অধিকারের প্রতিবেদন
  বঙ্গবন্ধু জাতির জীবনে বসন্ত এনেছিলো মুক্তিযোদ্ধা মো. আশকর আলী
  01-05-2016

মানবাধিকার খবর : আমরা জানি, আপনি অল্পবয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। কত বছর বয়সে, কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন?

মো. আশকর আলী : ১৯৫৫ সালের ২৮ এপ্রিল আমার জন্ম। সে হিসেবে ১৬ বছর বয়সে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। ৭১ সালে আমি কুষ্টিয়ার আমলা বহুমুখী বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী। সারাদেশে যুদ্ধ বেঁধে গেলো। ভাবলাম দেশ যদি স্বাধীন না হয় তাহলে তো পড়াশোনা হবে না। আর পড়াশোনা করেই কি করবো!  ২৬ মার্চ এর পর আর ঘরে থাকতে পারলাম না।

মানবাধিকার খবর : মুক্তিযুদ্ধের জন্য কোথায় কতদিন  ট্রেনিং নিয়েছিলেন?

মো. আশকর আলী :  প্রথমে স্থানীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহন করি কুষ্টিয়ার পুলিশ লাইন্সে। পরবর্তীকালে ভারতের চাকুলিয়ায় এক মাসের ট্রেনিং করি। আমাদের প্রশিক্ষক ছিলেন ভারতের তারাসিং।

মানবাধিকার খবর :  সরাসরি কোন কোন যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন?

মো. আশকর আলী : ট্রেনিং শেষে ধর্মদাহ, শিকারপুর (বর্তমানে ভারতের ভিতর) মুখোমুখি যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে। এই যুদ্ধ ছিলো, মিত্রবাহিনী, ইপিআর ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে। আমি ১০ জনের গ্রুপ লিডার ছিলাম। পরবর্তী সময়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় মো. মারফত আলীর নেতৃত্বে কাকিলাদহ, নওদাপাড়া ব্রিজের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে শত্রমুক্ত করি। এই যুদ্ধ স্থানীয় প্রশিক্ষণার্থী, মুজিব বাহিনী, আনছার’র সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধে শহীদ হয় আমার সহযোদ্ধা মধুমন্ডল, জহুরুল ইসলাম, ছাদেক ও আকুল শেখ।

মানবাধিকার খবর : দেশ স্বাধীন করার পর কি করলেন?

মো. আশকর আলী  :  ৭২ সালে এসএসসি পাশ করলাম। ৭৩ সালে আমলা ডিগ্রি কলেজে হিসাব রক্ষক হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করি। দুই হাজার সালে পদোন্নতি পেয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে প্রধান সহকারি হিসেবে যোগদান করি। মাঝে দীর্ঘদিন বিরতির পর ৮৫ সালে এইচএসসি পাশ করি।

মানবাধিকার খবর : সাংসারিক জীবনের কথা যদি একটু বলতেন?

মো. আশকর আলী : আমার স্ত্রী, এক ছেলে (সাইফুজ্জামান হিরা), এক মেয়ে (আয়শা আক্তার মুক্তা)। দুজনেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ওরা মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় চাকুরি পেয়েছে। একমাত্র নাতী স্বাধীন। বর্তমানে ছেলে, ছেলের বউ, আমার স্ত্রী ও স্বাধীনকে নিয়ে আল্লাহর রহমতে সুখে আছি।

 মানবাধিকার খবর : এখন আপনার চাওয়া-পাওয়া কী? যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই স্বপ্ন কতুটুকু পূরণ হয়েছে?

মো. আশকর আলী :  দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই আজ চাকুরি করে খেতে পারছি। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে চাকুরি দিতে পেরেছি। দেশ স্বাধীন না হলে কিছুই হতোনা। যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তার পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। যুদ্ধের বিরোধী শক্তি ও দুনীতিবাজরা স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সে স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু জাতির জীবনে বসন্ত এনেছিলো।

মানবাধিকার খবর : বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মকে আপনি কিভাবে কেমন দেখতে চান?

মো. আশকর আলী :  আমার একটি মাত্র চাওয়া সু-শিক্ষা। শিক্ষার বিকল্প কিছু নেই। সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ক্ষুধা-দারিদ্রম্ক্তু একটি দেশ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসা। সুশিক্ষা ছাড়া কখনোই সমবন্টন ও অসাম্প্রদায়িকতা সম্ভব না। প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই সকল কুসংস্কার ও বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

 মানবাধিকার খবর : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এতক্ষণ সময় দিয়ে যুদ্ধ জয়ের গল্প শোনানোর জন্য। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।

মো. আশকর আলী :  আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।