অর্থনীতি-ব্যবসা
  ২৯৪ আসনের মধ্যে ২১১টিই তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গের মসনদে ফের মমতার শপথ
  02-06-2016

দিশা বিশ্বাস, কলকাতা থেকে :

সব শঙ্কা কাটিয়ে আবারও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় বসছে তৃণমূল কংগ্রেস। ফিরছে বিপুল বিক্রমে, আগের চেয়েও বেশি আসন আর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। ১৯ মে ঘোষিত অনানুষ্ঠানিক ফলে কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটকে বিপুল ব্যবধানে পেছনে ফেলে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাজ্যের ক্ষমতায় আসছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

২৭ মে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শপথ গ্রহণ করেন।

নির্বাচনের আগে উঠে এসেছিল পরিবর্তনের কথা, ছিল ঘুষ নেওয়ার অভিযোগসহ সারদা কেলেঙ্কারির মতো ঘটনাও। কলকাতায় ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার পর মনে হয়েছিল যেন পাঁচ বছরই ঘুরে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির হাওয়া।

শেষ পর্যন্ত ভারতের এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তার কিছুই হয়নি। ভারতের এনডিটিভি জানায়, পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ‘জোড়াফুল’ পেয়েছে ২১৪টি আসন। কংগ্রেসের ৪৫ আর বামফ্রন্টের ২৮ আসন মিলিয়ে বিরোধী জোটের সংগ্রহ ৭৩টি।

আর কেন্দ্র সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপি বাংলায় পেয়েছে সাতটি আসন। গত বিধানসভা নির্বাচনে সব আসনেই হেরেছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা নেন কংগ্রেসের এক সময়ের নেত্রী মমতা। ওই নির্বাচনে তাঁর দল তৃণমূল পায় ১৮৪টি আসন।

বামফ্রন্টের কাস্তে-হাতুড়ি ওই নির্বাচনে ৬০টি এবং কংগ্রেসের পাঞ্জা প্রতীক ৪০ আসনে জয় পায়। সেবার মমতার রাজনৈতিক মিত্র ছিল তাঁর আগের দল কংগ্রেস। কিন্তু রাজনীতির পালাবদলের খেলায় এবার তাঁকে একাই লড়তে হয়।

অন্যদিকে রাজ্যে এক সময়ের ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট মমতা হটাতে জোট বাঁধে কংগ্রেসের সঙ্গে। বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের এ রাজ্যের ভোটের ফল নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশিদের আগ্রহ ছিল। বামফ্রন্টের জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় দুই দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি হয়।

সে সময় জ্যোতি বসুর ভূমিকার কথা স্মরণ করা হয় এখনও। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতার আপত্তির কারণে আটকে যায় দুই দেশের তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। পরে কেন্দ্রের চাপে মমতার সুর বদলালেও সেই চুক্তি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এবারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বেশ বেকায়দায় ছিল তৃণমূল কংগ্রেস।

ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হাচ্ছিল বিরোধী শিবির থেকে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সে সঙ্গে সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি, নারদের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ায় কলকাতার ‘দিদি’ বেশ খানিকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বলেই মনে হচ্ছিল।

ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাস ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কায় নির্বাচন কমিশনও এবারের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে। ৪ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ছয় দফার ভোটের সময়ে বদলি করা হয় বহু সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যকে। নির্বাচনের আগে আগে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে তৃণমূলের পরাজয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও বুথফেরত জরিপেই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেন মমতা।

নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এবারও ঠিক এমনই ফল পেতে যাচ্ছে ‘বাঙালি দিদি’র দল। সেক্ষেত্রে টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করতে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর বাম-কংগ্রেস জোটকে উড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতার মসনদে মুখ্যমন্ত্রীর কুরসিতে বসতে যাচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি।

পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আবারও রাজ্য শাসনের ম্যান্ডেট দেওয়ার পর বাংলার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি ‘শান্তি বজায় রাখার’ ডাক দিয়েছেন বলে আনন্দবাজারের খবর। জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর ১৯ মে দুপুরে কালীঘাটে এক সংবাদ সম্মেলনে মমতা ঘোষণা দেন, মে মাসের বাকিটা সময় রাজ্যে ‘সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিজয়োৎসব’ চলবে।

সে সঙ্গে মমতার কণ্ঠে খানিকটা শাসনও ছিল পুলিশের জন্য। তিনি বলেন, ‘আমিও ৪০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। রাজনীতিটা আমি কারো চেয়ে কম বুঝি না। পাঁচ বছর আগে পরিবর্তনের সময়ও এত বাড়াবাড়ি দেখিনি। যে বাড়াবাড়িটা এবার করলো কেন্দ্রীয় বাহিনী আর পুলিশ।’

অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাতে দেরি করেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিজেই টুইট করে তিনি সে কথা জানিয়েছেন। মোদি টুইট স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মমতাজির সঙ্গে কথা হয়েছে। অসাধারণ এই জয়ের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছি।