্তু ভোটাররা তাদের সম্পর্কে কি ভাবেন সেটা মাথায় রাখেন না। যে কোনো উপায়ে জিততে চান তারা। এটাই হলো নির্বাচনে সহিংসতার অন্যতম কারণ।

আজকের ৬৯৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোট ৩৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিইসি।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারের ইউপি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম, সহিংসতার ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়ও  বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ‘নজিরবিহীন’ ভাবে। এ নির্বাচনে দুই শতাধিক প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।

এর আগে প্রথম ধাপে ৭১২, দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯, তৃতীয় ধাপে ৬১৫, চতুর্থ ধাপে ৭০৩ ও পঞ্চম ধাপে ৭১৭ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনিয়ম ও সহিংসতার কারণে কিছু ইউপির নির্বাচন আংশিক বা সম্পূর্ণ বাতিল বা স্থগিতও করা হয়েছে।