সাক্ষাতকার
  নওগাঁয় পাখির অভয়ারণ্য
  02-06-2016

নওগাঁ প্রতিনিধি : 

‘পাখিদের ভয় দেখাবেন না, ওরাও বাঁচতে চায়’, ‘প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাখি, সৌন্দর্যের প্রতীক পাখি’। পাখি সংরক্ষণের এমন নানা সাইনবোর্ডের দেখা মিলবে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হাসানপুর গ্রামে। গ্রামে ঢুকলেই কানে ভেসে আসবে নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলি।

গ্রামের মানুষ পাখি মারে না, কাউকে মারতেও দেয় না। আর তাই তো পাখিগুলো অভয়াশ্রম হিসেবে বেছে নিয়েছে এই গ্রামকে। ধীরে ধীরে এই গ্রাম পরিচিতি লাভ করেছে পাখিগ্রাম হিসেবে। শুধু তাই নয়; পাখিদের উড়ে চলা আর খুনসুটি দেখতে প্রতিদিনই আসছেন দর্শনার্থীরাও। তবে এ গ্রামই শেষ কথা নয়; রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জেলার বিভিন্ন স্থানে চিহ্নিত করেছে এমন আরও ১৭টি পাখির অভয়াশ্রম।

প্রায় ৯০টি পরিবার নিয়ে গড়ে ওঠা এই গ্রাম গাছগাছালিতে ভরা। গ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে একটি পুকুর। প্রায় ৪ বিঘা জমিতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা গাছগাছালিতে ও পুকুরে দিন-রাত বিচরণ করছে নানা প্রজাতির এসব পাখি। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রজাতির বক, পানকৌড়ি, বালিহাঁস, শামুক খৈল, রাতচরা, ডাহুক, ঘুঘু ও শালিক চোখে পড়বে হরহামেশা।

অভয়াশ্রম গড়ে তোলার প্রধান উদ্যোক্তা ও হাসানপুর ইউপি সদস্য ইউনুছার রহমান হেফজুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ২০০৬ সালে তিনিসহ গ্রামের বেশ কয়েক যুবক সম্মিলিতভাবে গ্রামের পুকুরপাড়সহ আশপাশের এলাকাকে পাখির অভয়াশ্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ শুরু করেন।

এ সময় ওই গ্রামের সোনালী সংসদ নামে সংগঠনের মাধ্যমে গ্রামের যুবকরা নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে শুরু করেন মাইকিং। গ্রামের প্রতিটি প্রবেশদ্বারে লাগানো হয় পাখি শিকারে নিরুৎসাহিতকরণ সাইনবোর্ড।

 

গ্রামের গৃহবধূ জাহানারা বেগম বলেন, আগে এই গ্রামে তেমন কেউ আসতেন না। কিন্তু এখন পাখির এই অভয়াশ্রম দেখতে শুধু জেলারই নয়; দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বয়সী মানুষ ছুটে আসেন। জেলার সদর থেকে সপরিবারে পাখি দেখতে আসা আহাদ আলী নামে এক কলেজ শিক্ষক জানান, তার এক বন্ধুর কাছ থেকে এই অভয়াশ্রমের কথা জানতে পেরে এখানে ছুটে এসেছেন। তিনি বলেন, এখানে এসে মনে হচ্ছে মানুষ নয়; এই গ্রামে শুধু পাখিরাই বসবাস করে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা, প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, নওগাঁর পাখিদের অভয়াশ্রমের স্পটগুলোতে পর্যায়ক্রমে উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং যারা ব্যক্তি উদ্যোগে এসব স্পট নিরাপত্তায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদানের চেষ্টা করা হচ্ছে।