ইসলাম
  আইপিএল নিয়ে জমজমাট জুয়া বাংলাদেশে
  02-06-2016

নিজস্ব প্রতিবেদক :

 

ভারতের টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ-আইপিএলকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে বসছে জুয়ার আসর। ফাইভ স্টার হোটেল, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পাড়ার চায়ের দোকান ও খেলার মাঠে হচ্ছে জুয়া। দুই তিন বছর ধরে চলে আসা এই আইপিএল জুয়ার বড় বড় আসরগুলোতে খেলতে এখন বড় অঙ্কের টাকায় অগ্রিম অ্যাকাউন্টও খুলতে হচ্ছে। যোগাযোগ হচ্ছে মোবাইল ফোনে, লেনদেন হচ্ছে বিকাশে। ফলে ঢাকায় বসে রাজশাহী বা চট্টগ্রামের বড় কোনো আসরে অবলীলায় অংশ নিচ্ছে জুয়াড়িরা। তবে পাড়ার অলিগলিতে স্ক্রিন লাগিয়ে ও টিভিতে টাকা হাতবদল হচ্ছে সরাসরিই। প্রতিটি ম্যাচের প্রত্যেক বলে চলছে এসব জুয়া। এখন আইপিএল জুয়াকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে কেউ কেউ। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাদ দিয়ে মেতেছে আইপিএল জুয়ায়। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ নানা পেশার মানুষও মেতেছে এসব জুয়া খেলায়। প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে ২০ কোটি টাকারও বেশি। জুয়ার টাকা দিতে না পারায় ঘটেছে আত্মহত্যার কমপক্ষে তিনটি ঘটনাও। টাকার অভাবে কেউ কেউ দামি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, স্ত্রীর সোনার গহনাসহ নানা দামি জিনিসপত্র বন্ধক রাখছে। আর সুদের ব্যবসায়ীরাও থাকছেন জুয়ার বোর্ডের পাশেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন সন্ধ্যায় টিভির পর্দার সামনে খেলার দর্শকের মধ্যে যে ভিড় দেখা যায়, এর প্রতিটিই ছোটখাটো জুয়ার আসর। টিভি মানেই একটি জুয়ার বোর্ড। ম্যাচে জয়-পরাজয়, এক ওভারে কত রান, এক বলে কী হবে, কোন খেলোয়াড় কেমন খেলবে এমন সব কিছুর ওপরই হচ্ছে জুয়া। চায়ের দোকানের এসব ছোটখাটো আসরে পুরো ম্যাচের জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে একেক ধরনের রেট থাকে। তবে সাধারণত ফেবারিট দলের পক্ষে দেড় হাজার ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের পক্ষে এক হাজার টাকা ধরে খেলার প্রচলনই বেশি। মাঝারি মাপের জুয়ায় ১০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা হয় রেট। বড় আসরে বলই শুরু হয় পাঁচশ টাকা থেকে। সেখানে অ্যাকাউন্টধারীরাই শুধু খেলার সুযোগ পান। হার-জিতে জুয়াড়িরা লাভ পেলেও মূল লাভ পায় আসর প্রতিষ্ঠাতা অর্থাৎ টিভির মালিক বা স্ক্রিনের মালিক। ডাকপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ টাকা থাকে যে আসর বসায় তার জন্য নির্ধারিত। এর বাইরে জুয়াড়িদের দুই পক্ষের দুই ডাকের বাইরের যে কোনো ঘটনার জন্য পুরো টাকা যায় আসর মালিকের কাছে। জানা গেছে, চট্টগ্রামে আইপিএল ম্যাচকে ঘিরে নগরীর বাকলিয়া, ডিসি রোড, চকবাজার, খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, সদরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত জুয়ার আসর বসছে। এখানে বাকলিয়া আহমুদ্যা কলোনি এলাকায় আইপিএলের জুয়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রশি বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন মো. রাসেল (২২) নামে এক যুবক। জুয়া নিয়ে বাজিকরদের মধ্যে প্রতিদিন ঘটছে হাতাহাতি, মারামারি। ১৫-২০ বছর বয়সী কিশোর-যুবকরা ক্রিকেট জুয়ায় মেতে উঠছে। বেশি হচ্ছে মোবাইলের মাধ্যমে খুদে বার্তা দিয়ে। রাজশাহী শহরের বিভিন্ন স্থানে সব মিলিয়ে ১০টি পয়েন্টে এবং জেলার বিভিন্ন থানায় ৩৫ থেকে ৪০টি পয়েন্টে আইপিএলকে কেন্দ্র করে জুয়ার আসর বসছে। গত টি-২০ বিশ্বকাপেও এই আসর বসেছিল। আবার ২-৩ বছর ধরেই এসব জুয়ার আসর বসছে। টাকা হেরে অনেকে নিজের সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসছেন। গত বছর আইপিএলের সময় জুয়ায় এক রাতে ২০ লাখ টাকা হেরে ওই রাতেই কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেছেন নগরীর হাজী ভবন নামের মেসের এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।