অধিকারের প্রতিবেদন
  কে শুনবে অনিলের আর্তনাদ
  01-05-2016

 

সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে বাংলাদেশী এক মিনার সাথে পরিচয় হয় পাকিস্তানী নাগরিক অনিল কুমারের। আট বছর পূর্বের সেই পরিচয় পরিনয়ে রুপ নেয় এবং ২০০৮ সালে তারা বিবাহ বন্দনে আবদ্ব হয়। অনিলের স্ত্রী মিনা পাকিস্তানে তার স্বামীর সঙ্গে নতুন জীবন শুর করে। স্ত্রী একা একাই পাকিস্তানে আসা যাওয়া শিখে নেয়। অনিলের ঘরে নতুন অতিথী, ছেলে  গৌরবের আগমন ঘটে ২০০৯ সালে। অনিল ভ্রমন ভিসা নিয়ে ১০/০৩/২০১৩ সালে সন্তানকে দেখতে বাংলাদেশে আসে। ভিসার মেয়াদ নিয়মানুযায়ী পূর্বের ন্যায় আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নেন। অনিল গত ১০/০৫/২০১৪ তারিখ পাকিস্তান এয়ারের ০২৬৭ বিমান যোগে নিজ দেশে যাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। টারমিনাল-৩ এর ৪৪ নং কাউন্টারে বহিরগমন নিবন্ধন সম্পন্ন করার সময় কাউন্টার অফিসার বাংলাদেশ হতে ষ্ট্যাম্পকৃত বর্ধিত ভিসা জাল সন্দেহে অনিলিকে ওসি ইমিগ্রেশনে প্রেরন করেন। একই তারিখে অনিল কুমারের বিরুদ্ধে পুলিশ পরির্দশক মোস্তফা নূর-ই-বাহার বিমান বন্দর থানায় দন্ডবিধির ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ এবং ১৯৪৬ সনের ফরেনার্স এক্টের ১৪ ধারায় মামলা রুজু করেন। পরবর্তীতে গত ৮/৬/২০১৪ তারিখে অনিল কুমার বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ জহিরুল হক-এর আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাংলাদেশে আটকে আছেন।

পাকিস্তানী প্রকৌশলী অনিল কুমার যে স্ত্রী ও সন্তানকে দেখতে বাংলাদেশে এসেছেন এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সে নিজ দেশে যাওয়ার শেষ প্রান্তে এসে এ মামলার স্বীকার হয়েছেন। এরুপ ক্ষেত্রে সকল দেশেই যাত্রীকে নিজ দেশের বিমানে তুলে দেয়ার রেওয়াজ আছে। আমেরিকা, ইউরোপ সহ পৃথিবীর বহু দেশে বহিরাগমন নিবন্ধনের কোন ব্যবস্থাই নেই। উন্নত দেশে কোন বিদেশিকে যদি অপরাধি বলে মনে হয় তবে তাকে নিজ দেশে ফেরৎ পাঠানোর ব্যবস্থা বেশী প্রযোজ্য।

অনিল কুমারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা অতি নগন্য। পাশপোর্টে বহফড়ৎংবসবহঃ, নবায়ন ভিসা বর্ধিত সহ অন্যান্য সকল কাজেই আমরা দালালের সহযোগিতা নিয়ে থাকি। দালালরা কতটা নৈতিকতার সাথে কাজ করে তাও আমরা বুঝি। অনিলকে যদি অপরাধি হিসাবে মনেই হয় তবে কেন তাকে পাকিস্তানের বিমানে তুলে না দিয়ে পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে? এতে অনিলের হয়রানি ও ভোগান্তি বেরেই চলেছে।

এরই মধ্যে সূদর্শন প্রকোশলী অনিল কুমারের (৩৯) জীবন থেকে দুটি বছর ঝরে গেছে। আর্থিক অনটনে স্ত্রীর সাথেও সম্পর্ক ভাল নেই। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় অনিল এখন অনেক ক্লান্ত। তাকে পাকিস্তানী এক মানবাধিকার আইজীবী গেলাম জীলানী মানবাধিকার খবরের আইন উপদেষ্টা হিসেবে আমার কাছে পাঠিয়েছেন সহযোগিতার জন্য। তার মামলার সকল কাগজ আমি দেখেছি। সাজা হওয়ার কোন উপাদানই এতে নেই। কর্তৃপক্ষের সদয় মনোভাবই পারে তাকে দ্রুত দেশে ফেরৎ পাঠাতে। একটি জীবনকে রক্ষা করতে। শুধু ”পাকিস্তানী” নাগরিক এই অজুহাতে অনিলের এই ভোগান্তি কোন ভাবেই কাম্য নয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সাধারন লোকের অনেক সমর্থন ছিল এ কথা আমাদের ভুললে চলবেনা। অপরাধ যা করেছে তার জন্য দায়ী পাকিস্তানী রাজনীতিাবিধ তথা তাদের সেনা বাহিনী। তার প্রায়শ্চীত্য তাদের কোন দিনই শেষ হবেনা। কিন্তু নিরপরাধ একটি ব্যক্তিও যেন আক্রোশের শিকার না হয়, সাজা না পায়, সে দিকে কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি রাখবেন এরুপই আমরা প্রত্যাশা করি। অপরদিকে অনিলের এই দুর্দশার খবর জানতে পেওে পাকিস্তানে অবস্থানরত তার মা-বাবা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, সারাক্ষণ প্রলাপ করছেন কবে ফিওে আসবে তার ছেলে।

ভজরঙ্গি ভাইজান ছবির নায়ক সালমান খান তীব্র প্রতিকুলতার মধ্যেও সামাজিক যোগাযোগের কল্যাণে পাকিস্তান সীমানা বিনা ভিসায়, বিনা পাসপোর্টে অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশে সক্ষম হন। তা হলে পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকেট থাকা সত্বেও বাস্তবের অনিল কুমার কেন নিজ দেশে যেতে পারবেনা? এ বিষয়টিই যদি সচেতন সমাজ তথা কর্তৃপক্ষ উপলদ্বিতে নিয়ে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন তবে অবশ্যই অনিল কুমার অতিদ্রুত নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন সে সময় আর বেশী দূরে নয়।

এড. দেলোয়ার হোসেন