আন্তর্জাতিক
  ঈদ হোক মানবতার কল্যাণে সুখের বারতা
  01-07-2016

জাতীয় কবির ভাষায়- ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়েছে দে, শোন ইসলামী তাকিদ’। মাহে রমযানের এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে শাওয়ালের চাঁদ দেখার সাথে সাথে ফিরে আসে পরম কাঙ্খিত আনন্দ উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম দু’টি উৎসবের মধ্যে প্রধান হচ্ছে ঈদ-উল-ফিতর। 

বাংলায় ঈদ এখন সার্বজনিন উৎসব। সকল ভেদাভেদ ভুলে পরস্পর আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। ঈদ ছোট, বড়, ধনী, গরিব সকলের মাঝে এবং ঘরে ঘরে আনন্দ আর খুশির শিহরণ জাগায়। ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয় আনন্দ ধারার উৎসব আমেজকে প্রতিটি মুসলিম সমাজে। পাশাপাশি ভিন্ন ধর্মের লোকদের কাছেও জানায় ঈদের সওগাত, স্বাগতম ও শুভেচ্ছা বারতা। মানবতার জয়গান গেয়ে উঠে প্রতিটি বনি আদমের হৃদয় কন্দরে।

প্রকৃত অর্থে ঈদের খুশীতে ভরে উঠে অনাবিল পরম সুখের পূত-পবিত্র প্রতিটি হৃদয় আকাশ। যেখানে নেই কোন দুঃখ ভারাক্রান্ত মন, আবিলতা ও হিংসা বিদ্বেষের কোন হঠকারিতাপূর্ণ চিন্তা-চেতনা। সেই সমাজ ও পরিবেশ, যাতে আছে কল্যাণ, আছে ভালোবাসা, প্রেম-প্রীতি ও সহমর্মিতা। আছে মানবিক মূল্যবোধের মূল্যায়ন। পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের অনুরাগ ও মানব কল্যাণের ঐকান্তিক প্রবণতা। মানবের তরে ঈদ-উল-ফিতর সেই শিক্ষা নিয়েই প্রতি বছর আসে আমাদের মাঝে।

কিন্তু বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেশে, সমাজে আজ যে ধরনের বিভৎসতা আর নারকীয়তা, জুলুম-অত্যাচার চলছে, যা ইসলাম কোন ভাবে সমর্থণ করে না। পরাশক্তির অধিকারী দেশগুলো ক্ষমতার দর্পে  ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ও জনপদগুলোর উপর বেপরোয়াভাবে তাদের স্বার্থ হাছিলের লক্ষ্যে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে দুর্বল রাষ্ট্র ও জনগণের উপর। সেখানে মানবতাকে পদদলিত করে জুলুম-নির্যাতনের স্বর্গ রাজ্য প্রতিষ্ঠায় নিজেদের সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করছে। আর বিশ্বের জনগণের চোখে ধুলা দিয়ে গণতন্ত্র ও মানবতা প্রতিষ্ঠার মায়াকান্না দেখিয়ে প্রহসনের খবরদারী চালিয়ে যাচ্ছে সব দেশে।

এই ঈদে ছোট-বড়, ধনী-গরিব পার্থক্য ঘুঁচিয়ে দিয়ে সকলের তরে সাম্যনীতি ও ইনসাফপূর্ণ আচরণের মধ্য দিয়ে সুখ-আনন্দ ভাগ করে নিতে হবে। মানুষ মানুষের জন্য, এই অভেদ নীতিতে সাম্য ও ঐক্যের ভিত্তি রচনা করতে হবে সুন্দর পৃথিবী তৈরি করার জন্য। সমস্ত অকল্যাণ ও পাপ-পঙ্কিলতাকে ধুয়ে মুছে পবিত্র ঈদ হোক কল্যাণময় বারতার মহোৎসব। আর বাস্তবেই ঈদ সফল হবে তখনই, যখন মানবতা আর ধুঁকে ধুঁকে মরবে না, দুঃখ-যাতনা থাকবে না সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা হীনতা ও বিপদ আশঙ্কার ঘনঘোর পৃষ্টি হবে না কোন দুর্মদ ও মানবতাবিরোধী কোন অপশক্তিদের দ্বারা।

মুসলিম বিশ্বের ঐক্য গড়তে ইসলামের শাশ্বত বিধান অনুসরণ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃবন্ধনের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে প্রতিটি ঈদগাহের লাখো জনতার সারিবদ্ধভাবে ঈদের জামায়াতে শামিল হওয়ার মধ্যে। তাই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হবার গান গেয়েছেন এভাবে- ‘শহীদি ঈদগাহে দেখ আজ জামাত ভারি/ হবে দুনিয়াতে আবার ইসলামী ফরমান জারি/ তুরান ইরান হেজাজ মেসের হিন্দ মরক্কো ইরাক/ হাতেহাত মিলিয়ে আজ দাঁড়ায়েছে সারি সারি’। সত্যিই অনুপম এই ভ্রাতৃবন্ধন।

মুক্তির বারতা নিয়ে এসেছে এ ঈদ-উল-ফিতর। হিংসা, হানাহানি, পরশ্রীকাতরতা দূর করে সাম্য মৈত্রী ও প্রীতি বন্ধনের সাওগাত নিয়ে এলো বিশ্ব মাঝে। তারই আলোড়ন ও স্পন্দন ধ্বনী জাগে সারা পৃথিবীতে। অমিয় সূধা ছড়ায়ে মানবতার জয়গানে উচ্চকিত হতে সেই শিক্ষাই ঈদুল ফিতরের দিনে শাশ্বত বাণীর ঘোষণা দিচ্ছে। যেখানে থাকবে না কোন জুলুম এবং নির্যাতন, হিংসা, হানাহানি এবং ভেদাভেদের কোন হীনমন্যতা। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বইয়ে দিবে শান্তির ফাল্গুধারা ও ভালোবাসার ফুলেল শুভেচ্ছা।

পরিশেষে প্রশান্ত, উচ্ছ্বল ও উৎসবের বাতাবরণে ঈদ আনন্দের উর্মীলা শিহরণ জাগুক প্রতি মানবের অন্তরে। ঐকান্তিক কামনায় ঈদ আসুক বারেবার। ঈদ-উল-ফিতর হোক শাশ্বত ও চির কল্যাণের, মানবতার সুখ-শান্তি, মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মহাবারতা। দুর-দুরান্ত মানুষের ঈদ ভ্রমণ হোক আনন্দময়। এই কামনায় ঈদ হোক মানবতার কল্যাণে সুখের বারতা