(পূর্ব প্রকাশের পর...)
স্ত্রী হিসাবে নারীর অধিকার ও অবস্থান:
ইসলাম পূর্বযুগে নারীদের অবস্থা ছিল করুণ। তখন স্ত্রীদের সেবাদাসী মনে করা হত। স্বামীর কাজকর্ম ও সেবাযতœ করাই ছিল তাদের পেশা। ভোগবিলাসের বস্তু ছাড়া নারীকে আর কিছুই মনে করা হতো না। স্বামী তার স্ত্রী প্রতি অহরহ পশুসুলভ আচরণ চালিয়ে যেতো। ফলে তাদের উভয়ের জীবনে নেমে আসত দূর্বিসহ যন্ত্রণা। ইসলাম সমস্ত সমস্যার মূলে কুঠারাগাত হেনে স্ত্রী বা নারী জাতিকে মর্যাদা ও সম্মানের মনিকোঠায় স্থান দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে: হুন্না লিবাসুন লাকুম, ও আনতুম লিবাসুন লাহুন্না। (তারা তোমাদের পরিচ্ছেদ. তোমরা তাদের পরিচ্ছদ।)
অনত্র এরশাদ হচ্ছে: স্ত্রীকে কষ্ট যন্ত্রণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখো না।” “তোমাদের মধ্যে তারাই উৎকৃষ্ট ব্যক্তি যারা তাদের স্ত্রীদের কাছে উৎকৃষ্ট এবং আপন পরিবার পরিজনের প্রতি স্নেহশীল।” ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) স্ত্রী ও নারীদের সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন। তিনি বলেন: “পৃথিবীর বস্তুসমূহের মধ্যে নারী ও সুগন্ধি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং নামাজ আমার চোখের শীতলতা।” তিনি আরো বলেন: পৃথিবীর নেয়ামত সমূহের মধ্যে স্ত্রী হতে উৎকৃষ্ট নেয়ামত আর কিছু হতে পারে না।”
হযরত বিন ওমর বলেন: নবী করিম (সা.) যে পর্যন্ত জীবিত ছিলেন সে পর্যন্ত আমরা আমাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতাম। যাতে আমাদের উপর কোন শাস্তিমূলক বিধান অবতীর্ন না হয়। নবী করিম (সা.) এর ইন্তেকালের পর আমরা প্রাণ খুলে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে লাগলাম। অতএব বলা যেতে পারে, নারী জাতির মর্যাদা ও অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলাম পৃথিবীর সকল ধর্মের শীর্ষে রয়েছে।
মা হিসাবে নারীর অধিকার ও অবস্থান:
ইসলাম নারীদের মা হিসাবে যে অধিকার ও মর্যাদা দান করেছে পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম, অন্য কোন দল বা গোষ্ঠী তা দিতে পারে নি। রাসূলে করিম (সা.) এর আগমনের পূর্বে সমস্ত দুনিয়ার মানুষই পিতাকে মাতার চেয়ে বেশি সম্মানের পাত্র বলে মনে করত এবং মাতার উপর পিতার প্রাধান্য দিত। কুরআনের আয়াত নাযিল হল: আমি মানুষকে তার পিতা মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু সে যেন ভুলে না যায় যে, তার মাতা কত কষ্টের পর কষ্ট করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছিল আর সুদীর্ঘ দু’বছর ধরে তাকে নিজের দেহ নিংড়ানো স্তন্য দান করেছিল।” আর নবী করিম (সা.) বলেন: “ সন্তানের জান্নাত হল তার মায়ের পায়ের নীচে।” বিশ্ব দরদী মুক্তির কান্ডারী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন: আল্লাহ ও রাসূলের পরে সবচেয়ে বেশি অধিকার ও মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য মাতা।” একদা জনৈক সাহাবী রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল আমার নিকট থেকে সবচেয়ে বেশি সদ্ব্যবহার পাওয়ার হকদার কে? রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন : তোমার মাতা। তিনি আবার বললেন: তারপর কে? রাসূল (সা.) উত্তরে বললেন : তোমার মাতা। তিনি আবার বললেন : তারপর কে? রাসূল (সা.) উত্তরে বললেন: তোমার মাতা। চতুর্থবার সাহাবী প্রশ্ন করলে উত্তরে বললেন: তোমার পিতা। অন্যত্র বর্ণিত হচ্ছে: ‘মাতার নাফরমানী আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’এতেই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম মা তথা নারী জাতিকে কত উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন।
নারীর শিক্ষার অধিকার:
মানব শিশু জন্মের পর থেকে প্রথমেই সে মায়ের মুখের ভাষা শেখে। মায়ের কথা বলার ধরণ, আচার-আচরণ, নৈতিকতা এমনকি তার মতই শিষ্টতা সম্পন্ন হয়। এজন্য মাকে হতে হবে সুশিক্ষায় শিক্ষিতা। যদি সে নিজে সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে সে অন্য একজনের সুশিক্ষার দায়িত্ব কিভাবে পালন করবে? এজন্য দ্বীন ও পার্থিব
শিক্ষা লাভ করার জন্য তাকে শুধু অনুমতিই দেয়া হয় নি; বরং পুরুষের শিক্ষা-দীক্ষা যেমন প্রয়োজনীয় মনে করা হয়েছে, তাদের শিক্ষা-দীক্ষাও তদ্রুপ মনে করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) বাণী প্রদান করেছেন: প্রত্যেক মুসলমান নর নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।
নবী করিম (সা.) থেকে পুরুষগণ যেমন দ্বীনি ও নৈতিক শিক্ষা লাভ করত নারীগণও তদ্রুপ করত। নারীদের জন্য সময় নির্ধারিত করা হত এবং সেই সময়ে তারা নবী করিম (সা.) এর নিকট থেকে শিক্ষা লাভের জন্য উপস্থিত হত।মহানবী (সা.) তাঁর স্ত্রী হাফসা বিনতে উমরকে লিখন পদ্ধতি শিক্ষা দেয়ার জন্য শেফা বিনতে আবদুল্লাহকে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি কৃতদাসীদেরকেও শিক্ষার সুযোগ দিতে আদেশ করেছেন। রাসূল (সা.) মহিলাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা লাগবের জন্য মসজিদে আগমনের অনুমতি প্রদান করেছিলেন। তাছাড়া মহিলা সাহবীগণের যখন কোন সমস্যা সৃষ্টি হত, তখন তারা অবাধে রাসূল (সা.) এর সমানে উপস্থিত হয়ে তাঁর নিকট হতে অথবা তার স্ত্রীগনের মাধ্যমে সমাধান লাভ করতেন। তদুপরি রাসূল (সা.) পিতা ও স্বামীগণকে ও নির্দেশ প্রদান করেন যে, তারা তাদের কন্যা ও স্ত্রীদেরকে ধর্মের নির্দেশাবলী শিক্ষা দিবেন।
চলবে...
লেখক: আলেমে দ্বীন ও ধর্মীয় গবেষক, ঢাকা
|