স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
  আপনার শিশুর জন্য জেনে নিন মানসিক বৃদ্ধি ও বাচন ভঙ্গি
  01-05-2016

জন্মের পরপরই শিশু ধরা, ছোঁয়া ঠান্ডা ও গরমের পার্থক্য, ব্যথা ,বিভিন্ন জিনিসের স্বাদ  এবং গন্ধ ভালোভাবে বুঝাতে পারে। অনেকে আবার বলে থাকেন, জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে তার ভালো মন্দের স্বাদ বুঝতে ক্ষমতা হয়ে, জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সে তা বুঝতে পারে  না।

শিশুর ইন্দ্রিয়গুলির প্রতি লক্ষ্যে রেখে মায়ের কাপড়-চোপড়  পরতে হবে। এ কারণেই  অতিরিক্ত সুগন্ধি ব্যবহার  করে শিশুকে খাওয়াতে গেলে  সে অনেক সময় খেতে চায় না,  অতবা ময়লা, নোংরা ঘামে ভেজা থাকলে শিশু তা পছন্দ নাও করতে পারে।

জন্মের পর পরই যদি শিশু দেখতে পায়  তবে বস্তুর  উপর তার দৃষ্টি বেশিক্ষন  স্থির  রাখতে পারে না। দু’তিন মাস  বয়স হলে সে এটা আয়ত্ব করে নেয়। এ বয়সে কোন কিছুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে  থেকে ধীরে ধীরে  সে দৃষ্টি ঘুরিয়ে ঐ বস্তুকে অনুসরনও করতে পারে। নবজাতক প্রথম থেকেই শুনতে পায়। এই জন্যই জোরে শব্দ করলে  সে চমকে উঠে। একমাস  বয়স থেকে সাধারণতঃ  সে ভালোভাবে শুনে বুঝতে চেষ্টা করে। এ সময়ে সে মায়ের সাথে মুচকি হাসতে চেষ্টা করে।

জীবনের শুরু থেকেই শিশুর সাথে কথা বলতে শিখতে হবে। আঁ, ওঁ, অ্যাঁ -এ সকল শব্দের মাধ্যমে সে আমাদের সাথে ভাব বিনিময় করতে চেষ্টা করে। তাই তার এ কথার জবাব দিতে শিখতে  হবে। নম্ন ভাবে, মেলায়েম সুরে, আদর করে তার সাথে ভাব বিনিময় করতে হবে। ধমক দিয়ে তাকে বোঝানো যাবে না, চিৎকার করে তাকে ভাষা শিখানো যাবে না। তাই শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধির জন্য তাকে সহায়তা করতে হবে।

অনুশীলনসমূহ

১। শিশুর বিছানা (অথবা যেখানে ঘুমাবে) প্রায় এক গজ উপরে কোন রঙ্গিন খেলনা ঝুলিয়ে দিতে হবে। এমনভাবে ঝুলাতে হবে যেন তা ঘরের স্বাভাবিক বাতাসেই হালকাভাবে দুলতে থাকে। খেলনটা দুলবার সময় শব্দ করলে আরো ভালো হয় এতে শিশু শুয়ে থাকা অবস্থায়ই ঐ খেলনা দেখে আনন্দ পাবে।

২।  কোন রঙ্গিন  অথবা  শব্দ করা খেলনা শিশুর দৃষ্টির সামনে অল্পক্ষণ ধরতে হবে।  যেন তার দৃষ্টি খেলনার উপর স্থির হয়, এবার  খেলনটা ধীরে ধীরে   এ পাশ ওপাশ করতে হবে। যেন তার দিকে  তাকিয়ে থেকে সে তা অনুসরণ করতে পারে।

৩। তার বিছানার  আশে পাশে  চিৎকার  অথবা হঠাৎ  জোরে রেডিও খোলা  ইত্যাদি না করাই  ভালো।

৪। তার সাতে   সুন্দর  নম্ন এবং মোলায়েম ভাবে কথা বলতে হবে। তার আনন্দে  নিজেরও  আনন্দ প্রকাশ  করে তার  সাথে অংশীদার  হতে হবে।

৫। শিশুকে আদরে চলে মাঝে মাঝে  কোলে নিতে হবে। এতে মা-বাবা সাথে  তার আত্মিক সম্পর্ক আর দৃঢ় হবে। তাবে বেশি  ঘন ঘন কোলে নিলে সে  কোলে থাকায় অভ্যস্ত হয়ে পড়বে , এবং  পরে বিছানায় একেবারেই থাকতে চাইবে না।

৬। তার কান্নায়  কারণ খুজে বের করে তা দূর করতে হবে।

পানি  ও সাবান দিয়ে ধূতে হবে, এতে সে খেলার  ছলে তা মুখে দিলেও রোগ  জীবাণু সংক্রমিত হবার  আশংকা থাকে না।  শিশুর প্রতিটি  কাজের সময় নিদিষ্ট  থাকা উচিত যেমন ঘুমের  সময় ঘুম , খেলার সময় খেলা ইত্যাদি।

দৈহিক মানসিক ও বাচনিক বৃদ্ধির কার্ড

শিশুদের স্বাভাবিক দৈহিক, মানসিক ও বাচনিক বৃদ্ধির প্রতি লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন দেশে  নর্ম  তৈরি করা হয়েছে।  দেহের ওজন ও দৈর্ঘ্যরে এ  নর্মের  কথা আগে বলা হয়েছে।  এ নর্মের  সাথে তুলনা করে প্রতিটি শিশুর স্বাভাবিক  বৃদ্ধি সম্বন্ধে সচেতন হওয়া যায়। তবে এখানে মনে রাখতে হবে যে,  প্রতিটি  শিশুর একটা  নিজস্বতা রয়েছে এ স্বকীয়তার কারণেই  কোন শিশু কোন কোন কাজ তার সমবয়সী অন্য কোন  শিশুর থেকে কিছু আগে অথবা  পরে করতে পারে। তবে এ পার্থক্য  যাদি বেশ ক’মাসের হয় তবে অবশ্যই তা উদ্বিগ্নের কারণ হওয়া উচিত। কোন বয়সে সাধরণতঃ শিশুরা কি কি  করতে পারে ,তার  একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা নিচে দেয়া হলো। ( পরবর্তী পর্যায়ে এর আরো বিশদ আলোচনা করা হয়েছে)।

ক্রঃ নং    বয়স (মাস)           কাজ

০১          ৩ মাস    উপুড় অবস্থায় মাথা ও ঘাড় তোলে

০২           ৬ মাস    স্বল্প অবলম্বনে বসতে পারে

০৩         ৮ মাস    হামাগুড়ি দেয়

০৪          ৯ মাস     ধরে দাড়াতে পারে

০৫          ১ বছর   বেয়ে বেয়ে ওঠানামা করে

০৬         ১৫ মাস  সাহায্য ছাড়া হাটে হামাগুড়ি দেিয় সিডি ভাঙ্গে

০৭           ১৮ মাস জোরে  দৌড়ায়

০৮         ২ বছর    একা নিচতহলা ওপর তলা করতে পারে

০৯          ৩ বছর  একপায়ে দাড়ায়

 এ তালিকানুযায়ী শিশু বড় হচ্ছে কিনা, অথবা  শিশুর দৈহিক  মানসিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক কি  না তা তুলনা করার জন্য একটা কার্ডের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয়  শিশুর জন্মের  পর যদি  মা-বাবা  নিজেরাই  এমনি একটি কার্ড তৈরি করে নেন।