মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * রশিদ মিয়া কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান ;   * কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে যে সকল প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন;   * বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলো মিয়ানমারের ৯ বিজিপি সদস্য   * ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দুর্গম সীমান্তে বিজিবি মহাপরিচালক   * টানা ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে লাখ লাখ পর্যটক, হোটেলে কক্ষ না পেয়ে ভোগান্তি   * কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নারী মেয়র ডা. তাহসিন বাহার সূচনা আনুষ্ঠানিকভাবে তাহার দায়িত্বের সূচনা করলেন।   * চট্টগ্রামে এক্স-রে কক্ষে বিষধর সাপ   * ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে: গণপূর্তমন্ত্রী   * ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে: গণপূর্তমন্ত্রী   * পাহাড়ে জলে ফুল ভাসিয়ে নতুন বছরকে আমন্ত্রণ উৎসবের দ্বিতীয় দিন ‘মূল বিজু’; আর তৃতীয় দিন বিশ্রামের দিন বা ‘গইজ্যাপইজ্যা’ দিন।  

   সারাদেশ
লম্পট স্বামীর মামলা প্রত্যাহারের হুমকি বিয়ের স্বীকৃতি মেলেনি অনিতার
  Date : 01-10-2017

॥ মহব্বত হোসেন, বাগেরহাট ॥

অনেক পদচিহ্ন আঁকা এ পৃথিবীর চির চেনা পথে চলতে চলতে এখন হাফিয়ে উঠেছে অনিতা । সেই চির চেনা সবুজ বনানী, আঁকা বাঁকা মেঠো রাস্তা। অসংখ্য নাম না জানা বুনোপাখীর কলকাকলিতে মুখরিত সেই গ্রাম এখন অনিতার একটুও ভালো লাগে না । সেই রূপ রস শব্দ গন্ধময় সুন্দর পৃথিবীর উপর এক চরম অভিমান অনিতার । এক বোবা না বলা যন্ত্রনায় ক্ষত বিক্ষত কাতর সে । অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে এখন সে যেন এক বীর সেনানী । আদালত পাড়ায় কাটে তার দিনগুলি। কার উপরে এ অভিমান অনিতার ?

সমাজ, বিচার ব্যবস্থা, না তার বাবা মা ভাই বোনদের উপর ?

২০০৪ সালের মার্চের ১০ তারিখে অনিতাকে বিয়ের পিড়িতে বসতে হল । স্বামী অমল চন্দ্র মন্ডল, গ্রামঃ সন্তোষপুর, থানাঃ চিতলমারী, জেলাঃ বাগেরহাট । অমল তার আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব অভিভাবক নিয়ে আসেন অনিতাদের বাড়ি। অনিতাদের বাড়ি বাগেরহাট সদর থানার কোড়ামারা গ্রামের গোবিন্দ লাল হালদারের বাড়ি । অনিতার বাবা ছিলেন গ্রামের একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সংস্কৃতি মনা মানুষ । মেয়ে জামাতাকে সুখী করবার জন্য অনেক কষ্ট করে জোগাড় করে দেন ৫ ভরি ওজনের সোনার বালা, হার, কান বালা, আংটি আর ৮ পৌরে ও তোলা ২৫ খানা দামি দামি শাড়ি। লেপ তোষক পালংক থালা কলসি জুতা মশারি ও অন্যান্য কাপড় চোপড় যার তখনকার মুল্য অনুমান ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা । হিন্দু মতে অগ্নি স্বাক্ষী করে ৭ পাক ঘুরে পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করিয়ে বিয়ে হয় অনিতার ।

আর ১০ টা মেয়ের মত অনিতার চোখে মুখে এখন একরাশ স্বপ্ন । অপূর্ব সুন্দরী অনিতা - হাসিতে যার মুক্ত ঝরে সেই অনিতা ভীরু কম্পিত হৃদয়ে দুরু দুরু মন নিয়ে সকলকে কাঁদিয়ে চোখের জলে সিক্ত করে স্বামীর হাত ধরে শ্বশুর বাড়ি পা বাড়ালো অনিতা । কিন্তু অনিতা কি জানতো তার স্বামী অমল একজন প্রতারক ঠক অথ লোভী ও পরকিয়া প্রেমের আসক্ত এক মানুষ !

কত স্বপ্ন তার চোখে মুখে । অনিতা বাসর ঘরে গেল অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলো অনিতা কখন মৃদু পায়ে আসবে স্বামী অমল । অপেক্ষা - অপেক্ষা আর অপেক্ষা । রাতের অন্ধকার ! সীমাহীন এক গভীর নিস্তব্ধতা । রাতের পাখীদের ডানা ঝাপটা নি অনিতার ছোট্ট কোমল হৃদয় আছাড় খেতে লাগলো । এক সময় ভোরের পাখীর ডাকা ডাকি শুনতে পেল অনিতা । অমল তখনও এলো না । অনিতার ছোট্ট মনে অসংখ্য প্রশ্ন কিলবিল করতে লাগলো কেন এলো না অমল ?

এভাবেই কেটে যেতে লাগলো অনিতা আর অমলের সংসার । অমল মিথ্যা অজুহাত দেখাতে লাগলো দিনের পর দিন । অনিতার স্বামী অমলের বৌদির ঘরেই সময়টা বেশি কাটায় । অমলকে নিয়ে বিয়ের পর একদিন বাবার বাড়ি এলো । সকলে অবাক হল অনিতার হাব ভাব দেখে । এ কোন অনিতা কে দেখছে সবাই ? অনিতার বৌদি ও অনিতার বান্ধবীরা এসে নানা রকম প্রশ্ন করতে লাগলো ওকে কিন্তু অনিতা কোন কিছুরই উত্তর দিলো না অনিতার বিয়ে হল কিন্তু বাসর হল না কোন দিন অনিতার মনে সন্দেহের বীজ নতুন করে বপন হতে লাগলো । অনিতার স্বামী অনিতাকে নিয়ে আবার শ্বশুর বাড়ি গেল । এক সময় বুঝতে কষ্ট হল না অনিতার স্বামী অমল বৌদির প্রেমে আসক্ত । তাকে ফেরানোর চেষ্টা করেও লাভ হল না । এক পর্যায়ে অমল ৫০ হাজার টাকা নতুন করে যৌতুক দাবি করলো । অনিতা সব কথা খুলে বললো পরিবারের সকলের কাছে। কিন্তু অনিতার বাবা তো অনেক টাকার দেনা। ৫০ হাজার টাকা দেবার সামর্থ্য তার নেই। এক পর্যায়ে অমলের আত্মীয় স্বজন এলাকার মেম্বার ও গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ চেষ্টা করলো দাম্পত্ব জীবনটাকে কোনমতে মেরামত করার । কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হল । একদিন অনিতাকে যৌতুকের টাকা আনার জন্য বেদম প্রহার করলো অমল । হাত থেকে ভাতের থালা কেড়ে ফেলে দিল এবং চুলের মুঠি ধরে বেদম প্রহার করে অনিতার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিল অমল । সবাই অবাক হল । কলেজ পড়ুয়া ফুটফুটে সুন্দরী মেয়ে অনিতার এ কি হল ।

অনিতা রুখে দাঁড়ালো । প্রতিকারের জন্য বাগেরহাট সদর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা দিল। আসামী দিল স্বামী অমল মন্ডল, অমলের ভাই বিমল চন্দ্র মন্ডল ও অমলের বৌদি সুখ মন্ডল কে । বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট মহোদয় বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানের উপর তদন্তের নির্দেশ দেন । চেয়ারম্যান সাহেব উভয় পক্ষকে আপাতত মিটমাট করে অনিতাকে নতুন করে স্বামীর বাড়ি পাঠিয়ে দেন । কিন্তু স্বামীর বাড়িতে গিয়ে আবার নতুন করে নির্যাতন শুরু হল। কেন মামলা করলো অনিতা। কেন পরকিয়া প্রেমের কথা তুললো আর কেনই বা যৌতুকের ৫০ হাজার টাকা দিলো না । ইত্যাদি তুলে নতুন করে নির্যাতন শুরু করে দিল অমল প্রায়ই অনিতাকে বেদম প্রহার করে । এক পর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হল অনিতার প্রতিকারের জন্য থানায় মকর্দমা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলাটি নিলো না । তাই ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নতুন করে মামলা করতে হল অনিতার ।

অনিতার স্বামী কিছুদিন পর অনিতার অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করে ঘর সংসার করছে । যেহেতু অনিতা বাবার বাড়িতে বসবাস করছে । সেহেতু বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট ভরন পোষন বাবাদ প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে খোর-পোষ দেবার নির্দেশ দেন । যাহা ৬/৫/২০০৬ তারিখ হতে বলবৎ থাকবে । কিন্তু অনিতার স্বামী উক্ত নির্দেশ না মেনে বার বার হয়রানি করছে । এক পর্যায়ে অনিতার স্বামী হাজতেও গেছে কিছু দিনের জন্য । জামিনে বের হয়ে মামলাটি উচ্চতর আদালতে নিয়ে অহেতুক হয়রানি করছে ও বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে অনিতাকে ।

অনিতা এখন একটি এনজিও পরিচালিত প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছে । বৃদ্ধ বাবার সংসারে থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে অনিতা । বাবা ভাইয়ের সংসারে একটা ভারবাহী বোঝা হয়ে অনিতার জীবন এভাবে আর কত কাল কাটবে এখনও অনিতা শাখা চুরি কপালে সিদুর পড়ে । অনিতা হেসে হেসে কথা বলে । কিন্তু তার মুখোশের অন্তরালে আরেকটা নিষ্প্রান প্রান নিরবে নিভৃতে কাঁদে। সেখানে অনিতা সম্পূর্ন একা। চোখের পানিতে ভিজে যায় তার বালিশ। অমলের অগাধ অর্থবিত্তের সাথে পাল্লা দিয়ে পারবে কি অনিতা আদালত পাড়ায় টিকে তার অধিকার আদায় করতে ? এমনি করে হাজারো অনিতা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে প্রতিদিন । মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে । আমরা কয়জন অনিতার খবর রাখি ?

লেখক পরিচিতিঃ বাগেরহাট সদর প্রতিনিধি মহববত হোসেন একজন অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ।



  
  সর্বশেষ
রশিদ মিয়া কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান ;
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে যে সকল প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন;
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলো মিয়ানমারের ৯ বিজিপি সদস্য
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দুর্গম সীমান্তে বিজিবি মহাপরিচালক

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308